পুতিনের জন্মদিনে কিমের শুভেচ্ছা, কোন পথে ২ দেশের সম্পর্ক

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। ছবি: রয়টার্স

উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ৭০তম জন্মদিনের শুভেচ্ছা পাঠিয়েছেন। শুভেচ্ছা বার্তায় তিনি 'যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জ ও হুমকির' বিরুদ্ধে পুতিনের নেতৃত্বের প্রশংসা করেছেন।

পিয়ংইয়ংয়ের সরকারি সংবাদসংস্থা কেসিএনএ জানিয়েছে, শুভেচ্ছার চিঠিতে কিম পুতিনকে বলেছেন, 'আজ রাশিয়া নির্ভরযোগ্যভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং তাদের বাহিনীর চ্যালেঞ্জ ও  হুমকি থেকে নিজ রাষ্ট্রের মর্যাদা ও মৌলিক স্বার্থ রক্ষা করছে। আপনার বিশিষ্ট নেতৃত্ব এবং দৃঢ় ইচ্ছা ছাড়া এই ধরনের বাস্তবতা কল্পনা করা যায় না।'

উত্তর কোরিয়া ও রাশিয়া ২ দেশই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন এখন। সেই দিক বিবেচনায় পুতিনের জন্য কিমের এই বিশেষ শুভেচ্ছা উভয়ের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠার ইঙ্গিত।

বার্তাসংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার বিচ্ছিন্নতা বেড়ে গেছে। কিন্তু উত্তর কোরিয়ার কাছে দেশটির মূল্য ক্রমশ বাড়তে দেখা যাচ্ছে। রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক সবসময় সোভিয়েত আমলের মতো উষ্ণ নেই ঠিকই, তবে এখন রাশিয়ার বন্ধুর প্রয়োজন হওয়ায় উত্তর কোরিয়া স্পষ্টতই মস্কোর কাছ থেকে সুবিধা পাচ্ছে। সব মিলিয়ে ঘনিষ্ঠতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ২ দেশের সম্পর্ক।

উত্তর কোরিয়া-রাশিয়া সম্পর্ক কীভাবে শুরু হয়েছিল এবং কীভাবে তারা ঘনিষ্ঠ হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোচনায় রয়টার্স বেশকিছু দিক তুলে ধরেছে।

রাজনৈতিক সমর্থন

কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া স্নায়ুযুদ্ধের প্রথম দিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের সমর্থনে গঠিত হয়েছিল। পরে চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়নের ব্যাপক সহায়তায় ১৯৫০-১৯৫৩ সালের কোরিয়ান যুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়া এবং এর মার্কিন- জাতিসংঘের মিত্রদের সঙ্গে যুদ্ধ করে উত্তর কোরিয়া।

উত্তর কোরিয়া কয়েক দশক ধরে সোভিয়েত সাহায্যের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল ছিল। ১৯৯০ এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হলে দেশটি ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের কবলে পড়ে।

রাশিয়ার সঙ্গে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক সবসময় সোভিয়েত আমলের মতো উষ্ণ নেই ঠিকই। তবে এখন রাশিয়ার বন্ধুর প্রয়োজন হওয়ায় উত্তর কোরিয়া স্পষ্টতই মস্কোর কাছ থেকে সুবিধা পাচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

পিয়ংইয়ংয়ের নেতারা চীন ও রাশিয়ার মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার প্রবণতা দেখিয়েছেন। তবে ২ দেশই যুক্তরাষ্ট্রের পথে হেঁটে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক পরীক্ষার ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের দিকে যাওয়ায়, কিম জং উনের প্রাথমিকভাবে উভয় দেশের সঙ্গেই তুলনামূলক শীতল সম্পর্ক ছিল।

কিন্তু ২০১৭ সালে তার দেশের শেষ পারমাণবিক পরীক্ষার পর কিম এই সম্পর্ক ভালো করার উদ্যোগ নেন। ২০১৯ সালে কিম ও পুতিন রাশিয়ার শহর ভ্লাদিভোস্তকে এক শীর্ষ সম্মেলনে প্রথমবারের মতো দেখা করেন। তারপর থেকে প্রকাশ্যেই উত্তর কোরিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিপরীতে অবস্থান নেয় রাশিয়া।

