বেনাপোল বন্দরে দুর্নীতি-অনিয়ম-ষড়যন্ত্র, ২ উপ-পরিচালক বরখাস্ত

বরখাস্তকৃত দুই কর্মকর্তা। ছবি: সংগৃহীত

বেনাপোল স্থলবন্দরে দায়িত্ব পালনকালে রাজস্ব ফাঁকি, দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও অন্যান্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, দপ্তরের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাচারের অভিযোগে দুই উপ-পরিচালককে বরখাস্ত করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।

গতকাল সোমবার তাদের বরখাস্ত করা হয়েছে এবং আজ এই নির্দেশনা বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল স্থলবন্দরের পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, 'বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান চৌধুরীর সই করা পত্রে জানানো হয়েছে, উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মনিরুল ইসলাম ও উপ-পরিচালক (প্লানিং) মো. কবির খানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।'

তিনি জানান, বরখাস্তের পর তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও করা হয়েছে।

বেনাপোল বন্দরের ডিজিটাল ওয়িং স্কেলে ওজনে কারসাজি করে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে নিজেদের পকেটস্থ করেছেন এই দুই কর্মকর্তা। রাজস্ব পরিশোধ ছাড়াই আমদানিকারকদের পণ্য আনার সুযোগ করে দেন তারা।

বন্দর সূত্র জানায়, মনিরুল ইসলাম ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন। এই পরিচয়ে ব্যবহার করেই তিনি প্রধান কার্যালয়ে দাপট দেখাতেন এবং গত ১৪ বছরে লাগামহীন দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন।

সূত্র আরও জানায়, ২০২২ সালের ১ অক্টোবর বেনাপোল স্থলবন্দরে ডেপুটি ডাইরেক্টর হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকেই ভারত থেকে আমদানিকৃত পচনশীল পণ্যের ক্ষেত্রে ডিজিটাল ওয়িং স্কেলে কারচুপি শুরু করেন মনিরুল ইসলাম। সেসময় ভারত থেকে প্রতিদিন গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ ট্রাক পচনশীল মাছ, ফল, কাঁচামরিচ, পেঁয়াজ, টমেটো, আলু ইত্যাদি আমদানি হতো। প্রতিটি চালানে তিন টন করে কম দেখিয়ে ওজন শ্লিপ দেওয়া হতো। সেই অনুযায়ী রাজস্ব আদায় করতেন কাস্টমস কর্মকর্তারা।

বন্দরের কতিপয় কর্মকর্তা ও অসাধু আমদানিকারকদের যোগসাজশে ওজন স্কেলে প্রতিটি ভারতীয় ট্রাকের পণ্যের ওজন কম দেখানো হতো এই দুই কর্মকর্তার নির্দেশে।

প্রতি টন পণ্যের রাজস্ব প্রায় ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। বন্দরে প্রতিদিন দুই থেকে আড়াই কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হতো এই দুই কর্মকর্তার নির্দেশনায়। ফাঁকি দেওয়া এই রাজস্ব বন্দরের অন্যান্য কর্মকর্তাসহ নিজেরা ভাগাভাগি করে নিতেন। এভাবে প্রতি মাসে ৬০ থেকে ৭০ কোটি টাকা রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হতো।

মনিরুল ইসলাম বেনাপোল থেকে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া টাকার একটি অংশ পৌঁছে দিতেন উপ-পরিচালক কবির খানকে। তাদের সেই অপকর্ম প্রকাশ হলে তদন্ত করে স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয় সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মো. জিল্লুর রহমান বলেন, 'তাদের দুজনকে সাময়িক বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলা করা হয়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Under pressure, UK govt unveils flagship immigration plans

People will have to live in the UK for 10 years before qualifying for settlement and citizenship

51m ago