ডিসিদের ধান সংগ্রহে কৃষকের কষ্ট কি কমবে?

Natore DC
২১ মে ২০১৯, নাটোরের জেলা প্রশাসক শাহ রিয়াজ সদর উপজেলার কাফুরিয়া এলাকায় কৃষকদের কাছ থেকে সরাসরি ধান কিনছেন। ছবি: সংগৃহীত

কৃষকরা ধান নিয়ে কষ্টে আছেন। ক্ষেত ভর্তি ধান, ধান কাটার মানুষ নেই, যদিও বা ভাগ্যক্রমে শ্রমিক মেলে তো শ্রমিকের মজুরি মেলানো দায় হয়ে যায়। সরকার নির্ধারিত প্রতি মন ধানের দাম ১,০৪০ টাকা হলেও বাজারে ধানের দাম মন প্রতি ৬০০ টাকা। ক্ষেত থেকে ধান কাটতে শ্রমিকের মজুরি ৮৫০ টাকা । মানে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশি।

তার মানে মোটা দাগে সমস্যা দুইটি: এক- ধান কাটার লোক নেই, দুই- ধানের দাম নেই।

অবস্থা যখন এই রকম তখন স্বেচ্ছায় বিভিন্ন জনে বিভিন্ন জায়গায় ধান কেটে দিচ্ছে কৃষকের কষ্ট লাঘব করতে। কোথাও স্কাউট, কোথাও কলেজের ছাত্র কোথাও এলাকার যুবকেরা। মানুষ তা বেশ ভালোভাবেই গ্রহণ করেছেন বলে মনে হয়।

ছাত্রলীগ যখন তার কমিটি ইস্যুতে বেশ সমালোচনার মুখে, তখন কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো নিঃসন্দেহে একটি মহৎ উদ্যোগ। ছাত্রলীগের নেতা কর্মীরা যদি আন্তরিকতার সঙ্গে কাজটি করতে পারতেন তবে নিশ্চয় মানুষের বাহবা পেতেন। তাদের নষ্ট হয়ে যাওয়া ইমেজ কিছুটা হলেও উদ্ধার করা যেতো। ছাত্রলীগ নেতারা পুরো ব্যাপারটিকে হাস্যকর পর্যায়ে নিয়ে গেছেন যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ছাত্রলীগ নেতার সফেদ লুঙ্গি, গায়ে নতুন গেঞ্জি, মাথায় নতুন গামছা বাঁধা ছবি ঘুরে বেড়াচ্ছে। প্রথম দেখায় যে কেউ মনে করতেই পারেন এটি বুঝি সিনেমার কোনো দৃশ্য।

এবার আসি ধান সংগ্রহে। সরকারি ধান সংগ্রহে অনিয়ম নতুন কিছু নয়। সরকারি দলের পছন্দের কৃষক থেকে ধান সংগ্রহ কিংবা মধ্যস্বত্বভোগীদের কাছ থেকে ধান কেনার অভিযোগ পুরোনো। প্রান্তিকভাবে কৃষকরা বরাবরই বঞ্চিত। সরকার এবার কঠোর বার্তা দিয়েছে যেনো ধান প্রকৃত কৃষকের কাছ থেকেই কেনা হয়।

সরকারিভাবে ধান কেনার কথা ২৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়ার কথা থাকলেও শুরু হয় মে মাসের মাঝামাঝি। আর এদিকে সরকারের কর্তাব্যক্তিরা মাঠে নেমে পড়েছেন কৃষকের কাছ থেকে সরাসরি ধান কেনায়। তা আবার সংবাদ মাধ্যমে বেশ ফলাও করে প্রচারও করা হচ্ছে। কিন্তু, কতোটুকু ধান কিনছে আর তার ফলে কৃষক কতোটুকু উপকৃত হলো- সে আলোচনা সংবাদে নেই। সে আলোচনাটি জরুরি।

