করোনাভাইরাসের প্রতিকার নেই, প্রতিরোধ জরুরি: ডা. আব্দুল্লাহ

Dr ABM Abdullah
অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

চীনের করোনাভাইরাস এখন আর চীনেই সীমাবদ্ধ নেই। মহাপ্রাচীর ডিঙ্গিয়ে সেই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে আরও প্রায় ৩০টি দেশে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে কোনো করোনা আক্রান্ত রোগী না পাওয়া গেলেও প্রতিবেশী ভারত ও মিয়ানমার রয়েছে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায়। এই দেশ দুটির সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকদের রয়েছে নিয়মিত যাতায়াত। তাই সতর্কাবস্থায় থাকতে হবে এ দেশের সবাইকে।

করোনাভাইরাসের সতর্কতা সম্পর্কে গতকাল সোমবার দ্য ডেইলি স্টার অনলাইনের কথা হয় দেশের প্রখ্যাত চিকিৎসক অধ্যাপক এবিএম আব্দুল্লাহর সঙ্গে। তিনি জোর দেন ব্যক্তিগত সতর্কতার ওপর। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “প্রথম কথা হচ্ছে, আমাদের দেশে এখনো এই ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। তাই আক্রান্ত কোনো ব্যক্তি যেনো দেশে আসতে না পারে প্রাথমিকভাবে সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। মূলত পশু-পাখি থেকে মানুষে এবং হাঁচি-কাশি থেকে মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়ায়।”

“নিয়ম হলো আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে টিস্যু ব্যবহার করবে। সেই টিস্যু পুড়িয়ে ফেলতে হবে। যাতে সেখান থেকে ভাইরাস না ছড়ায়। কেউ যদি রুমাল ব্যবহার করেন তাহলে রুমাল ও হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিবেন। ভালোভাবে হাত না ধুলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াবে। তাই সব সময় সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তারপর অন্যকিছু ধরবেন। কারণ, এই হাত দিয়ে যা কিছু ধরা হবে সেখানেই ভাইরাস থেকে যেতে পারে। টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল, কিবোর্ডে ভাইরাস থেকে যেতে পারে। সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে।”

“ঘর পরিষ্কার রাখতে হবে। প্রতিদিনই ঘর পরিষ্কার রাখা দরকার। এটি স্বাস্থ্যসম্মত। বাইরে থেকে এসে হাত-পা ধোয়া ভালো। এর ফলে অন্য রোগ থেকেও দূরে থাকা যাবে।”

“আরেকটি বিষয় হলো: খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া দরকার। ডিম পোচ করে না খেয়ে ভালোভাবে ভাজি করে খাওয়া ভালো। কাঁচা যেনো না থাকে। ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে। কোনো সবজি দিয়ে সালাদ করার আগে সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।”

“অনেকের গৃহপালিত পশু থাকে। কোনো পশু অসুস্থ হয়ে পড়লে বা রোগা মনে হলে সেটিকে সরিয়ে নিতে হবে। সেই প্রাণী কাউকে স্পর্শ করলে ভালোভাবে গা ধুয়ে নিতে হবে। সেই প্রাণীর মাধ্যমে রোগ ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।”

“ব্যক্তিগত সতর্কতাখুব জরুরি।”

“এখন যেহেতু কোনো প্রতিকার নেই, তাই প্রতিরোধকে গুরুত্ব দিতে হবে। এই রোগ হয়ে গেলে এর কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। তাই প্রতিরোধ জরুরি। আমাদের দেশে এ রোগে কারো আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই তা বলা যাবে না। তবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই।”

“এমন পরিস্থিতিতে আমাদের দেশ থেকে কেউ যেনো চীনে না যায়। চীন থেকে কেউ যেনো হেলথ সার্টিফিকেট ছাড়া বাংলাদেশে না আসে, সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। যতোক্ষণ না চীন সরকার সার্টিফিকেট দিবে ‘ফ্রি ফ্রম করোনাভাইরাস’ তখন কারো দেশে আসা উচিত না।”

“বিমানবন্দরগুলোতে স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। করোনাভাইরাস আক্রান্ত কেউ দেশে এলে এবং তা ছড়িয়ে পড়লে সবাই ঝুঁকিতে পড়ে যাবেন।”

ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের নাম এখন নেই। রয়েছে ভারত ও মিয়ানমার। দুটি দেশই বাংলাদেশের প্রতিবেশী। দেশদুটির সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে সতর্কতা কী হবে? — “প্রাথমিক সতর্কতা হলো দেশ দুটির সঙ্গে যোগাযোগ কমিয়ে দিতে হবে। সেখান থেকে যদি কেউ আসেন তাহলে স্ক্রিনিং করতে হবে। কাউকে অসুস্থ মনে হলে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে। এছাড়াও, যারা বিদেশ থেকে আসবেন তাদেরকে ১৪/১৫ দিন ঘরে থাকার পরামর্শ দিতে হবে। এর মধ্যে জ্বর-কাশি-হাঁচি দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।”

“আমাদের দেশে কোনোভাবেই যেনো এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে না পারে যে জন্যে সদা সতর্ক থাকতে হবে।”

এখন ঋতুর পরিবর্তন হচ্ছে। এমন সময় অনেকের জ্বর-হাঁচি-কাশি হয়। অনেকের জ্বর-জ্বর ভাব লাগে। তাদের জন্যে পরামর্শ কী? — “সাধারণ জ্বর-হাঁচি-কাশি আমাদের দেশে স্বাভাবিক। সাধারণ ঠাণ্ডা লাগলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় নেই। এর জন্যে পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন নেই। যেহেতু এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা হননি, তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।”

“যারা দেশের বাইরে থেকে আসছেন তাদের এমন কিছু হলে চেক-আপের প্রয়োজন আছে।”

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh transition from autocracy to democracy

Transitioning from autocracy to democracy: The four challenges for Bangladesh

The challenges are not exclusively of the interim government's but of the entire political class.

12h ago