কলকাতায় বাংলাদেশিদের ভিড়

Kolkata
বাংলাদেশে ভোটের জন্যে সবাই যখন নিজ নিজ বাড়িতে যাচ্ছেন এমন অবস্থায় কলকাতায় ভিড় বাংলাদেশি পর্যটকদের। ছবি: স্টার

বাংলাদেশে ভোট আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা বাকি। কিন্তু, এখনো কলকাতায় ভিড় বাংলাদেশি পর্যটকদের। ভিড় কমছে না বরং বাড়ছে রোজ।

বছর শেষ, ছেলে-মেয়েদের স্কুল ছুটি; বেসরকারি কিংবা সরকারি অফিসের কর্মীদের বছরের বকেয়া ছুটি কাটানো এবং ভোট উপলক্ষে টানা তিনদিনের ছুটি থাকায় এই ভিড় অতীতের সব রেকর্ড ছাড়াবে বলে দাবি করছেন কলকাতার আবাসিক হোটেল মালিকরা।

কিন্তু, পাঁচ বছর পর গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগের সুযোগকে উপেক্ষা করে কেনো বাংলাদেশি পর্যটকরা ভিড় করেছেন প্রতিবেশী ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতায়। এর খোঁজ নিতে গত কয়েকদিন বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা হয়।

কথা বলা হয় আগত বাংলাদেশি পর্যটক, কলকাতার হোটেল রেস্তোরাঁ এবং শপিংমল কর্মীদের সঙ্গে।

ঢাকা-১২ আসনে ভোট দেন রিয়াজ উদ্দিন (নিরাপত্তার কারণে ছদ্মনাম দেওয়া হচ্ছে)। গত ২৫ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় পার্কস্ট্রিটের একটি রেস্তোরাঁয় বসে স্ত্রী মিশু এবং সাত বছরের মেয়ে কৈশোরকে নিয়ে ফাস্টফুড খাচ্ছিলেন রিয়াজ।

সেখানে কথা হয় তাদের সঙ্গে। এই প্রতিবেদককে তিনি জানান, “দেখুন এটা ঠিক যে ভোট না দিয়ে এখানে চলে এসেছি এটা ভালো লাগছে না। কিন্তু, কী করবো বলুন, যখন মেয়ের স্কুল ছুটি এবং ওকে নিয়ে আমরা নিয়ম করে ঘুরতে বের হই- এমন একটা সময়ে ভোটের সূচি পড়েছে।”

বেসরকারি একটি ব্যাংকের ওই কর্মকর্তা আরও জানান, “বছরের বকেয়া ছুটিও আবার এই সময়ের মধ্যে কাটাতে হয়। তাই কলকাতায় এসেছি। ফিরবো ৩ জানুয়ারি সকালের ফ্লাইটে।”

নারায়ণগঞ্জের পাটব্যবসায়ী আশরাফ আহমেদ। প্রবীণ এই ব্যক্তির সঙ্গে রয়েছেন তার স্ত্রী, বিবাহিত তিন কন্যা এবং তাদের সবার সন্তান। স্কুল ছুটি পাওয়ায় সবাই দল বেঁধে বেড়াতে এসেছেন ভারতের। গত ২২ ডিসেম্বর সবাই মৈত্রী এক্সপ্রেস করে কলকাতায় এসে পৌঁছান। আজ (২৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তারা দিল্লি যাবেন। সেখান থেকে ৫ জানুয়ারি বিমানে ফিরবেন ঢাকায়।

ভোটের এই সময় কেনো এভাবে এতো ভোটার একসঙ্গে দেশের বাইরে- এই প্রশ্ন শুনে তিনি বিব্রত। কিছুটা এড়িয়ে যাওয়ায় তার মেয়ে রিতু আসমা জানান, “ভোট দিলে কী হবে বলতে পারেন? ভোট না দিলেই বা কী হবে?” কিছুটা দম ফেলে পাশে তার আরেক বোন দিলরুবা আকতার বললেন, “ভোট দেওয়াটা অধিকার, না দেওয়াটাও অধিকার। গোটা বাংলাদেশের চরিত্র আর নারায়ণগঞ্জের চরিত্র আলাদা।” ভোটে অশান্তি হবে- এমন আশঙ্কা করে তিনি বলেন, “ভোট দিতে পারবো কিনা অনিশ্চিত। আমাদের বছর শেষে ভারত ভ্রমণের পরিকল্পনা ভোট ঘোষণার আগেই করা ছিলো। তাই আমরা পরিবারকে নিয়ে ঘুরতে এসেছি।”