এই ঘটনার দুটি দিক আছে। প্রথমত, জেলা প্রশাসক বা থানা নির্বাহীর কাজ মাঠে-মাঠে ঘুরে ধান সংগ্রহ করা নয়। উনারা ধান সংগ্রহ কাজের উদ্বোধন করতে পারেন। কিন্তু, ধান সংগ্রহ নিশ্চয়ই তাদের কাজ নয়। এই কাজ করার জন্য রাষ্ট্রের নিয়োজিত কর্মকর্তা এবং কর্মচারী রয়েছেন।

যদি জেলা প্রশাসক বা থানা নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই কাজ করতে হয় তবে সাধারণ মানুষের কাছে কী বার্তা যায়। তবে কি খাদ্য কর্মকর্তারা ব্যর্থ বা তারা কি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত যার কারণে তাদের উপর ভরসা করা যাচ্ছে না। দ্বিতীয়ত, সরকারি কর্মকর্তারা কি মিডিয়ায় প্রচার চাচ্ছেন, তাদের আন্তরিকতা প্রমাণে?

ছাত্রলীগের ধান কাটা বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে ডিসি-ইউএনওদের ধান কেনা কোনো সমাধান নয়। কৃষকের সমস্যা লাঘবে দরকার স্থায়ী সমাধান। ‘প্রচারেই প্রসার’- এমন যুগে, ছাত্রলীগ বা ডিসি বা ইউএনও মিডিয়া কভারেজ পেতে বা, সাধারণ মানুষের বাহবাও পেতে পারেন। কিন্তু, নিশ্চিত কাজের কাজ কিছু হবে না।

আমাদের মূল সমস্যা প্রশাসনিক কাঠামোতে। শক্তিশালী প্রশাসন তার কর্মকর্তাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারলে, যার যার কর্ম তা তিনি ঠিকমতো পালন করলে সমস্যা অনেকাংশেই কমে যাবে। দরকার শুধু সদিচ্ছা আর দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন। কৃষিখাতে সরকারের বহু প্রণোদনা আছে, শুধু নিশ্চিত করতে হবে প্রকৃত কৃষকের কাছে তা পৌঁছাচ্ছে কী না।

কৃষিতে বিপ্লব হয়েছে। স্বাধীনতা পরবর্তী এ দেশে যখন খাদ্য সংকট ছিলো সেখান থেকে চাষের জমি কমে যাওয়া এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির পরেও খাদ্য আমরা স্বয়ংসম্পূর্ণ। রাষ্ট্রের ভূমিকা অনস্বীকার্য। কিন্তু, কৃষকের ভূমিকা যে মহানায়কের মতো।

ডিজিটাল বাংলাদেশে এখন বোতাম টিপে চোখের পলকে ২০ তলায় উঠা যায়, পকেটে টাকা না নিয়েও কার্ড দিয়ে ব্যাগ ভর্তি করে বাজার করা যায়, রিকশাওয়ালা বিশ্রামের সময় তার স্মার্ট মোবাইল ফোনে কবি দেখেন, গান শোনেন। আরও অনেক কিছুই বলা যায়। এই যে ডিজিটাল বাংলাদেশের এতো উন্নতি কিন্তু, কৃষি যেনো কোথায় আটকে রয়েছে। যদি প্রতি উপজেলাতে প্রতিটি ইউনিয়নে একটি করে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে আধুনিক যন্ত্র থাকতো তবে নিশ্চিত  কৃষকদের এই দুর্ভোগে পড়তে হতো না।

কৃষিপ্রধান দেশে সবার আগে কৃষিতে ডিজিটালাইজেশন দরকার। ডিসি বা ইউএনওদের মাঠে-মাঠে যেয়ে ধান সংগ্রহের দরকার নেই। যার কাজ তাকে করতে দিন। আপনারা শুধু সঠিকভাবে নজরদারি করুন। তাহলেই কৃষকের দুর্ভোগ অনেকটা লাঘব হবে। নতুবা আপনাদের সব দৌড়াদৌড়ি মাঠে মারা যাবে।

masumjrn@gmail.com

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda Zia acquitted from Zia Orphanage Trust graft case

Following the judgement, there is no legal bar for Khaleda Zia to contest the next general election

1h ago