৭০ শতাংশ সরকারি হাসপাতালে থার্মোমিটার-স্টেথোস্কোপ-রক্তচাপ-ওজন মাপার যন্ত্র নেই

জীর্ণ অবস্থার মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা এই ঘরটি গাজীপুর জেলার শ্রীপুরের বরমি ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র। ছবি: স্টার

দেশের প্রতি ১০টি সরকারি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মধ্যে সাতটিতে থার্মোমিটার, স্টেথোস্কোপ, রক্তচাপ ও ওজন পরিমাপ যন্ত্র, টর্চলাইটের মতো অত্যাবশ্যকীয় উপকরণের অভাব রয়েছে। সরকারি এক সমীক্ষাতেই এই তথ্য উঠে এসেছে।

বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে-২০১৭ এর প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অত্যাবশ্যকীয় ছয়টি উপকরণের সবগুলো রয়েছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখে গেছে কমবেশি মিলিয়ে চার থেকে পাঁচটি যন্ত্র থাকে।

জাতীয় জনসংখ্যা গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (নিপোর্ট) পরিচালিত সমীক্ষাটির জন্য আট বিভাগের ১,৫২৪টি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ও ৫,৪০০টি সেবাদান কেন্দ্রের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। ডাক্তারদের নেতৃত্বে ৪০টি দল এসব তথ্য সংগ্রহের কাজটি করে। এর মধ্যে সরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্র ছাড়াও অন্তত ২০ শয্যা বিশিষ্ট বেসরকারি হাসপাতালেরও তথ্য নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকার, ইউএসএআইড এর আর্থিক সহায়তায় পরিচালিত এই সমীক্ষায় কারিগরি সহায়তা দেয় আইসিএফ।

প্রতিবেদনে বলা হ অয়, প্রতি পাঁচ উপজেলার মধ্যে চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই এক্স-রে মেশিন অকার্যকর অবস্থায় পাওয়া গেছে। অন্যদিকে জেলা হাসপাতালগুলোর মধ্যে পাঁচটির একটিতে নষ্ট অবস্থায় পাওয়া গেছে হাসপাতালের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই মেশিনটি।

অতিপ্রয়োজনীয় এসব উপকরণ হাসপাতালে না থাকার ব্যাপারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল কালাম আজাদের মন্তব্য জানতে চাইলে বলেন, “এটা অবিশ্বাস্য, আমাকে ওই প্রতিবেদন দেখতে হবে।”

প্রায় সপ্তাহখানেক আগে আলাপকালে তিনি আরও বলেন, উপজেলা পর্যায়ে এক্স-রে যন্ত্র নষ্ট হয়ে পড়ে থাকার ব্যাপারটিও বিশ্বাস হওয়ার মতো নয়।

তবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে এ ব্যাপারে একমত নন লাইন ডিরেক্টর (হাসপাতাল সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট) ড. সত্যকাম চক্রবর্তী। তিনি সচল এক্স-রে মেশিনের সংকট থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে নেন। দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, “এক্স-রে যন্ত্র কেনার জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছে। শিগগিরই এই যন্ত্র কেনার কাজ সম্পন্ন করা হবে। সেই সঙ্গে এই যন্ত্র চালানোর মতো লোকবলেরও সংকট রয়েছে। লোকবল নিয়োগের বিষয়টিও প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।”

দ্য ডেইলি স্টারের নাটোর প্রতিনিধি গত ২৩ মে বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে দেখেন সেখানে থার্মোমিটার ও বয়স্কদের ওজন মাপার কোনো যন্ত্র নেই। এই হাসপাতালে এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন থাকলেও কোনোটিই সচল ছিল না।

এ ব্যাপারে হাসপাতালটির আবাসিক চিকিৎসক ড. মোহাম্মদ রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বলে, এক্স-রে ও ইসিজি মেশিন অকেজো থাকার বিষয়টি ইতিমধ্যে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তবে তার দাবি, ওজন মাপার যন্ত্রটি হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রয়েছে।

থার্মোমিটার না থাকার ব্যাখ্যায় বলেন, কাঁচের তৈরি এই যন্ত্রটি ভঙ্গুর হওয়ায় আমাদের নিয়মিত থার্মোমিটার কিনতে হয়।

বাংলাদেশ হেলথ ফ্যাসিলিটি সার্ভে বলছে, স্বাস্থ্য সেবায় বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ, ডাক্তার দেখানোর সময় রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা, আগতদের ল্যাট্রিন, ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগসহ কম্পিউটার স্বাস্থ্য সেবায় প্রয়োজনীয় বলেই ধরা হয়। তবে সমীক্ষায় দেখা যায়, জেলা, উপজেলা ও এনজিও পরিচালিত প্রতি পাঁচটি হাসপাতালের মধ্যে চারটিতে বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে। অন্যদিকে বেসরকারি হাসপাতালগুলোর সবগুলোতে বিদ্যুৎ সুবিধা রয়েছে। তবে কমিউনিটি ক্লিনিকের মধ্যে প্রতি পাঁচটির মধ্যে মাত্র দুটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। ৯০ শতাংশ হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পানির সংযোগ রয়েছে।

রোগীদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার ব্যাপারে সমীক্ষায় বলা হয়, প্রতি ১০ জনের মধ্যে সাত জন রোগীর ক্ষেত্রে ডাক্তার দেখানোর সময় গোপনীয়তা রক্ষা হয়। তবে বেসরকারি ও এনজিও পরিচালিত হাসপাতালে এটা শতভাগ মেনে চলা হয়।

 

সংক্ষেপিত প্রতিবেদন: মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন এখানে

Comments

The Daily Star  | English

Tulip resigns as UK minister

Tulip Siddiq, British treasury minister, resigned yesterday after repeated questions about her financial links to the ousted Bangladeshi government run by her aunt Sheikh Hasina.

2h ago