ইউক্রেনে আবারও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হতে পারে: জেলেনস্কি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ছবি: এএফপি

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি তার দেশে নতুন করে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। তিনি দেশটির নিরাপত্তা বাহিনী ও নাগরিকদের আগামী সপ্তাহে বিদ্যুৎ সরবরাহ সংকট সহ্য করে সদা প্রস্তুত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

আজ সোমবার কাতার ভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এ তথ্য জানিয়েছে।

রোববার রাতের নিয়মিত বক্তব্যে জেলেনস্কি এই সতর্কবাণী দেন।

ইতোমধ্যে কিয়েভে বরফপাত শুরু হয়েছে এবং তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।

এ পরিস্থিতিতে, নগরের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা জানান, কর্মীরা বিদ্যুৎ, পানি ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। তবে উচ্চ চাহিদার কারণে বিভিন্ন জায়গায় পরিকল্পিতভাবে লোডশেডিং চালানো হচ্ছে। কিয়েভে ও এর আশেপাশের অঞ্চলগুলোর লাখো বাসিন্দা রুশ বিমান হামলার কারণে সৃষ্ট জরুরি সেবার সরবরাহ বিপর্যয়ের মোকাবিলা করছেন।

একটি দোকানে বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতারা মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে কাজ করছেন। ছবি: রয়টার্স
একটি দোকানে বিদ্যুৎ না থাকায় ক্রেতারা মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে কাজ করছেন। ছবি: রয়টার্স

জেলেনস্কি তার নিয়মিত রাত্রিকালীন বক্তব্যে আরও বলেন, 'আমরা অনুধাবন করছি, সন্ত্রাসীরা আরও নতুন হামলার পরিকল্পনা করছে। আমরা নিশ্চিতভাবে এটি জানি।'

'যতক্ষণ তাদের হাতে ক্ষেপণাস্ত্র রয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, তারা শান্ত হবে না', যোগ করেন তিনি।

জেলেনস্কি জানান, আগামী সপ্তাহটি এর আগের সপ্তাহের মতোই কঠিন হবে। উল্লেখ, গত সপ্তাহে রুশ হামলার কারণে ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন অবকাঠামো বড় আকারের ক্ষতির শিকার হয়। ফলে ফেব্রুয়ারিতে রুশ সামরিক অভিযান শুরুর পর সবচেয়ে বড় আকারের জ্বালানি সংকটের মুখে পড়েছে দেশটি।

জেলেনস্কি আরও বলেন, 'আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী প্রস্তুত হচ্ছে। সমগ্র দেশ প্রস্তুত হচ্ছে। আমরা সব ধরনের পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছি। আমাদের অংশীদারদের বিষয়টিও এ ক্ষেত্রে বিবেচনা করা হয়েছে।'

জেলেনস্কির দাবির বিপরীতে মস্কো থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

২৪ ফেব্রুয়ারি হামলা শুরুর পর থেকেই মস্কো দাবি করে আসছে তারা কোনো বেসামরিক ব্যক্তি বা স্থাপনা উদ্দেশ্য করে হামলা চালায়নি।

বৃহস্পতিবার ক্রেমলিন জানায়, কিয়েভ চাইলে রাশিয়ার চাহিদা মিটিয়ে তাদের নাগরিকদের দুঃখ-দুর্দশার অবসান ঘটাতে পারে।

সেপ্টেম্বরে রাশিয়া ইউক্রেনের পূর্ব ও দক্ষিণের ৩টি অঞ্চলকে নিজেদের ভূখণ্ড হিসেবে ঘোষণা করেছে।

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছেন, মস্কোর ভূখণ্ড সংক্রান্ত দাবি নিয়ে কোনো ধরনের আলোচনা সম্ভব নয়। ইউক্রেনের ভূখণ্ড দখলের পর জেলেনস্কি জানান তিনি মস্কোর সঙ্গে আলোচনা করবেন না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, ইউক্রেনের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা নিয়ে কোনো আলোচনা হতে পারে না।

