লাতিন আমেরিকায় চীনের বন্দর, সতর্ক দৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্রের

চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্ট। ছবি: এএফপি

বহির্বিশ্বের সঙ্গে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধ ঘোষণা ও চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চলমান বৈরিতার মাঝে পেরুতে একটি গভীর সমুদ্রবন্দর উদ্বোধন করেছেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। এই বন্দর লাতিন আমেরিকার সঙ্গে চীনের সরাসরি বাণিজ্যিক সংযোগ তৈরি করবে এবং এর ফলে দক্ষিণ আমেরিকায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব আরও কমে আসবে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।

আজ শনিবার বিবিসির এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এশিয়া-প্যাসিফিক ইকোনমিক কো-অপারেশন ফোরামের (এপেক) বার্ষিক সম্মেলনে অংশ নিতে গত সপ্তাহে পেরুতে পা রাখেন শি জিনপিং। বৃহস্পতিবার চানকাই বন্দর উদ্বোধনের মাধ্যমে তিনি পেরু সফর শুরু করেন। বিশাল এই বন্দর নির্মাণে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করেছে বেইজিং।

বিশ্লেষকরা বলছেন, মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতি ওয়াশিংটনের দীর্ঘদিনের উদাসীনতার সুযোগ নিচ্ছে চীন। যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেওয়া সিংহভাগ অবৈধ অভিবাসী এসব দেশ থেকে আসায় প্রায় সময়ই তাদের প্রতি বৈরি মনোভাব পোষণ করে থাকেন মার্কিন রাজনীতিবিদরা।

নব-নির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা সব পণ্যের ওপর অন্তত ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। চীন ও মেক্সিকোর মতো কিছু দেশের ক্ষেত্রে এই শুল্কের পরিমাণ ৬০ থেকে ১০০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর ওপর শুল্কের পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

ওয়াশিংটনের পিটারসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল ইকোনমিকসের জ্যেষ্ঠ ফেলো মনিকা ডি বোলে বিবিসিকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে লাতিন আমেরিকায় অনুপস্থিত। চীন এ অঞ্চলে এত দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে যে গত এক দশকে অনেক কিছু বদলে গেছে।'

'যুক্তরাষ্ট্রের উঠান থেকে তারা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে। এটা (ওয়াশিংটনের জন্য) উদ্বেগের ব্যাপার হবে,' যোগ করেন তিনি।

চানকাই বন্দরে নির্মাণ কাজের দায়িত্ব পালন করেছে চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কসকো শিপিং। ধারণা করা হচ্ছে, এই বন্দর পুরোপুরি চালু হলে এখানে চিলি, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া ও ব্রাজিল থেকে পণ্য আসবে। এসব পণ্য সরাসরি সাংহাইয়ের মতো এশীয় বন্দরগুলোতে চলে যাবে।

ওয়াশিংটন পোস্ট জানায়, পেরুর প্রেসিডেন্ট দিনা বোলুয়ার্ট এই বন্দরকে দক্ষিণ আমেরিকার সম্ভাব্য 'স্নায়ুকেন্দ্র' বলে অভিহিত করেছেন। এই বন্দরে বছরে আট হাজার মানুষের কর্মসংস্থান এবং ৪৫০ কোটি ডলারের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড হতে পারে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

নিয়মিত ব্রাজিল থেকে সয়াবিন ও চিলি থেকে তামা আমদানি করে চীন। এই বন্দর চালুর ফলে লাতিন আমেরিকা থেকে চীনের আমদানিকৃত পণ্যের শিপিংয়ের সময় ৩৫ থেকে ২৩ দিনে নেমে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মার্কিন সামরিক বিশ্লেষকরাও এই বন্দর নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, সুবিশাল কনটেইনার জাহাজগুলোকে জায়গা দিতে পারা চানকাই বন্দর ভবিষ্যতে চীনা যুদ্ধজাহাজগুলোকেও জায়গা দিতে পারবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাউদার্ন কমান্ডের সাবেক প্রধান জেনারেল লরা রিচার্ডসন বিবিসিকে বলেন, 'এই (লাতিন আমেরিকা) অঞ্চল জুড়ে দ্বৈত ব্যবহারের বন্দর এবং অন্যান্য কাঠামো বিকাশের মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে চীন।'

এই অঞ্চলের বন্দর ও কাঠামোগুলো ভবিষ্যতে চীনের কৌশলগত নৌ চেকপয়েন্ট বা সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি।

বেল্ট অ্যান্ড রোড প্রকল্পের অধীনে চানকাই বন্দর নির্মাণ করেছে চীন। এই প্রকল্পের আওতায় ২০২৩ সাল থেকে বিশ্বের ১৫০টি দেশের অবকাঠামো উন্নয়নে বিনিয়োগ করেছে দেশটি।

Comments

The Daily Star  | English

Students block Mirpur Road demanding merit-based admissions

Students of Mohammadpur Residential School and College took to the street, causing gridlock on both sides of the road

51m ago