২০২৩ সালে আলোচনায় আসবে যে ৫ ভবন
নতুন বছরে মানব সভ্যতার মুকুটে যুক্ত হতে যাওয়া পালকগুলোর একটি হতে যাচ্ছে স্থাপত্য। নতুন নতুন 'আলোচিত' ভবন তৈরি করে আলোচনায় থাকবে ২০২৩ সাল।
সম্প্রতি, মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন ২০২৩ সালে বিশ্বে সাড়া জাগানো ভবনের তালিকা প্রকাশ করেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক করোনা মহামারির কারণে আলোচিত ভবনগুলোর নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হলেও এ বছরের সেই ভবনগুলো স্থাপত্যকলার ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
আবুধাবির আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউস
সিএনএন'র দৃষ্টিতে সাড়া জাগানো ভবনের তালিকায় আছে সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাজধানী আবুধাবির 'আব্রাহামিক ফ্যামিলি হাউস'। এই আন্তঃধর্মীয় কমপ্লেক্সে ইসলাম, খ্রিষ্ট ও ইহুদি ধর্মের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
ভবনটিতে এই ৩ ধর্মের ধর্মীয়স্থান—মসজিদ, গির্জা ও সিনাগগের ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যের সৌন্দর্য শৈল্পিকভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
ব্রিটেন-ঘানার স্থপতি ডেভিড আজাঈর প্রতিষ্ঠান আজাঈ অ্যাসোসিয়েটস সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, মূল ভবনটির নকশায় ৩ ধর্মের মিলগুলো তুলে ধরা হয়েছে। তবে ৩ ধর্মের জন্য আলাদা আলাদা ৩টি ভবন করা হয়েছে।
এতে আরও বলা হয়, 'শুভ ইচ্ছা নিয়ে আসা দর্শণার্থীরা এখানে এক ছাদের নিচে বসবেন।
কুয়ালালামপুরের মারদেকা ১১৮
মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরের ২ হাজার ২২৭ ফুটের উচ্চতার 'মারদেকা ১১৮' নামের ভবনটি এখন বুর্জ খলিফার পর বিশ্বের দ্বিতীয় সুউচ্চ ভবন।
চলতি বছরের মাঝামাঝি 'মারদেকা ১১৮'র নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আশা করা হচ্ছে। ১০ লাখ বর্গফুটের ভবনটিতে এক হাজার আসনের থিয়েটারসহ থাকবে হোটেল ও অফিস। এখানে থাকবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার সর্বোচ্চ অবজারভেশন ডেক।
১৯৫৭ সালের স্টেডিয়াম মেরদাকায় মালয়েশিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার সময় দেশটির সাবেক নেতা টুংকু আবদুল রহমান শূন্যে হাত তুলার দৃশ্যের সঙ্গে এই ভবনের নকশার তুলনা করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইসমাইল সাবরি।
অস্ট্রেলিয়ার স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান ফেনডার কাৎসালিদিস বলেছে, ভবনের সম্মুখভাগে মালয়েশিয়ার স্থানীয় কারুশিল্প তুলে ধরা হয়েছে।
গিজার গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম
মানবসভ্যতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননির্দশন ধরে রাখতে ১০০ কোটি ডলারের বেশি খরচ করে মিশরের গিজায় তৈরি করা হয়েছে গ্র্যান্ড ইজিপশিয়ান মিউজিয়াম। ২০০২ সালে নকশা প্রতিযোগিতার মাধ্যমে এই ভবনের নকশা চূড়ান্ত করা হয়।
এ বছর জাদুঘরটির দরজা সবার জন্য খোলা হবে কিনা এ বিষয়ে সিএনএন মিশরের পর্যটন মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাইলে তারা কোনো জবাব দেয়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
আয়ারল্যান্ডের রাজধানী ডাবলিনের হেনেঘান পেং আর্কিটেক্টস জানিয়েছে, ৫ দশমিক ২ মিলিয়ন বর্গফুটের এই ভবনে প্রদর্শনী হলের পাশাপাশি একটি কনভেনশন সেন্টার ও ফারাও রাজা দ্বিতীয় রামসেসের বিশালাকায় ভাস্কর্য রাখার স্থান থাকবে।
ত্রিকোণা এই ভবনের সামনের অংশ থাকবে কাঁচে ঘেরা। গিজার পিরামিডের মোটিফ এখানে ব্যবহার করা হয়েছে।
জেরুজালেমের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব ইসরায়েল
বই, পাণ্ডুলিপি ও আলোকচিত্রের বিশাল সংগ্রহ নিয়ে জেরুজালেমে তৈরি করা হয়েছে ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব ইসরায়েল। এই ভবনে থাকবে সাড়ে ৫০ হাজার বর্গফুটের পড়ার স্থান। ভবনের ভেতরে থাকবে মিলনায়তন, ইয়ুথ সেন্টার ও বেশ কয়েকটি প্রদর্শনী হল।
জেরুজালেমের ঐতিহাসিক কালার প্যালেটকে প্রতিনিধিত্ব করতে স্থানীয় চুনা পাথরের সঙ্গে সিমেন্ট মিশিয়ে ভবনটি তৈরি করা হয়েছে। ভবনটির উপরের অংশ দেখতে বড় আকারের পাথরের মতো।
গ্রন্থাগারটির নকশা করেছে সুইস প্রতিষ্ঠান হারগজ অ্যান্ড দা মিউরনস।
বেঙ্গালুরুর কেমপেগৌদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
সিঙ্গাপুরের চেঙ্গির স্থাপত্যশৈলী বিশ্ববাসীকে দেখিয়েছে একটি বিমানবন্দরের নকশা কেমন হতে পারে। প্রকৃতিকে বিষয়বস্ত হিসেবে নিয়ে পুরো বিমানবন্দরটিকে যেন 'বাগানে' পরিণত করা হয়েছে।
এ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে তৈরি করা হচ্ছে বেঙ্গালুরুর কেমপেগৌদা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। এখানে থাকছে গাছ, বাঁশঝাড়, ঝরনাসহ প্রাকৃতিক পরিবেশ।
এমন নৈসর্গিক নকশার কারণে ভারতের তৃতীয় বৃহত্তম জনবসতিপূর্ণ শহর বেঙ্গালুরুর কেমপেগৌদা বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত অংশ বৈশ্বিক স্থাপত্য নিদর্শন হিসেবে আলোচনায় এসেছে।
২ দশমিক ৭ মিলিয়ন বর্গফুটের দ্বিতীয় টার্মিনালটির দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শেষ হলে তা এই বিমানবন্দরের বার্ষিক ভ্রমণকারীর সংখ্যা আড়াই কোটি থেকে ৪ কোটিতে উন্নীত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
Comments