২১ বছর পর গুয়ানতানামো বে কারাগার থেকে মুক্তি পেলেন সৌদি প্রকৌশলী
যুক্তরাষ্ট্র সৌদি আরবের এক প্রকৌশলীকে কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে সামরিক কারাগার থেকে মুক্তি দিয়েছে। প্রকৌশলী ঘাসান আল শারবির (৪৮) বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো অভিযোগ গঠন করা না হলেও তিনি ২০ বছরেরও বেশি সময় কারাবন্দী ছিলেন।
কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা আজ বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, শারবিকে সৌদি আরবে ফেরত পাঠানো হয়েছে। ২০২২ এর ফেব্রুয়ারিতে একটি নিরীক্ষা বোর্ড সিদ্ধান্ত নেয়, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি কোনো উল্লেখযোগ্য হুমকি সৃষ্টি করছেন না এবং তাকে আর আটক রাখার প্রয়োজন নেই।
প্রতিরক্ষা বিভাগের বিবৃতিতে বলা হয়, 'স্বয়ংসম্পূর্ণ নিরাপত্তা উদ্যোগের বাস্তবায়ন সাপেক্ষে শারবিকে সৌদি আরবে স্থানান্তর করা হয়েছে, যার মাঝে আছে নিরন্তর নিরীক্ষা, ভ্রমণের ওপর বিধিনিষেধ ও ধারাবাহিকভাবে তথ্য ভাগ করে নেওয়ার মতো বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন'।
পেন্টাগনের পর্যায়ক্রমিক নিরীক্ষা বোর্ড ২০২২ সালে সিদ্ধান্ত নেয়, শারবি জঙ্গি সংগঠন আল-কায়দার কোনো নেতা বা সহায়তাকারীর ভূমিকা পালন করেনি এবং তিনি আটকাবস্থায় সব ধরনের নীতি মেনে চলেছেন। সেখানে আরও বলা হয়, তার 'শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা' রয়েছে। তবে এসব সমস্যার কোনো বিস্তারিত তথ্য দেওয়া হয়নি সেখানে।
যুক্তরাষ্ট্র আগে জানিয়েছিল ১১ সেপ্টেম্বরের হামলার পর শারবি পাকিস্তানে পালিয়ে গেছিলেন। সেখানে তিনি বোমা নির্মাণের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। পরের বছর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ মতে, তাকে কারা হেফাজতে নির্যাতন করা হয়য় এবং পরবর্তীতে গুয়ানতানামো বে'র সামরিক কারাগারে পাঠানো হয়।
২০০৮ সালে মার্কিন সামরিক বাহিনী শারবি ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের উদ্যোগ নিলেও এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন হয়নি। যদিও শারবির বিরুদ্ধে কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ আনা হয়নি, তাকে ছেড়ে দেওয়ার বিষয়টিও অনুমোদন পায়নি। বছরের পর বছর শারবিকে শত্রুপক্ষের যোদ্ধা হিসেবে আটকে রাখে যুক্তরাষ্ট্র।
এরিজোনার অ্যারোনটিকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করা এবং ২০০১ এর হামলার সঙ্গে জড়িত আল-কায়েদার ২ বৈমানিকের সঙ্গে ফ্লাইট স্কুলে যোগ দেওয়ার কারণে শারবিরও একই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে সন্দেহ তৈরি হয়।
এ বছর শারবিসহ অন্তত ৪ কয়েদীকে মুক্তি দিয়ে অন্য দেশে পাঠিয়েছে গুয়ান্তানামো বে।
কিউবায় মার্কিন নৌবাহিনীর ঘাঁটি সংলগ্ন গুয়ানতানামো বে'তে ২০০৩ সালে ৬০০ কয়েদী বন্দী ছিলেন। শারবির মুক্তির পর আর মাত্র ৩১ জন কয়েদী রয়েছেন সেখানে। প্রতিরক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, আরও ১৭ জন ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া যেতে পারে, যদি তাদেরকে কোনো স্থিতিশীল দেশ গ্রহণ করতে রাজি হয়।
দীর্ঘ দিন ধরে মানবাধিকার সংস্থাগুলো গুয়ানতানামো কারাগার বন্ধ করার আহ্বান জানিয়ে আসছে।
Comments