ইসরায়েল-ইরান সংঘাতে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র সিরিয়া

সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসের পাশে একটি বাড়িতে হামলার পর ইসরায়েল ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স/ডয়চে ভেলে
সিরিয়ায় ইরানের দূতাবাসের পাশে একটি বাড়িতে হামলার পর ইসরায়েল ও তেহরানের মধ্যে উত্তেজনা বেড়েছে। ছবি: রয়টার্স/ডয়চে ভেলে

গাজা নিয়ে সংঘাতের জের এবার সিরিয়ার উপর খুব বেশি করতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।

দামেস্কে ইরানের দূতাবাসে হামলার এক সপ্তাহ পরের ঘটনা। রমজান শেষে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আস-আসাদ তার স্ত্রী ও পরিবারকে নিয়ে পথে নেমেছিলেন। তিনি প্রার্থনায় অংশ নেন এবং শহরের রাস্তায় হেঁটে বেড়ান। 

এর কয়েকদিন আগেই একটি বিদেশি রাষ্ট্র তার দেশে হামলা করে ইরানের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় জেনারেলকে হত্যা করেছে বলে অভিযোগ থাকলেও এসময় তাকে দেখে মনে হয়নি তিনি বিচলিত বোধ করছেন।

লন্ডন ভিত্তিক থিংক ট্যাংক চ্যাথাম হাউসের মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আমেরিকা প্রোগ্রামের কনসাল্টিং ফেলো হেইড বলেছেন, 'এই বার্তা দেওয়াই আসাদের উদ্দেশ্য ছিল।'

তিনি বলেছেন, 'আসাদের ফটো অপের ঘটনা হঠাৎ করে হয়নি। সবটাই ছিল আগে থেকে ঠিক করা। তিনি এটাই দেখাতে চেয়েছেন, সিরিয়ায় সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে। সিরিয়া কোনোরকম পাল্টা হামলায় যাবে না।'

হেইডের মতে, 'এটা খুব অবাক হওয়ার মতো ঘটনাও নয়। গাজায় সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই আসাদ তার থেকে একটা দূরত্ব তৈরি করেছেন। তিনি নিজেকে এই বিষয়ে নিরপেক্ষ দেখানোর চেষ্টা করছেন।'

এর পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধ চলছে। দেশটির সেনাবাহিনীর পক্ষে (বিদেশি শক্তির বিপক্ষে) পাল্টা আক্রমণে যাওয়া সম্ভব নয়। সিরিয়ার অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। এই অবস্থায় গাজা নিয়ে নিরপেক্ষ অবস্থান নিলে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে আসাদের লাভ হতে পারে।

সিরিয়া ও ইরানের সম্পর্ক

২০১২ সালে সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইরান। তারা বিরোধী শক্তিকে হারাবার চেষ্টা শুরু করে। পরিবর্তে সিরিয়া তাদের লেবাননে যাওয়ার জন্য স্থল ভূখণ্ড ব্যবহার করতে দেয়।

লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহ হলো ইরানের সবচেয়ে শক্তিশালী সমর্থক। সিরিয়াতেও হিজবুল্লাহর উপস্থিতি আছে। ইরান ও হিজবুল্লাহ মনে করে, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র তাদের শত্রু।

সিরিয়ায় ইরানের উপস্থিতির ফলে ইসরায়েল চিন্তিত হয়ে পড়ে। তাদের সীমান্তের কাছে ইরানের সেনা ও অবকাঠামো নিয়ে ইসরায়েলের চিন্তা বাড়ে। তারা নিয়মিত সিরিয়ায় ইরানের অবকাঠামোর উপর আঘাত হানতে থাকে।

থিংক ট্যাংক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের ব্যাখ্যা, 'ইসরায়েলের প্রাথমিক লক্ষ্য হলো, সিরিয়ায় ইরানের সামরিক উপস্থিতি বন্ধ করা। ইরান যাতে সামরিক অবকাঠামো তৈরি করতে না পারে তা নিশ্চিত করা।'

'সিরিয়া হয়ে হিজবুল্লাহর সরবরাহ শৃঙ্খল বন্ধ করার জন্য ইসরায়েল একশবারেরও বেশি হামলা চালিয়েছে। ২০১৭ সালের পর থেকে এ ধরনের আক্রমণের সংখ্যা বাড়ে', যোগ করে সংস্থাটি। 

পর্যবেক্ষকদের মতে, ইসরায়েল প্রায় প্রতি সপ্তাহেই সিরিয়ায় আঘাত হানার চেষ্টা করেছে।

যে কারণে পাল্টা হামলা করছে না সিরিয়া

সিরিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে গৃহযুদ্ধ চলছে। তারা নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্যই ব্যস্ত। তাই তাদের পক্ষে ইসরায়েলকে প্রত্যাঘাত করা সম্ভব নয়। বিশ্লেষকদের মতে, তারা যদি সে চেষ্টা করে, তাহলে খুব বেশি হলে রকেট ছুড়তে পারে, যা খালি জমিতে গিয়ে পড়বে। আর ইসরায়েল সিরিয়ার সম্পদের উপর আক্রমণ চালায় না, তাদের লক্ষ্য থাকে ইরানের অবকাঠামো ধ্বংস করা।

তবে ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলে ঢুকে আক্রমণ করার পর সিরিয়ায় ইসরায়েলের হামলা আরো নিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। হামাসকে যুক্তরাষ্ট্র, ইইউ ও অন্য কয়েকটি দেশ সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করেছে। অতীতে হিজবুল্লাহ বা ইরানিদের হত্যার পথে খুব একটা যেত না ইসরায়েল। কিন্তু এখন তারা সেই কৌশল বদলেছে বলে মনে করেন হেইড।

তিনি লিখেছেন, 'সাত অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েল এখন সিরিয়ায় ইরানের নেতৃত্বকে হত্যার কৌশল নিয়েছে।'

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, 'হিজবুল্লাহ যেখান থেকে তাদের কার্যক্রম পরিচালণা করুক না কেন, আমরা সেখানেই পৌঁছে যাব। সেটা বৈরুত, দামেস্ক বা অন্য কোনো জায়গা হতে পারে।'

গত ১ এপ্রিল দামেস্কে ইরানের দূতাবাস আক্রান্ত হয়। অভিযোগ, ইসরায়েল এই হামলা চালিয়েছে। তারপর ১৩ এপ্রিল ইসরায়েলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করে ইরান।

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে সরাসরি আক্রমণের ঘটনা আপাতত আর হবে না বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তবে পরোক্ষ আক্রমণ চলবে বলে তাদের মত।

ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের পরামর্শদাতা দারিন খালিফা বলেছেন, 'সিরিয়ায় আক্রমণ করতে গেলে খুব বেশি খরচ হয় না বলে একটা কথা চালু আছে। তাই আমি মনে করি, সিরিয়ায় ইরানের অবকাঠামোর উপর আঘাত চলতে থাকবে। আর সিরিয়ায় হচ্ছে বলে, তার কোনো আঞ্চলিক প্রতিক্রিয়া হবে না, এটা মনে করা ভুল হবে।'

ক্রিস্টিন শেয়ার/জিএইচ/ডিডাব্লিউ

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

9h ago