সেবা নয়, পানির দাম ৮০ শতাংশ বাড়াবে ওয়াসা

দূষিত ও পানের অযোগ্য পানি সরবরাহের অভিযোগে ওয়াসা ভবনের সামনে প্রতিবাদ করেন ভোক্তারা। ছবি: স্টার ফাইল ফটো

আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্যে পানির দাম ৮০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াসা। সংস্থাটির বিরুদ্ধে নিম্নমানের পানি দেওয়ার অভিযোগের প্রেক্ষিতে দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হলো।

স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়কে গত বছরের সেপ্টেম্বর দেওয়া চিঠিতে ওয়াসার এই প্রস্তাব করে।

দ্য ডেইলি স্টারের হাতে সেই চিঠির একটি কপি আছে।

আবাসিক ব্যবহারের জন্যে প্রতি ইউনিট বা ১ হাজার লিটার পানির দাম ১১ দশমিক ৫৭ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২০ টাকা এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্যে বর্তমান দাম ৩৪ টাকা ৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৬৫ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে।

ওয়াসার বক্তব্য, উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে অনেক টাকা ঋণ হয়ে গেছে। সেই ঋণ পরিশোধ করার জন্যে পানির দাম বাড়ানো দরকার। এছাড়াও, সংস্থাটির পরিচালনা খরচ বেড়েছে।

ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খান গতকাল সোমবার বলেন, “আমরা একটি প্রস্তাব দিয়েছি। সরকার তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছে।”

তিনি জানান, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওয়াসার আধুনিকীকরণে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়েছে। সেই সঙ্গে পরিচালনা খরচও বেড়েছে। এই পরিস্থিতিতে পানির দাম বাড়ানো ছাড়া অন্য কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন তাকসিম।

তিনি বলেন, “ভর্তুকি দিয়ে সংস্থাটিকে সুন্দরভাবে পরিচালনা করা যায় না। আমরা সিস্টেম লস কমিয়েছি। সেবার মান উন্নত করেছি। তাই এখন পানির দাম বাড়ানো জরুরি।”

২০১৭ সালে আবাসিক ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের পানির দাম যথাক্রমে ২২ এবং ১৮ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন সরকার গঠন করে তখন ওয়াসার পানির প্রতিটি ইউনিটের দাম ছিল মাত্র ছয় টাকা।

ওয়াসা আইন-১৯৯৬ এর ২৩ ধারা অনুযায়ী, ওয়াসা বোর্ড পানির দাম বার্ষিক পাঁচ শতাংশ হারে বাড়াতে পারে। গত বছরও সংস্থাটি মুদ্রাস্ফীতির কথা বলে পাঁচ শতাংশ দাম বাড়িয়েছে।

নগরবাসী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানির দাম বাড়লে তা মানুষের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।

গরমকালে যাত্রাবাড়ী, শ্যামপুর, মীর হাজিরবাগ এবং এর আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা মারাত্মক পানির সংকটে পড়েন।

মীর হাজিরবাগের বাসিন্দা সিরাজুল হক খান বলেছেন, “গত বছর এমন হয়েছিল যে পানি পাওয়ার জন্য আমরা সারারাত জেগে ছিলাম। কিন্তু, পানি পাই নাই।”

তিনি বলেন, “প্রাচীনকালের মতো আমাদেরও বৃষ্টির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছিল। কারণ বৃষ্টির দিনে পানির সরবরাহ স্বাভাবিক হতো।”

তিনি ওয়াসার এই সিদ্ধান্তকে নগরবাসীর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখছেন।

মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা সাজ্জাদুর রহমান জানিয়েছেন, তিনি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান না। তার প্রশ্ন, “আমরা পানির জন্য টাকা দিচ্ছি। কিন্তু, পানি পাচ্ছি না। যদি সেবার মান না বাড়ে তাহলে বাড়তি টাকা কেনো দিব?”

যোগাযোগ করা হলে কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেছেন, “ওয়াসার সামগ্রিক সেবার মান ভালো না। কিছু জায়গায় তাদের সেবা ভালো হলেও বেশিরভাগ জায়গায়, বিশেষত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় তাদের সেবার মান খুব খারাপ। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবছর পানির দাম বাড়ানো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।”

ওয়াসার পানির মান সবসময়ই একটি বড় উদ্বেগের বিষয়।

গত বছর ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক সমীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাজধানীর প্রায় ৪৫ শতাংশ মানুষ ওয়াসা থেকে প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানি পান না।

এছাড়াও, সারাবছর প্রায় ৩৫ শতাংশ মানুষ নিম্নমানের পানি পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।

এতে আরও বলা হয়েছে, ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহককে পানি পান করার আগে ফুটিয়ে নিতে হয়। যদিও ওয়াসার পানি পান করার জন্য নিরাপদ হওয়ার কথা ছিল।

ওয়াসা ও মন্ত্রণালয়ের চিঠি

গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর চিঠিটি এলজিআরডি সচিবকে পাঠায় ওয়াসা।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয় ২০১৬ থেকে ২০১৯ পর্যন্ত কয়েকটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন আছে। এসব খরচের কারণে আবাসিক এবং বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য পানির বর্তমান দাম পর্যাপ্ত না।

এতে আরও বলা হয়েছে, মুন্সীগঞ্জের ‘পদ্মা ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট’ থেকে পানি সরবরাহ শুরু হলে প্রতি ইউনিট পানির জন্য খরচ হবে ২৭ থেকে ২৮ টাকা।

চিঠিতে ওয়াসার এমডি ঢাকা ওয়াসাকে আর্থিকভাবে টেকসই করতে এর আয় বাড়াতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন। ভর্তুকি দিয়ে সংস্থা পরিচালিত হলে নগরবাসীকে মানসম্মত সেবা দেওয়া কঠিন বলে মনে করেন তিনি।

গত জানুয়ারির শেষ থেকে পানির দাম বাড়ানোর অনুরোধ জানিয়েছিল ওয়াসা।

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় ১৪ জানুয়ারি এই চিঠির জবাব দিয়েছে।

মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে প্রতি ইউনিট পানির খরচ, ওয়াসার ঋণের পরিমাণ, দিল্লি ও কলকাতা, কাঠমান্ডু, সিউল, ম্যানিলা, লন্ডন এবং স্টকহোমে পানির দাম জানতে চাওয়া হয়।

ওয়াসা মন্ত্রণালয়ের চিঠিটির জবাব দেয় ১৬ জানুয়ারি। এতে বলা হয়, প্রতি ইউনিট পানির দাম দিল্লিতে ৩১ টাকা, কাঠমান্ডুতে ২৭ দশমিক ৭৩ টাকা, সিউলে ৩৯ দশমিক ৫২ টাকা এবং স্টকহোমে ২১ দশমিক ৮৭ টাকা।

ওয়াসার মতে, প্রতি ইউনিট পানির জন্য শুধু পরিচালনা খরচ প্রায় ২০ টাকা। সব খরচ মিলিয়ে যা দাঁড়ায় ২৫ টাকা পর্যন্ত। বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ঢাকা ওয়াসার ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা।

Comments

The Daily Star  | English

ACC to sue Hasina, Rehana and her children over Purbachal plot allocation

The allocations include six plots, each measuring 10 kathas, in the diplomatic zone of Purbachal New Town project

51m ago