৫ রাজ্যে প্যাঁচে বিজেপি
আসলে কী হতে যাচ্ছে তা ১১ ডিসেম্বর দুপুরের মধ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে। কিন্তু, এর আগে নানা রকম জল্পনা উড়িয়ে দিয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের গণমাধ্যম পরিচালিত বুথ ফেরত সমীক্ষা।
বিজেপির হাতে রাজস্থান এবং ছত্তিশগড় রাজ্য। দলটির তালু থেকে ছিটকে যেতে পারে দুটি রাজ্য। একইভাবে টিম মোদির টার্গেট মধ্যপ্রদেশ, মিজোরাম এবং তেলেঙ্গানাতেও তেমন সুবিধার দাঁত ফোটতে পারছেন না অমিত শাহরা।
হ্যাঁ, ভারতের পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল নিয়ে এমনই সব আভাস দিচ্ছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
গত ৭ ডিসেম্বর রাজ্যগুলোতে চূড়ান্তপর্বের ভোটগ্রহণের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন নয় ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া।
রাজস্থান
রাজস্থানের ক্ষমতাসীন বিজেপির সঙ্গে লড়ছে কংগ্রেস। দুটি কেন্দ্রে দলীয় লড়াইয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক দলের তেমন প্রভাব নেই। ফলে সেখানে লড়াই যা হওয়ার হয়ে গিয়েছে মোদি-রাহুল ম্যাজিকের সঙ্গে।
বুথ ফেরত সমীক্ষা বলছে, ১৯৯ আসনের এই রাজ্যে বেশিরভাগ আসন পেতে পারে কংগ্রেস। যেমন- ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে ১১৯ থেকে ১৪১টি আসন। উল্টোদিকে, বিজেপি পেতে যাচ্ছে ৫৫-৭২ আসন। টাইমস নাও, রিপাবলিকসহ সর্বভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর পরিচালিত বুথ ফেরত সমীক্ষার কোনটিতেই বিজেপির পক্ষে ৯০ আসনের বেশি পাওয়ার সম্ভাবনার আভাস দেওয়া হয়নি।
ছত্তিশগড়
ছত্তিশগড়ের ক্ষেত্রেও চিত্রটি প্রায় একই। রাজ্যের ৯০ আসনের বিধানসভায় কংগ্রেস ৫৫ থেকে ৬৫টি আসন পেতে পারে। বিপরীতে, বিজেপির ঝুলিতে যেতে পারে ২১ থেকে ৩১টি আসন।
উল্লেখিত তিনটি টেলিভিশন চ্যানেলের গড় হিসাব থেকেও পরিষ্কার যে সেখানেও ক্ষমতাসীন বিজেপির জনসমর্থন ভাটা পড়েছে।
মধ্যপ্রদেশ
বিজেপির দখলে মধ্যপ্রদেশের চিত্রটিও আগের দুই রাজ্যের ছায়ার মতোই। রাজ্যের ২৩০ আসনের বিধানসভায় বিজেপি ১০২ থেকে ১২০টি আসন পেতে পারে বলে বুথ ফেরত সমীক্ষায় বলা হচ্ছে। উল্টোদিকে, কংগ্রেস ১০৪ থেকে ১২২টি আসন পেতে চলেছে বলে জানানো হয়। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হতে যাচ্ছে এ রাজ্যে- এমনই বলা হয়েছে সমীক্ষায়।
তেলেঙ্গানা
টাইমস নাও এবং রিপাবলিকের মতো সর্বভারতীয় নিউজ চ্যানেলের সঙ্গে সি ভোটার, অ্যাক্সিস, সিএনএক্সের মতো প্রতিথযশা সমীক্ষা পরিচালনাকারী সংস্থার করা বুথফেরত সমীক্ষায় বলা হয় রাজ্যের শাসক দল তেলেঙ্কা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস) ফের ক্ষমতায় বসতে চলেছে।
মিজোরাম
৪০ আসনের মিজোরাম বিধানসভায় তেমন ভালো ফল করতে পারছে না বিজেপি। উত্তরপূর্ব ভারতে বিজেপি প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে। তাই আসাম, ত্রিপুরা দখলের পর স্বাভাবিকভাবে দলটির নজর মিজোরামের দিকে। কিন্তু, সেখানে মিজো ন্যাশানাল ফ্রন্টের সঙ্গে কংগ্রেসের লড়াই। বিজেপির ক্ষমতা নেই সে রাজ্যে। তাই, কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন দল মিজোরামে অর্বাচীন- এমনটি বললে খুব ভুল হবে না।
স্থানীয় ইস্যু এবং প্যাঁচ
ভারতের রাজ্যসরকার নির্ণায়ক বিধানসভা ভোটে প্রত্যেকটি রাজ্যের নিজস্ব ইস্যু থাকে। ভোটের রাজনীতিতে কেন্দ্রীয় ইস্যু তেমন প্রভাব না ফেললেও কেন্দ্রের শাসকদল সেসব রাজ্যে ক্ষমতায় থাকলে সে ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় হিসাব-নিকাশ রাজ্যে প্রভাব ফেলে বৈকি।
তবে পাঁচ রাজ্যের প্রত্যেকটি নির্বাচনে ইস্যু ছিলো দেশের সাম্প্রদায়িক শান্তি, স্থানীয় উন্নয়ন এবং অর্থনীতি।
বুথফেরত সমীক্ষা অতীতে সব সময় মিলেছে তা বলা যায় না। তবে অনেক সময়ই সেই সমীক্ষার সঙ্গে ভোটারদের মানসিকতার মিল পাওয়া যায়।
আর ইস্যুর ক্ষেত্রে যখন সাম্প্রদায়িক শান্তির প্রসঙ্গ চলে আসে তখন অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয় কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপিকে। কেননা, প্রায় প্রত্যেক রাজ্যেই বিরোধীরা আসামের নাগরিকপঞ্জি, গো-রক্ষার নামে খুনসহ বিমূদ্রাকরণের মতো বিজেপির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেই সরব ছিলেন। আর সেকারণেই পাঁচ রাজ্যে বেশ প্যাঁচেই পড়েছে নরেন্দ্র মোদির বিজেপি।
বিশ্লেষকদের মত, ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে বিজেপির সামনে স্বাভাবিকভাবে বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে এই ফলাফল।
Comments