ইউক্রেন যুদ্ধ সমর্থন

রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসন শুরুর পর উত্তর কোরিয়াও প্রকাশ্যে মস্কোকে প্রতি সমর্থন দিয়েছে। যেসব দেশ বিচ্ছিন্ন ইউক্রেনীয় অঞ্চলগুলোর স্বাধীনতাকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এ সপ্তাহে  ইউক্রেনের কিছু অঞ্চলকে রাশিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার সিদ্ধান্তকেও সমর্থন দিয়েছে, সেসব দেশের একটি রাশিয়া।  

ভ্লাদিভোস্তকের ফার ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আর্তিওম লুকিন সাম্প্রতিক একটি প্রতিবেদনে লিখেছেন, 'ইউক্রেনে মস্কোর বিশেষ সামরিক অভিযান একটি নতুন ভূ-রাজনৈতিক বাস্তবতার সূচনা করেছে, যেখানে ক্রেমলিন এবং উত্তর কোরিয়া ক্রমবর্ধমানভাবে ঘনিষ্ঠ হতে পারে। এটি লক্ষ্যণীয় যে, পিয়ংইয়ং রাশিয়ার সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক বর্ণনা করার জন্য ''কৌশলগত এবং কৌশলগত সহযোগিতার'' মতো নতুন বাক্যাংশ ব্যবহার শুরু করেছে।'

যুক্তরাষ্ট্র বলেছে, যুদ্ধের কারণে খালি হয়ে যাওয়া অস্ত্রের মুজদ আবারও ভরে নিতে রাশিয়া উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে লাখ লাখ গোলাবারুদ এবং অন্যান্য অস্ত্র কেনার বিষয়ে যোগাযোগ করেছিল। যদিও রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়া ২ দেশই এই দাবি অস্বীকার করেছে।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তর কোরিয়ার বাণিজ্যের সিংহভাগই চীনের মধ্য দিয়ে যায়। তবে রাশিয়াও এর একটি সম্ভাব্য গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার। বিশেষ করে তেল সরবরাহের ক্ষেত্রে। জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও রাশিয়ার ট্যাংকারে উত্তর কোরিয়ায় তেল রপ্তানির অভিযোগ আছে। এ ছাড়া পর্যবেক্ষণকারীরা জানিয়েছেন, নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও উত্তর কোরিয়ার শ্রমিকরা রাশিয়ায় রয়ে গেছেন। যদিও মস্কো জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গ করার বিষয়টি সবসময় অস্বীকার করে আসছে।

করোনাকালে উত্তর কোরিয়া সীমান্তে কঠোর লকডাউন দিলে রাশিয়ার সঙ্গে দেশটির বাণিজ্য ও অন্যান্য যোগাযোগ প্রায় বন্ধই হয়ে যায়।

তবে স্থানীয় সরকারের এ সংক্রান্ত কিছু প্রতিবেদনের কথা উল্লেখ করে ফার ইস্টার্ন ফেডারেল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আর্তিওম লুকিনের বলেছেন, সীমান্তের অন্তত কিছু নিষেধাজ্ঞা যে উত্তর কোরিয়া শিগগির তুলে নেবে, তা বুঝে নেওয়ার মতো কারণ আছে। ট্রেনের মাধ্যমে শিগগির ২ দেশের বাণিজ্য চালু করা হতে পারে।

এদিকে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও রাশিয়ার কর্মকর্তারা উত্তর কোরিয়ার ২০ হাজার থেকে ৫০ হাজার শ্রমিক নিয়োগের 'রাজনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে কাজ করার' বিষয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করেছেন।

রাশিয়ার কর্মকর্তারা এবং ইউক্রেনের বিচ্ছিন্ন অঞ্চলের নেতারা উত্তর কোরিয়ার কর্মীদের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অঞ্চল পুনর্গঠনে সহায়তা করার সম্ভাবনা নিয়েও আলোচনা করেছেন।

 

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

13h ago