‘পিস্তল’ থেকে ‘খেলনা’ এবং ‘প্লাস্টিকের পাইপ’

বর্তমান পৃথিবীতে উড়োজাহাজ, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতোটাই নিশ্ছিদ্র করা হয়েছে যে, উড়োজাহাজ ছিনতাই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই উড়োজাহাজ নিয়ে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরালো হয়েছে। এখন আগ্নেয়াস্ত্র তো দূরের কথা চাকু এমনকি পানির বোতল নিয়েও উড়োজাহাজে ওঠা যায় না। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনই। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও, পিস্তল নিয়ে কোনো যাত্রী উড়োজাহাজে উঠে যাবেন, এমন নিরাপত্তাহীন পরিবেশ থাকার কথা নয়।
Biman haijaking
(বামে) চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের ময়ূরপঙ্খী (বিজি-১৪৭ ফ্লাইট)-কে ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। (ডানে) বিমানটি ছিনতাইয়ের চেষ্টাকালে কমান্ডো অভিযানে নিহত মো. পলাশ আহমদ। ছবি: পলাশের ছবিটি ফেসবুক থেকে সংগৃহীত

বর্তমান পৃথিবীতে উড়োজাহাজ, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা এতোটাই নিশ্ছিদ্র করা হয়েছে যে, উড়োজাহাজ ছিনতাই প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যেই উড়োজাহাজ নিয়ে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরালো হয়েছে। এখন আগ্নেয়াস্ত্র তো দূরের কথা চাকু এমনকি পানির বোতল নিয়েও উড়োজাহাজে ওঠা যায় না। সারা পৃথিবীর মতো বাংলাদেশেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা এমনই। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু প্রশ্ন থাকলেও, পিস্তল নিয়ে কোনো যাত্রী উড়োজাহাজে উঠে যাবেন, এমন নিরাপত্তাহীন পরিবেশ থাকার কথা নয়।

কিন্তু, তারপরও বাংলাদেশ বিমানের একটি উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের সংবাদ সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়লো। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাই প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হলো। সেই সংবাদও প্রকাশিত হলো। কমান্ডো অভিযানে ছিনতাইকারী প্রথমে আহত এবং পরে নিহত হওয়ার সংবাদ জানা গেলো। এর মধ্য দিয়েই উড়োজাহাজ ছিনতাই প্রচেষ্টার সংবাদ শেষ হতে পারতো। কিন্তু, তা হলো না। নানা রকমের সংবাদের পাশাপাশি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হাস্য-রসিকতা চলতে থাকলো। এখনও চলছে। জাতীয় নিরাপত্তা সংক্রান্ত একটি বিষয়, দেশের ইমেজ যে সংবাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তেমন সংবাদ নিয়ে হাস্য-রসিকতা-সন্দেহ কেনো? এটা তো কোনো দল, সরকার বা ব্যক্তির বিষয় নয়, দেশের বিষয়। তেমন সংবাদ নিয়ে কেনো রসিকতা হবে?

প্রাথমিক সংবাদ অনুযায়ী, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়ার পথে ছিনতাই প্রচেষ্টা হয়েছে। বোঝা যায় উড়োজাহাজের ক্রু এবং পাইলটদের কৃতিত্বে চট্টগ্রামে অবতরণ করা গেছে। সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে নিরাপত্তা বাহিনী বিমানবন্দরে অবস্থান নিয়েছে, উড়োজাহাজটি ঘিরে রেখেছে। কমান্ডোরা অভিযান চালিয়ে ৮ মিনিটের মধ্যে ছিনতাইয়ের অবসান ঘটিয়েছেন। ছিনতাই প্রচেষ্টাকারী, কমান্ডোদের গুলিতে আহত এবং পরে তার মৃত্যু হয়েছে। আহত ও মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে- ছিনতাই প্রচেষ্টাকারী আক্রমণাত্মক হওয়াতেই এই পরিণতি।

কমান্ডো অভিযানের মুখে আহত-নিহত হওয়া মোটেই অবাক করা ঘটনা নয়। কিন্তু, অবাক থেকে অবাকতর সংবাদের জন্ম নিতে থাকলো পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে।

সেই প্রসঙ্গে আসার আগে একটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার। পৃথিবীর ইতিহাসে যতো উড়োজাহাজ ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে, এই ছিনতাই প্রচেষ্টাটি সম্ভবত সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। সব সময় ছিনতাইকারীরা পাইলট ও যাত্রীদের জিম্মি করে দাবি আদায় করতে চায়। এক্ষেত্রে ছিনতাই প্রচেষ্টাকারী পাইলট বা যাত্রীদের জিম্মি করেনি। সব যাত্রীদের নামার সুযোগ দিয়েছে। সব সূত্রের সংবাদ অনুযায়ী তার দাবি ছিল, প্রধানমন্ত্রী ও তার স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া। যেকোনো সাধারণ নাগরিকের পক্ষেও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে কথা বলা খুব কঠিন বিষয় নয়। তার টেলিফোন নাম্বার পত্রিকায়ও প্রকাশিত হয়েছে এবং তিনি অনেকের ফোন ধরেন। এমন একজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলার জন্যে উড়োজাহাজ ছিনতাই?