যুদ্ধক্ষেত্রের থমথমে পরিস্থিতি

গতকাল রোববার নতুন করে কোনো বড় আকারের হামলা হয়নি। ইউক্রেনের কেন্দ্রীয় সেনা কমান্ড দাবি করেছে, নিপ্রোপেত্রোভস্ক অঞ্চলে রুশ বাহিনী ৪টি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে এবং বেশ কয়েকবার বেসামরিক স্থাপনার উদ্দেশ্যে গুলি চালিয়েছে।

ইন্সটিটিউট ফর দ্য স্টাডি অব ওয়ার (আইএসডব্লিউ) নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, উভয় পক্ষ থেকে আসা সংবাদে ধারণা করা যাচ্ছে, বড় আকারে বৃষ্টিপাত ও কর্দমাক্ত পরিবেশ সৃষ্টির কারণে যুদ্ধ পরিস্থিতি পরিবর্তিত হয়েছে। আগামী কয়েকদিনে যুদ্ধের ফ্রন্টলাইনে বরফপাত আরও বড় ভূমিকা রাখবে।

আইএসডব্লিউ জানিয়েছে, রুশ বাহিনী খেরসন শহরের পূর্ব দিকে পরিখা খনন করছে। তারা একইসঙ্গে নিপার নদীর ওপর পার থেকে নিয়মিত কামানের গোলা ছুঁড়ে যাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আরও জানায়, রুশ বাহিনী খেরসনের কাছাকাছি জায়গায় বিভিন্ন ধরনের ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে আসছে।

জেলেনস্কি জানান, দেশের বিভিন্ন অংশে যুদ্ধক্ষেত্রের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

'আগের সপ্তাহগুলোর মতো, এখনও দনেৎস্ক অঞ্চলের পরিস্থিতি সবচেয়ে ঝামেলাপূর্ণ', দাবি করেন জেলেনস্কি।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর জেনারেল স্টাফ জানান, রুশ বাহিনী দনেৎস্ক অঞ্চলের প্রায় ১ ডজন গ্রামে গোলাবর্ষণ করেছে, যার মধ্যে মূল লক্ষ্যবস্তু ছিল বাখমাত ও আভডিভক গ্রাম।

বড় আকারে অবকাঠামোগত ক্ষতি

বিদ্যুতের গ্রিড পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ইউক্রেনেগ্রো বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী অবকাঠামোর 'বিশাল আকারের' ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে। তারা আরও জানায়, ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে জ্বালানির চাহিদা ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, তাদের কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো মেরামতে ব্যস্ত রয়েছেন।

বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হোয়ার পর একটি আশ্রয়কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ডিভাইস চার্জ করছেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন কিয়েভের বাসিন্দারা। ছবি: রয়টার্স
বিদ্যুৎ সরবরাহ বিপর্যস্ত হোয়ার পর একটি আশ্রয়কেন্দ্রে মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ডিভাইস চার্জ করছেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করছেন কিয়েভের বাসিন্দারা। ছবি: রয়টার্স

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, বুধবারে রুশ বিমান হামলার পর বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও পূর্ণ সক্ষমতায় ফিরতে পারছে না। ফলে দেশের বিভিন্ন অংশে পরিকল্পিত লোডশেডিং এর মাধ্যমে জ্বালানি সাশ্রয় করা হচ্ছে।

ইউক্রেনেগরো জানিয়েছে, এ মুহূর্তে প্রায় ২০ শতাংশ উৎপাদন ঘাটটি রয়েছে।

খেরসনের প্রাদেশিক গভর্নর ইয়ারোস্লাভ ইয়ানুশেভিচ জানান, ১৭ শতাংশ ভোক্তা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন। বিচ্ছিন্ন জেলাগুলোতে আগামী কয়েক দিনের মাঝে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হতে পারে বলে তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।

Comments

The Daily Star  | English
Motorcycle sales in the last 6 years

Motorcycle sales hit five-year low

Interestingly, the premium motorcycle segment bucked the trend, showing significant growth in 2024.

12h ago