শীতেও কাঁঠাল!
কাঁঠাল গরমের ফল এ কথা বাঙালিদের বলা- বেয়াদবিই বটে! কিন্তু, যদি বলি- শীতেও মিলবে কাঁঠাল তাহলে আঁৎকে উঠবেন না। আমাদের জাতীয় ফলটিকে নিয়ে গবেষণার ফলে আবিষ্কার করা গিয়েছে নতুন এক জাত- যা ফল দিবে পৌষ-মাঘেও।
সারাবছর স্থানীয় জাতের ফলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে সরকার শীতে কাঁঠাল দিবে এমন জাতের গাছ সারাদেশে বপণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর গত কয়েক বছর আগে এমন জাতের কাঁঠাল গাছ খুঁজে পায় রাঙ্গামাটিতে। তারপর সেখান থেকে ১৫০ চারা কলম করা হয়।
পুষ্ঠির মান উন্নয়নে সারাবছর ফল উৎপাদন প্রকল্পের পরামর্শক এসএম কামরুজ্জমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, “যেহেতু শীতকালে ফল তেমন উৎপন্ন হয় না তাই আমরা সেসময় কাঁঠাল উৎপন্নের পরিকল্পনা করছি।”
এছাড়াও, তিনি জানান, অধিদপ্তর ভিয়েতনাম থেকে আঠা-মুক্ত কাঁঠালের জাত সংগ্রহ করেছে যা দেশে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা যাবে।
“আমাদের স্থানীয় জাতের কাঁঠাল ঘন-রসালো হয়। তাই আমরা বাণিজ্যিকভাব স্থানীয়জাতের কাঁঠাল চাষ করি না। আমরা স্থানীয় জাতটিকে সবজি হিসেবে ব্যবহার করতে পারি।”
বিশেষজ্ঞরা সবাই যে এটিকে স্বাগত জানিয়েছেন তা কিন্তু নয়। তবে কারো কারো মন্তব্য, কাঁঠাল রপ্তানি করতে পারলে তা দেশের রপ্তানি খাতে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এতে আখেরে কাঁঠাল চাষীদের উপকার হবে।
বর্তমানে কাঁঠাল রপ্তানি হচ্ছে যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, গ্রিস, জামার্নিসহ ইউরোপ বিভিন্ন দেশে এবং মধ্যপ্রাচ্যে।
অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে কাঁঠাল রপ্তানি হয়েছিলো ৮৩৫ দশমিক ০৭২ টন। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০০৩ দশমিক ৪৩৭ টনে।
এছাড়াও, গত বছরেই শুধু ইউরোপে কাঁঠাল রপ্তানি করা হয়েছে ৮০০ টন।
প্রকল্প পরিচালক মেহেদী মাসুদ এই গণমাধ্যমটিকে বলেন, “এখন কাঁঠাল বিক্রি হচ্ছে ফল ও সবজি হিসেবে। পশ্চিমের দেশগুলোতে ‘জ্যাকফ্রুট স্যান্ডউইচ’ জনপ্রিয় হওয়ায় সবজি হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গণে কাঁঠালের বাজার তৈরি হয়েছে। সবাই জানি যে কাঁঠালের মতো পুষ্ঠিসমৃদ্ধ ফল আর কোনোটাই না। তাই আমরা বাণিজ্যিক-ভিত্তিতে কাঁঠাল চাষের কথা চিন্তা করছি।”
বিশেষজ্ঞদের মত- কাঁঠালের বহুমু্খি ব্যবহার হলে বাংলাদেশ কাঁঠালের চারা বিক্রি করেও আয় করতে পারবে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিপ্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল মান্নান বলেন, “কাঁঠালের কোনো কিছুই ফেলা যায় না। কাঁঠালের মতো এতো বহুমুখি ব্যবহারযোগ্য কোনো ফসলের হয় না।”
অন্য যেকোনো ফলের তুলনায় অনায়াসে কাঁঠাল বীজ থেকে গাছ বেরিয়ে আসে। এছাড়াও, অন্য কোনো ফল থেকে এতে পুষ্ঠি বেশি পাওয়া যায়।
হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মঞ্জুরুল হান্নান বলেন, আসলে যে পরিমাণ কাঁঠাল রপ্তানি করা হয় তা পরিমাণ হিসাবে খুবই কম। তবে যদি কাঁঠালের কোয়া আলাদা করে রপ্তানি করা যায় তাহলে তা দেশের জন্যে সুখবর বয়ে আনবে।
তিনি জানান, “বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাঁঠালের কোয়া নিয়ে কাজ করছে। আশা করছি, আমরা কোয়া রপ্তানি করতে সক্ষম হবো। সারা পৃথিবীতে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।”
অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. আবুল কালাম এই প্রতিবেদককে বলেন, “আশা করছি এ বছর দেড় হাজার টন কাঁঠাল যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, গ্রিস, জামার্নি এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে রপ্তানি করা হবে।”
এখনো দেশে উৎপন্ন মোট কাঁঠালের ৫০ শতাংশ নষ্ট হয়। কেননা, এটি পেঁকে যাওয়ার পর এক সপ্তাহের মধ্যে খেয়ে ফেলতে বা সংরক্ষণ করতে হয়।
ফল ও কাঠ ছাড়াও কাঁঠালের পাতার ব্যবহার রয়েছে। এটি ছাগলের প্রিয় খাবার। এছাড়াও, কাঁঠালের কষ গ্লু বা আঠা হিসেবেও ব্যবহার করা যায়।
Comments