উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিদের ঢল, ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ জর্ডান-মিশরের

উত্তর গাজা অভিমুখে ফিলিস্তিনিদের ঢল। ছবি: রয়টার্স

ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে আরও ছয় বন্দি মুক্ত করার চুক্তি হওয়ার পর সোমবার যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকার উত্তরাঞ্চলে ফিরতে শুরু করেছেন বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, আজ সোমবার সকাল থেকে উত্তর গাজা অভিমুখে ফিলিস্তিনিদের ঢল নেমেছে। বাস্তুচ্যুত এই জনগোষ্ঠীর সিংহভাগই পায়ে হেঁটে সেখানে যাচ্ছেন।

এর আগে হামাস যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করছে—এমন অভিযোগ তুলে উত্তর গাজায় ফিলিস্তিনিদের প্রবেশে বাধা দিচ্ছিল ইসরায়েলি বাহিনী। তবে রোববার রাতে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর কার্যালয় থেকে জানানো হয়, হামাসের সঙ্গে নতুন চুক্তি হওয়ায় এখন উত্তর গাজায় প্রবেশ করতে পারবেন ফিলিস্তিনিরা।

এএফপিটিভির ধারণ করা ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সোমবার সকালে উপকূলীয় সড়ক ধরে মালামালসহ উত্তর গাজা অভিমুখে এগিয়ে যাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।

গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা ইব্রাহিম আবু হাসসেরা এএফপিকে বলেন, 'নিজের ঘরে ফেরা; পরিবার, আত্মীয়স্বজন ও প্রিয়জনদের কাছে ফেরার অনুভূতি অন্যরকম। নিজের বাড়িটি আবার দেখতে চাই—জানি না এখনো টিকে আছে কি না।'

ফিলিস্তিনিদের এই প্রত্যাবর্তনকে 'বিজয়' বলে আখ্যা দিয়ে হামাস বলেছে, 'এর মাধ্যমে (গাজা) অধিগ্রহণ ও (ফিলিস্তিনিদের) বাস্তুচ্যুতির যে পরিকল্পনা করা হয়েছে, তা ব্যর্থ হলো।'

ট্রাম্পের প্রস্তাব নাকচ জর্ডান ও মিশরের

সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজা 'খালি' করে সেখানকার অধিবাসীদের মিশর ও জর্ডানে পাঠিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। শনিবার এয়ার ফোর্স ওয়ানে তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, গাজার আনুমানিক ২৪ লাখ অধিবাসীকে 'অস্থায়ী বা দীর্ঘমেয়াদিভাবে' স্থানান্তর করে তিনি 'পুরো এলাকাটি পরিষ্কার' করে ফেলবেন।

আরব লীগ ট্রাম্পের এই বক্তব্যের বিরোধিতা করে বলেছে, 'ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের ভূমি থেকে উৎখাত করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে কেবল জাতিগত নিধন বলেই অভিহিত করা সম্ভব।'

জর্ডানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আইমান সাফাদি বলেন, 'ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতির ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কঠোর এবং অপরিবর্তিত। জর্ডান জর্ডানীয়দের জন্য, আর ফিলিস্তিন ফিলিস্তিনিদের জন্য।'

মিশরের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ফিলিস্তিনিদের 'অখণ্ডতার অধিকার' লঙ্ঘন করার যেকোনো প্রচেষ্টাকে প্রত্যাখ্যান করে মিশর।

গাজা ছেড়ে যাওয়ার যেকোনো পরিকল্পনা ফিলিস্তিনিদের ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল সৃষ্টির সময় হওয়া 'নাকবা'র স্মৃতি উসকে দেবে। তখন ইসরায়েল রাষ্ট্র তৈরির জন্য লাখো ফিলিস্তিনিকে বাস্তুচ্যুত করা হয়েছিল।

হামাসের রাজনৈতিক ব্যুরোর সদস্য বাসেম নাইম এএফপিকে বলেন, 'কয়েক দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুতি ও বিকল্প স্বদেশ দেওয়ার' পরিকল্পনাগুলোকে তারা প্রতিহত করেছে। এই পরিকল্পনাকেও ফিলিস্তিনিরা সেভাবেই প্রতিহত করবে।'

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের (পিএ) প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস ফিলিস্তিনিদের গাজা থেকে বাস্তুচ্যুত করার এই পরিকল্পনাকে 'দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান' করে নিন্দা জানিয়েছেন।

গাজার বাস্তুচ্যুত বাসিন্দা রাশাদ আল-নাজি এএফপিকে বলেন, 'ট্রাম্প ও পুরো বিশ্বকে বলতে চাই—আপনারা যত কিছুই করুন না কেন, আমরা ফিলিস্তিন বা গাজা ছাড়ব না।'

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

1h ago