তুরস্ক-সিরিয়ায় ভূমিকম্প যে কারণে এত প্রাণঘাতী

তুরস্ক, সিরিয়া, তুরস্কে ভূমিকম্প, সিরিয়ায় ভূমিকম্প,
সিরিয়ার বিদ্রোহী-নিয়ন্ত্রিত শহর জান্ডারিসে ভূমিকম্পের পর ধ্বংসস্তূপে উদ্ধার অভিযান চালানো হচ্ছে। ছবি: রয়টার্স

শক্তিশালী ভূমিকম্পে তুরস্ক ও সিরিয়ার বিভিন্ন স্থানে বহুতল ভবন ধসে পড়েছে। ২ হাজার ৩০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার সকালে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার প্রথম ভূমিকম্পের কয়েক ঘণ্টা পর ৭ দশমিক ৬ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হানে। যা ১৯৩৯ সালে উত্তর-পূর্ব তুরস্কের ভূমিকম্পের মতো ছিল। তখন প্রায় ৩০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া, ১৯৯৯ সালে দেশটির পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর ইজমিতে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেশ কয়েকটি কারণ এবারের ভূমিকম্পকে কঠিন করে তুলেছে। ইস্তাম্বুলের বোগাজিসি ইউনিভার্সিটির কান্দিলি অবজারভেটরি অ্যান্ড ভূমিকম্প রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক মুস্তাফা এরডিক আল জাজিরাকে বলেন, 'হতাহতের সংখ্যা এত বেশি হওয়ার অন্যতম কারণ ভবনগুলোর নিম্নমান।'

১৯৯৯ সালের ভূমিকম্পের পর তুরস্কের প্রতিষ্ঠানগুলো ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোতে ঝুঁকি হ্রাসের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়েছিল। এর পরের বছর, সব ভবনে বাধ্যতামূলক নকশা পরীক্ষা এবং নির্মাণ কাজ পরিদর্শনে একটি আইনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল।

কিন্তু, আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্প-প্রতিরোধী নকশা কোড অনুসারে নির্মিত ভবনের সংখ্যা এখনো কম।

অধ্যাপক এরডিক বলেন, 'যেসব ভবন ধসে পড়েছে, সেগুলো ২০০০ সালের আগেই নির্মিত।'

তুরস্কের দুর্যোগ সংস্থা জানিয়েছে, স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা পর্যন্ত তুরস্কের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে প্রায় দুই হাজার ৯০০ ভবন ধসে পড়েছে।

আল জাজিরার ইস্তাম্বুল সংবাদদাতা সিনেম কোসেওগলু জানিয়েছেন, ধসে পড়া ভবনের মধ্যে হাতায়ে একটি ও ইসকেন্দেরুনের একটিসহ অন্তত ২টি হাসপাতাল আছে। মূল ভূমিকম্পের পর ছোট ছোট কম্পন অনুভূত হওয়ায় বহুতল ভবনে উদ্ধার প্রচেষ্টা অনেক কঠিন হয়ে উঠেছে।

মৃতের সংখ্যা বেশি হওয়ার আরেকটি কারণ হলো প্রথম কম্পন আঘাত হানে ভোরে। তখন মানুষ ঘুমিয়ে থাকায় অনেকে ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন।

তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, স্থানীয় সময় দুপুর ১টা ২৪ মিনিটে কাহরামমারাসের একিনোজু শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ-পূর্বে ৭ দশমিক ৬ মাত্রার আরেকটি ভূমিকম্প আঘাত হানে।

স্থানীয় গণমাধ্যমের লাইভ ফুটেজে দেখা গেছে, সর্বশেষ ভূমিকম্পের সময় মালাতিয়া শহরের আরও অনেক ভবন ধসে পড়েছে।

আল জাজিরা বলছে, শুধু আধুনিক ভবনগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। গাজিয়ানটেপ দুর্গ আংশিক ধসে পড়েছে। স্থানীয় গণমাধ্যমে পোস্ট করা ভিডিওতে দেখা গেছে, ওই দুর্গের কিছু অংশ রাস্তায় পড়ে গেছে।

তুর্কি সরকার চতুর্থ স্তরের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে।

অস্ট্রেলিয়ার কার্টিন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ক্রিস এল্ডার্স বলেন, প্রাথমিক ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল প্রায় ১৮ কিলোমিটার (১১ মাইল)। ভূমিকম্পের ফলে যে শক্তি নির্গত হয় তা ভূপৃষ্ঠের কাছাকাছি তীব্রভাবে অনুভূত হবে।

তুরস্কের বিজ্ঞান একাডেমির ভূকম্পনবিদ নাসি গোরুর স্থানীয় কর্মকর্তাদের সম্ভাব্য বন্যা এড়াতে অবিলম্বে এ অঞ্চলের বাঁধে ফাটল পরীক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিবেশী সিরিয়ার আলেপ্পো ও হামা থেকে ৩৩০ কিলোমিটার (২০০ মাইল) উত্তর-পূর্বে তুরস্কের দিয়ারবাকির শহর পর্যন্ত বিস্তৃত তুর্কি সীমান্তের একটি অংশে ভবন ধসে পড়েছে বলে জানা গেছে।

মানবিক সংস্থাগুলো আশঙ্কা করছে, সিরিয়ায় বর্তমানে মৃতের সংখ্যা ৭৫০ জনেরও বেশি হতে পারে। কারণ জরুরি অবস্থা মোকাবিলায় উদ্ধারকারী দলগুলোর সক্ষমতা তুলনামূলক কম।

ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস অ্যান্ড রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির মুখপাত্র মে আল সায়েগ আল জাজিরাকে বলেন, 'উদ্ধার অভিযানে ব্যবহৃত যন্ত্রগুলো বেশ পুরনো ও সহায়তার জন্য পর্যাপ্ত এক্সকেভেটর নেই।'

ইন্টারন্যাশনাল রেসকিউ কমিটির সিরিয়ার পরিচালক তানিয়া ইভান্স বলেছেন, ভূমিকম্পটি 'বছরের পর বছর ধরে সংঘাতের জড়িত অনেক জনগোষ্ঠীর জন্য আরেকটি বিধ্বংসী আঘাত'।

Comments

The Daily Star  | English

Killing of trader in old Dhaka: Protests erupt on campuses

Protests were held on campuses and in some districts last night demanding swift trial and exemplary punishment for those involved in the brutal murder of Lal Chand, alias Sohag, in Old Dhaka’s Mitford area.

3h ago