বাল্যবিয়ে রুখে দেওয়া ইতি পেলেন তিন সোনার পদক

ইতি খাতুন
ছবি: আতিক আনাম

এখনো চেহারায় কৈশোরের ছাপ। কিন্তু রুখে না দাঁড়ালে আরও দুই বছর আগে বিয়েই হয়ে যেত ১৪ বছরের ইতি খাতুনের। কোনভাবেই তা না মেনে তখনকার ১২ বছরের কিশোরী বাড়ি থেকে পালিয়ে যোগ দিয়েছিলেন আর্চারি ক্যাম্পে। দুই বছর পর সেই কিশোরি দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে বাংলাদেশের হয়ে খেলতে গিয়ে জিতে নিয়েছেন তিনটি সোনার পদক।

রোববারই দলীয় এবং মিশ্র দ্বৈত দুই ইভেন্টে সোনা জিতেছিলেন ইতি। সোমবার ব্যক্তিগত রিকার্ভে সাফল্যের আলোয় নিজেকে উজ্জ্বল করেন তিনি। তৃতীয় সোনা জেতে লাল সবুজ পতাকা উড়ান সবার উপরে। তার সৌজন্যে দক্ষিণ এশিয়ান গেমসে তিনবার বেজে উঠে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’।

ইতির মত দলীয়, মিশ্র ও ব্যক্তিগত মিলিয়ে  তিনটি করে সোনার পদক পেয়েছেন আর্চার রোমান সানা ও সোহেল রানাও।  

চুয়াডাঙ্গার দরিদ্র পরিবারে জন্ম ইতির। হোটেল কর্মচারী বাবা ইবাদত আলি তিন মেয়ের মধ্যে ইতিকে বিয়ে দেওয়ার সব প্রস্তুতিই সেরে নিয়েছিলেন। ইতিকে পছন্দ করেছিল বরপক্ষ। বিয়ের সব কথা পাকা হয়ে গেলেও ইতি খুঁজছিল মুক্তি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে আর্চারির প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্পের খবর পেয়েই চম্পট দেন দেন তিনি। তাতে প্রথমও হয়ে যান এই কিশোরি।

এরপরই বদলে গেছে ইতির জীবনের ছক। জাতীয় পর্যায়ে সাফল্যের আলোয় নিজেকে রাঙিয়ে এখন পেয়েছেন আন্তর্জাতিক সাফল্য। যেখানে একটি সোনার পদক জিততেই অনেকের জেরবার অবস্থা, ইতি এনেছেন তিন সোনার পদক। নিজের এসব সাফল্য দিয়ে পরিবারের চিন্তার জগতও বদলে ফেলেছেন ইতি। এক সময় তাকে বাল্য বিয়ের চেষ্টা করা সেই পরিবারও ইতির সাফল্যে আলোকিত, গর্বিত,  'একসময় আমার বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি রাজি ছিলাম না। তখন তারা বলতেন, মেয়ে হয়েছিস কিসের খেলা। তবে এখন আমাকে অনেক আদর করেন। আমার সাফল্যে তারাও গর্বিত।'

এসএ গেমসে এবার আর্চারিতেই এসেছে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য। এই খেলার দশ ইভেন্টের মধ্যে সবগুলোতেই সোনার পদক জিতেছে বাংলাদেশ। আর্চারির হাত ধরে যেকোনো গেমসের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি সোনার পদক জেতার নিজেদের রেকর্ডও স্পর্শ করেছে লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা।

Comments

The Daily Star  | English

For the poor, inflation means a daily struggle

As inflation greets Bangladeshis at breakfast time, even the humble paratha becomes a symbol of struggle. Once hearty and filling, it now arrives thinner and lighter -- a daily reminder of the unending calculations between hunger and affordability.

8h ago