দ্বিতীয় দাবি স্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে চাওয়া। জানা গেল স্ত্রী একজন নায়িকা। স্ত্রীর সঙ্গে তার চার মাস আগে বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। এই দুটি দাবি থেকে প্রশ্ন আসে ছিনতাই প্রচেষ্টাকারী মানসিকভাবে সুস্থ ছিলেন কিনা?

ব্যতিক্রমী এই ছিনতাই প্রচেষ্টার চেয়ে ব্যতিক্রমী দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের ব্যতিক্রমী কার্যক্রম বা বক্তব্য। সে বিষয়ে একটু দৃষ্টিপাত করা যাক।

১. প্রথমে বলা হলো ছিনতাই প্রচেষ্টাকারীর কাছে পিস্তল আছে, শরীরে বোমা বাঁধা থাকতে পারে। তার জাতীয় কিছু শরীরে জড়ানো থাকতে পারে। যাত্রীদের কেউ কেউ উড়োজাহাজ থেকে নেমে বললেন, তারা দু’তিনটি গুলির আওয়াজ শুনেছেন। পাইলট কৃতিত্বের সঙ্গে চট্টগ্রামে জরুরি অবতরণ করেছেন। বিমান প্রতিমন্ত্রী যদিও বলেছেন, জরুরি নয়, সাধারণ অবতরণ হয়েছে।

২. মাত্র আট মিনিটের কমান্ডো অভিযানে ছিনতাই প্রচেষ্টা প্রতিহত করা হয়েছে। একটি পিস্তল উদ্ধার করা হয়েছে। ছিনতাই প্রচেষ্টাকারী আহত হয়েছে। ঘণ্টা দেড়েক পরে জানা গেলো ছিনতাই প্রচেষ্টাকারীর মৃত্যু হয়েছে। গণমাধ্যমকর্মীরা বিমান প্রতিমন্ত্রীকে পরের দিন প্রশ্ন করেছেন, ‘আহত ছিনতাই প্রচেষ্টাকারীকে চিকিৎসা না করে দেড় ঘণ্টা ফেলে রাখা হয়েছিল কেনো?’

বিমান প্রতিমন্ত্রী সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেননি। বলেছেন, তদন্তের মধ্য দিয়ে সবকিছু বের হয়ে আসবে। বা এই সংবাদটি সঠিক কিনা, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। সঠিক সংবাদ কোনটি, তা জানাতে পারেননি।

৩. ছিনতাই প্রচেষ্টাকারীর হাতের পিস্তলটি ছিল ‘ খেলনা’। এই তথ্য জানিয়েছেন, বিমান প্রতিমন্ত্রী। চট্টগ্রামের পুলিশ কমিশনার বলেছেন, তারা পরীক্ষা করে দেখেছেন সেটা ‘খেলনা’ পিস্তল। ছিনতাই প্রচেষ্টাকারীর শরীরে বোমা বাঁধা ছিল না।

৪. পরের দিন বিমান প্রতিমন্ত্রী জানালেন, ছিনতাই প্রচেষ্টাকারীর কাছে পিস্তল নয়, ‘প্লাস্টিকের পাইপ’ জাতীয় কিছু ছিলো।

এ প্রেক্ষিতে চারটি প্রশ্ন-

ক. পিস্তল যদি খেলনা হয়, শরীরে যদি বোমা জাতীয় কিছু না থাকে, তবে কমান্ডো অভিযানের প্রয়োজন হলো কেনো?

প্রশ্নের উত্তর হতে পারে, প্রথমাবস্থায় সনাক্ত করা সম্ভব হয়নি পিস্তলটি আসল না খেলনা। বোমা আছে কি নেই, তাও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। কোনো ঝুঁকি না নিয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়েছে। কমান্ডোরা নিশ্চয়ই সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব ও সক্ষমতার সঙ্গে অভিযান পরিচালনা করেছেন। ছিনতাই প্রচেষ্টাকারী ‘আক্রমণাত্মক’ ছিল, এই ব্যাখ্যার বাইরে আরও কিছু ব্যাখ্যা প্রয়োজন ছিল। যা পাওয়া গেলে হয়তো কিছু প্রশ্ন উঠতো না।

খ. যাত্রীরা গুলির আওয়াজ শুনলেন কীভাবে?