তবে আবার উল্টো চিত্রও দেখা গিয়েছে। যেমন উত্তরার সেক্টর ৫ এর রোড নম্বর ১০-এর বাসিন্দা নওরোজ আহমেদ। স্ত্রী শায়েলা ও ছেলে মেহের সানিকে নিয়ে ২৯ ডিসেম্বর রাতের উড়ানে ঢাকা ফিরছেন। ৩০ তারিখ সকালবেলাতেই ভোট কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দেবেন স্বামী-স্ত্রী। বললেন, “দেখুন ভোটের তারিখটা এমন একটা সময় হয়েছে যখন বাচ্চাদের ছুটি থাকে। আমরাও বিয়ের পর থেকে প্রতি বছর বাইরে থাকি। কিন্তু, এই বছর ছুটি কাটছাঁট করে ফিরতে হচ্ছে। ভোটটাও তো একটা উৎসব। আশঙ্কা আছে তবুও ভোট কেন্দ্রে যাবো।”

চট্টগ্রাম থেকে এসেছেন একদল যুবক। প্রথমবারের ভোটার তারা। দলের সামিল দুজন চুয়েটের ছাত্রও। তাদের মধ্যে রাফায়েত হোসেন, আরাফাত রহমান ও প্রবাল মৈত্র জানালেন, প্রথমবার ভোটে দেওয়ার বিষয়টি তাদের ভালো লাগছে। তাই সিমলা, মানালি, দিল্লি ঘুরে কলকাতা হয়ে গতকাল (২৮ ডিসেম্বর) সকালেই মৈত্রী এক্সপ্রেসে ফিরেছে দলটি।

মার্কুজস্ট্রিটের মধ্যমানের আবাসিক হোটেল ‘ক্যাম্পটন’। সেখানে গত ১৫ দিন ধরে কোনও রুম ফাঁকা নেই। জানুয়ারি ২০ তারিখ পর্যন্ত বুক করা আছে সব।

ওই আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার বিপ্লব জানান, “ভোটের জন্য মনে হয়েছিলো বাংলাদেশি পর্যটক কম থাকবেন। কিন্তু, বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ভিড় কমেনি, বরং বেড়েছে।”

ভোজ অ্যান্ড কোম্পানির ম্যানেজার সুভাষ বাবু বলেন, “বছরে অন্য সময়ের চেয়ে এই সময়ে ভিড় স্বাভাবিক কারণে বেশি থাকে। তবে এবার বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় বেশি। অনেকেই ভোটের ছুটি পেয়ে চলে এসেছেন কলকাতায়।”

কলকাতার আবাসিক হোটেলে ঘুরে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ বড় হোটেলেই রুম পাওয়া যাচ্ছে না। ছোট ও মাঝারি মানের হোটেলেও একই অবস্থা। তবে পাঁচ-তারকা হোটেলের চিত্র স্বাভাবিক।

একইভাবে নিউমার্কেট এলাকাতেও ভিড় বাংলাদেশি পর্যটকদের। শীতের পোশাকের জন্য বিখ্যাত গজ কুমার অ্যান্ড সন্স নামের একটি দোকান। ওই দোকানের কর্মী রূপম সাহা বললেন, “দেখুন শুধু বাংলাদেশি পর্যটক নন, দেশ-বিদেশে থেকে অনেকেই আসেন এই সময়ে। তবে এটা বলতে পারি, এ বছর মনে হচ্ছে বাংলাদেশি পর্যটকদের ভিড় একটু বেশি।”

শ্যামলী পরিবহনের কর্ণধার অবনী ঘোষ জানালেন, “শীতে বাংলাদেশি পর্যটকদের চাপ বাড়ে। এখন শীত- ডিসেম্বরে স্কুল ছুটি থাকে; তাছাড়া ভোটের সময় অনেকেই চলে আসছেন কলকাতায়।”

Comments

The Daily Star  | English
problems in filing complaints in police stations

No scope to verify authenticity when cases are filed: IGP

Instructions have already been issued to ensure that no one is arrested in a harassing manner, he says

2h ago