শুভ জন্মদিন, পণ্ডিত নেহরু

পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু (১৪ নভেম্বর ১৮৮৯ - ২৭ মে ১৯৬৪)

১৮৮৯ সালের ১৪ নভেম্বর এলাহাবাদে জন্ম নেওয়া এক শিশুই পরবর্তীতে হয়ে উঠে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের শীর্ষ নেতা। যদিও জন্ম তার ধনাঢ্য পরিবারে এবং বেড়ে উঠা পাশ্চাত্য ঢংয়ে কিন্তু, সাধারণ মানুষের মন জয় করতে তিনি খুব বেশি সময় নেননি।

হ্যাঁ, বলছি পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর কথা। যাকে অনেকে ভালোবেসে ডাকেন ‘পন্ডিতজী’, কেউবা ‘চাচা নেহরু’ বলে।

তিনি ছোটবেলায় কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করেননি বরং বাড়িতেই গৃহশিক্ষকদের কাছে হয়েছে তার শিক্ষার হাতেখড়ি। মাত্র পনেরো বছর বয়সে তিনি ইংল্যান্ড যান পড়াশুনা করতে। বছর দুয়েক ইংল্যান্ডের একটি কলেজে পড়েন তিনি। তারপর কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন প্রকৃতিবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনার জন্য। সঙ্গে আইনশাস্ত্র ও পড়লেন।

১৯১২ সালে দেশে ফিরেই তিনি সরাসরি রাজনীতির সংস্পর্শে চলে আসেন। মহাত্মা গান্ধির সঙ্গে তার প্রথম পরিচয় ১৯১৬ সালে। গান্ধিজীর আদর্শ তাকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করে। ১৯২০ সালে উত্তর প্রদেশের প্রতাপগড় জেলায় কিষাণ মার্চ সংগঠিত করেন তিনিই। ১৯২০-২২ সালের অসহযোগ আন্দোলনের দিনগুলিতে তিনি দুবার কারাবরণ করেন। তিনি নিখিল ভারত কংগ্রেস কমিটির সাধারণ সম্পাদক নিযুক্ত হন ১৯২৩-এর সেপ্টেম্বরে।

১৯২৬ সালে মাদ্রাজ কংগ্রেসে স্বাধীনতাই যে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য তা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু। ভারতীয় কংগ্রেসের লাহোর অধিবেশনে পণ্ডিত নেহরু সভাপতি নির্বাচিত হন ১৯২৯ সালে। ঐ অধিবেশনে ভারতের জন্য পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি জানানো হয়।

আলমোড়া জেলে থাকার সময় ১৯৩৫-এর ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনি তার আত্মজীবনী লেখার কাজ শেষ করেন। ১৯৪২ সালের ৭ আগস্ট বোম্বাইয়ে কংগ্রেস অধিবেশনে ঐতিহাসিক ‘ভারত ছাড়’ আন্দোলনের প্রস্তাব উত্থাপন করেন পণ্ডিত নেহরু। পরেরদিনই, অর্থাৎ ৮ আগস্ট অন্যান্য নেতাদের সঙ্গে তাকে গ্রেপ্তার করে আহমেদনগর দুর্গে নিয়ে যাওয়া হয়। তার সেই কারাবাসের সময় ছিলো সুদীর্ঘ এবং এটাই ছিলো তার শেষবারের মতো কারাবরণ। সারাজীবনে তাকে জেলে যেতে হয়েছিলো নয়বার। চতুর্থবারের জন্য তিনি কংগ্রেস সভাপতি নিযুক্ত হন ১৯৪৬ সালে ৬ জুলাই। পরবর্তীকালে ১৯৫১ -৫৪ সাল পর্যন্ত আরও তিনবার তিনি এই পদে নির্বাচিত হন।

পন্ডিতজী তিনটি বই লিখেছেন যা বিশ্বসাহিত্যের অমূল্য সম্পদ। বই তিনটি হলো--‘একটি আত্মজীবনী’, ‘বিশ্ব ইতিহাসের কিছু চিত্র’ এবং ‘ভারত আবিষ্কার’।

ব্যক্তিজীবনে রুচিবান পুরুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন জওহরলাল নেহরু। তার পরিধেয় বহুল ব্যবহৃত প্রিয় কোটটি ‘নেহরু কোট’ নামে পরিচিত। নেহরু ফ্যাশনের সবচেয়ে চমকপ্রদ অধ্যায়টি হচ্ছে যেকোনো রাজনৈতিক বা সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানে স্বতন্ত্রধর্মী এই কোটটি পরতেন তিনি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে নেহরুর অবদান অনস্বীকার্য। একই সময়ে দুটি রাষ্ট্র জন্ম নেয়—ভারত আর পাকিস্তান। আজকে বিশ্ব মানচিত্রে ভারতের যে শক্তিশালী অবস্থান তার ভীত রচনা করেছিলেন পন্ডিতজী।

এই উপমহাদেশে কোন কিছুকেই আমরা বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতে পারি নাই। আজকে ভারতে নেহরুকে নিয়েও বিতর্ক উঠেছে। ভারতের স্বাধীনতায় তার অবদানকে প্রশ্নবিদ্ধ করার অপচেষ্টা চলছে। গণতান্ত্রিক উদার রাষ্ট্র ভারত নেহরুকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখুক জন্মদিনে এটাই প্রত্যাশা।

উল্লেখ্য, আজ ভারতে শিশু দিবস পালিত হচ্ছে নেহরুর জন্মদিন উপলক্ষে।

Comments

The Daily Star  | English

'No legal bar' to Babar's release after acquittal in another 10-truck arms case

He has now been cleared in both cases filed over the high-profile incident from 2004

1h ago