খেলনা পিস্তল থেকেও গুলির আওয়াজ শোনা যায়। আতঙ্কিত যাত্রীদের পক্ষে বুঝে ওঠা সম্ভব নয় যে, গুলির শব্দ আসল না খেলনা পিস্তলের।

গ. বিমান প্রতিমন্ত্রী কোন তথ্যের ভিত্তিতে বললেন যে, পিস্তলটি ছিল ‘খেলনা’?

পুলিশ কমিশনার পরীক্ষা করে বলেছেন পিস্তলটি ‘খেলনা’। হয়তো তার ভিত্তিতেই বিমান প্রতিমন্ত্রী কথা বলেছেন।

ঘ. পিস্তল নয়, ছিনতাই প্রচেষ্টাকারীর কাছে ‘প্লাস্টিকের পাইপ’ জাতীয় কিছু ছিলো। বিমান প্রতিমন্ত্রীর এই বক্তব্যের ব্যাখ্যা কী? তার মানে ছিনতাই প্রচেষ্টাকারীর হাতে কেউ পিস্তল দেখেননি? পিস্তলই যদি তার কাছে না থাকে, পুলিশ কমিশনার কী পরীক্ষা করে নিশ্চিত হলেন যে, ‘খেলনা পিস্তল’? ‘প্লাস্টিকের পাইপ’ জাতীয় কিছু পরীক্ষা করে নিশ্চয় নিশ্চিত হননি যে, ‘খেলনা পিস্তল’?

৫. একটি ঘটনার এতো রকমের বক্তব্য-ব্যাখ্যার কারণ কী?

ক. পিস্তল যদি আসল হয়, তবে বড় রকমের প্রশ্নের মুখে পড়ে যায় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ। একটি পিস্তল নিয়ে একজন যাত্রী উড়োজাহাজে কী করে উঠে গেলেন? এই উড়োজাহাজে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক, দুই রুটের যাত্রীই ছিলেন। অভ্যন্তরীণের চেয়ে আন্তর্জাতিক রুটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা কঠোর। অভ্যন্তরীণ রুটের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও এমন হওয়ার সুযোগ নেই যে, অস্ত্র নিয়ে কেউ উড়োজাহাজে উঠে যেতে পারবে। অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল থেকে ছিনতাই প্রচেষ্টাকারী কীভাবে গিয়ে উড়োজাহাজে উঠলেন, বাসে যাওয়ার সময় কিছু বহন করার সুযোগ ছিল কিনা বা থাকে কিনা, তা গভীর অনুসন্ধানের দাবি রাখে। পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে এখন অভ্যন্তরীণ রুটের নিরাপত্তা ব্যবস্থা, আন্তর্জাতিক রুটের চেয়ে কম নয়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে বেশি।

হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা যে কতটা প্রকট, তা কোনো কথা দিয়ে চাপা দেওয়া যায় না। ফলে এত রকমের কথা বলতে হচ্ছে?

খ. কর্তৃপক্ষ হয়তো ধারণা করেছিলেন পিস্তলটি যদি ‘খেলনা’ প্রমাণ করা যায়, তাহলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে না। কিন্তু ‘খেলনা পিস্তল’ নিয়েও স্ক্যানিং মেশিন ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অতিক্রম করে যাওয়ার সুযোগ নেই। ফলে পিস্তলটি খেলনা হলেও, নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা চাপা দেওয়া যাচ্ছে না।

গ. পিস্তল নয়, ‘প্লাস্টিকের পাইপ’ জাতীয় কিছু!

সাধারণ বুদ্ধিতে বলে, ‘পিস্তল’, ‘খেলনা পিস্তল’ আর ‘প্লাস্টিকের পাইপ’ জাতীয় কিছুর মধ্যে সাদৃশ্য থাকার কথা নয়। পিস্তল আর খেলনা পিস্তলে সাদৃশ্য থাকলেও, প্লাস্টিকের পাইপের সঙ্গে তার সাদৃশ্য থাকার কথা নয়।

তর্কের জন্যে যদি ধরে নিই, প্লাস্টিকের পাইপ দিয়ে পিস্তল জাতীয় কিছু একটা বানানো হয়েছে। সেটা নিশ্চয় উড়োজাহাজের ভেতরে বানানো হয়নি। ছিনতাইকারী সঙ্গে করেই তা নিয়ে গেছে। এ ধরনের প্লাস্টিকের পাইপও হাতের ব্যাগে নিয়ে উড়োজাহাজে ওঠার সুযোগ নেই।

