হাওয়াই মিঠাই: বাংলার ঐতিহ্য

হাওয়াই মিঠাই। গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী একটি মিঠাইয়ের নাম এটি। এখনো এটি গ্রামের মানুষের কাছে জনপ্রিয়। একসময় ‘হাওয়াই মিঠাই’ গ্রামাঞ্চলে বেশি পাওয়া যেতো। কিন্তু, আধুনিকতার কারণে এটি এখন আর খুব বেশি দেখতে পাওয়া যায় না। তবে তা একেবারে বিলীনও হয়ে যায়নি।

হাওয়ার সঙ্গে এই মিঠাই নিমিষে বিলীন হয়ে যায় বলেই এর নাম ‘হাওয়াই মিঠাই’। বানানোর সঙ্গে সঙ্গে মুখে দিয়ে খেতে হয় এটি। পেট ভরে না এ মিঠাইয়ে, তবে খেতে মিষ্টি। মুখের স্বাদ মেটায় শুধু। দেখতে অনেক বড়সড় মনে হলেও নিমিষেই এটি মুখের ভেতর এসে গলে যায়। বিশেষ করে গ্রামের শিশুরা এই মিঠায়ে বেশি আনন্দ পায়। বড়রাও এর স্বাদ থেকে পিছিয়ে থাকেন না। দাম কম হওয়ায় সবার আগ্রহ থাকে এই মিঠাইয়ের প্রতি।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার উত্তর সাপ্টানা গ্রামের কান্দ্রি বালা বর্মণ (৬০) জানান, তিনি আজো ভুলতে পারেন না ‘হাওয়াই মিঠাই’র স্বাদ। এখনো গ্রামে গ্রামে হাওয়াই মিঠাই বিক্রেতা আসলে তিনি তা কিনে শিশুদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মজা করে খান।

“এক পয়সা দিয়ে ‘হাওয়াই মিঠাই’ কিনে খাওয়ার” কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আগে ছোটবেলায় যখন বাবা-কাকাদের সঙ্গে গ্রামের মেলায় যেতাম, তখন প্রথম বায়নাটি ছিলো ‘হাওয়াই মিঠাই’ খাওয়ার। আর হাতের কাছে পেয়েও যেতাম এটি।”

একই গ্রামের অঞ্জলি বালা (৫৫) হাসিমুখে বলেন, “হাওয়াই মিঠাই ভালো জিনিস। খেতে অনেক মিষ্টি। পেট ভরে না, কিন্তু মুখের স্বাদ মিটে। দামে সস্তা হওয়ায় আমরা সবাই খাই। শিশুরাও খায়। তবে শিশুরা বেশ মজা করেই খায়।”

একই গ্রামের শিশু ঝিলিক রানী (১০) বলে, “হাওয়াই মিঠাই খেতে অনেক মজা। আমাদের গ্রামে কেউ ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করতে আসলে আমি ছুটে যাই। মিঠাই কিনে খাই।”

“একটা-দুইটায় মন ভরে না, আমি চার-পাঁচটা খাই,” লাজুক মুখে যোগ করে সে।

শুধুমাত্র চিনিকে তাপ দিয়ে গলিয়ে তা একটি হাতে ঘুরানো ‘যাতা’য় পিষে অল্প সময়ে তৈরি করা হয় ‘হাওয়াই মিঠাই’। একসময় লাল-গোলাপি-হলুদ-বেগুনি-সবুজসহ নানা রঙে তৈরি করা হতো এই মিঠাই। তবে এসব রঙে রাসায়নিক পদার্থ থাকায় এখন আর রঙ ব্যবহার করা হয় না। শুধু চিনির সাদা রঙই হলো এ মিঠাইয়ের রঙ। বিশেষ করে গ্রামে মেলা বসলে দেখা মিলে ‘হাওয়াই মিঠাই’র। তবে প্রায় সারাবছরই গ্রামে-গ্রামে দেখা যায় ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রেতাদের।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার তিনদীঘি গ্রামের ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রেতা কানু রায় (৫৫) জানান, তিনি প্রায় ৩৫ বছর ধরে ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রি করছেন। আগে সারা বছরই এ ব্যবসা করে সংসার চালাতেন কিন্তু, এখন বছরে তিন থেকে চার মাস তিনি এ ব্যবসা করতে পারেন। মাঝে-মধ্যে গ্রামে মেলা বসলে এই ব্যবসা করেন বলেও জানান তিনি।

বলেন, “হাওয়াই মিঠাই একটি বিশুদ্ধ সামগ্রী, ভেজালমুক্ত হওয়ায় এটি খেতে শিশুদের কোনো ঝুঁকি নেই। শিশুরা আনন্দ সহকারে এটি খেতে পছন্দ করে আর আমরাও আনন্দের সঙ্গে তা বিক্রি করি।”

 “শুধু শিশুরাই নয় বড়রাও আমার কাছ থেকে হাওয়াই মিঠাই কিনে খায়,” যোগ করেন এই খণ্ডকালীন বিক্রেতা।

“গ্রামের মেলায় আমরা ৫০০ থেকে ৬০০ হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করে থাকি। এছাড়া গ্রামে গ্রামে সারাদিন ঘুরে দুই থেকে আড়াইশ হাওয়াই মিঠাই বিক্রি করতে পারি। এতে আমাদের চারশ থেকে পাঁচশ টাকা আয় হয়,” জানালেন লালমনিরহাট সদর উপজেলার দুড়াকুটি গ্রামের ‘হাওয়াই মিঠাই’ বিক্রেতা নবীর হোসেন (৪৮)।

বলেন, “এখন আর রঙিন হাওয়াই মিঠাই চলে না। শুধু চিনির রঙই হাওয়াই মিঠাই তৈরি করা হয়,” তিনি জানান।

বিক্রেতারা জানান, এক কেজি চিনি দিয়ে ৮০ থেকে ৯০টি ‘হাওয়াই মিঠাই’ তৈরি করা যায়। প্রতিটি মিঠাই বিক্রি করা হয় পাঁচ টাকায়। প্রতি মিনিটে তিন থেকে চারটি ‘হাওয়াই মিঠাই’ তৈরি করা যায়।

Comments

The Daily Star  | English

Govt declares 10-day Eid holiday starting June 5

Offices to remain open on two weekly holidays— May 17 and 24—to offset Eid vacation

15m ago