সুতরাং ‘পিস্তল’, ‘খেলনা পিস্তল’, ‘প্লাস্টিকের পাইপ’ জাতীয় কিছু, যতো ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক না কেনো, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা যে অত্যন্ত ভঙ্গুর, তা নিয়ে কোনো সন্দেহ থাকে না। বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে এ সন্দেহ আরও দৃঢ় হয়।

কলকাতা থেকে আসা কোনো যাত্রী কয়টি শাড়ি আনলেন, মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা শ্রমিক কেনো দুটি মোবাইল ফোন সেট আনলেন, তা নিয়ে খুবই চিন্তায় থাকেন বিমানবন্দরের নিরাপত্তা ও কাস্টমস কর্তারা। যাওয়ার সময় স্ক্যানিংয়ের দায়িত্বরতদের গল্পে মশগুল থাকতে দেখা যায়। বড় কর্তাদের মনিটরিং দৃশ্যমান নয়। যারা শরীর চেক করেন, তাদের প্রধানতম প্রশ্ন থাকে সঙ্গে বাংলাদেশি টাকা কতো আছে, কতো ডলার নিয়ে যাচ্ছেন। এই প্রশ্নে কোনো যাত্রী একটু ঘাবড়ে গেলেই, নাজেহালের মুখে পড়েন। অথচ টাকা বা ডলার দেখার দায়িত্ব তাদের নয়।

৬. অভিযান পরিচালনার সময় কমান্ডোদের মূল টার্গেট থাকে কতো দ্রুত, কতো সূক্ষ্মভাবে টার্গেট অর্থাৎ শত্রুকে পরাস্ত করা যায়। ‘পিস্তল’, ‘ খেলনা পিস্তল’, ‘প্লাস্টিকের পাইপ’ জাতীয় কিছু কমান্ডোদের অভিযানে এসব গল্পের কোনো প্রভাব পড়ে না। ছিনতাই প্রচেষ্টাকরীকে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। রাজি হয়নি। কমান্ডোরা তাদের কাজ করেছে। দক্ষতার সঙ্গেই করেছে। কমান্ডোদের গুলিতে আহত ছিনতাইকারীর চিকিৎসা না করার প্রেক্ষিতে মৃত্যুর ঘটনা যদি সত্যি হয়, দায় কমান্ডোদের নয়। দায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের।

প্লাস্টিকের পাইপের বিপরীতে কমান্ডো অভিযান? এ ধরনের প্রশ্ন বা হাস্য-রসিকতা যারা করছেন, দায় তাদের যতোটা, তার চেয়ে অনেক বেশি দায় প্রতিমন্ত্রী, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিদের বহু রকমের বক্তব্য, পরস্পর অসংলগ্ন বক্তব্য। এখানে যা উল্লেখ করা হলো, তাদের অসংলগ্ন বক্তব্যের তালিকা আরও দীর্ঘ।

বর্তমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের যুগে ‘জাতীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা বা দেশের ইমেজ’ নিয়ে হাস্য-রসিকতা? প্রশ্ন বা ধমকে এর অসান ঘটবে না। আরও বিস্তৃত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। সত্য স্বীকার করে, সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। প্রতিমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন ‘তদন্ত’র মধ্য দিয়ে সব সত্য বেরিয়ে আসবে। তদন্ত বিষয়ে বাংলাদেশের মানুষের অভিজ্ঞতা মোটেই সুখকর নয়। তারপরও বিশ্বাস রাখতে চাই, সঠিক- নির্মোহ তদন্তে রহস্য উন্মোচন হবে। মিলবে প্রশ্নের উত্তর। ঘটনার পর এতোজন কেনো এতো রকমের কথা বললেন, তাও তদন্তের আওতায় আসা দরকার।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা জনমানুষের আলোচনায়, জাতীয় নিরাপত্তার মত বিষয় নিয়ে হাস্য- রসিকতা, প্রত্যাশিত নয়। হাসি-রসিকতার উপাদান যোগান দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। দায়িত্বশীলদের আর একটু সক্ষম হিসেবে প্রমাণ করতে হবে। একটি ছিদ্র চাপা দিতে গিয়ে বহু ছিদ্র তৈরি করছেন কিনা, গুরুত্বের সঙ্গে তা ভাবতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English
classes resume in Dhaka University

Classes resume in DU after over 3 months

Classes and exams began around 10:00am, with students from dormitories and off-campus locations returning to participate

1h ago