থাইল্যান্ডের রাস্তায় কেন ‘জেব্রা প্রতীমা’

অনেক জেব্রার গলায় মালা ঝুলছে, অনেক জেব্রার সামনে আবার রাখা আছে কোমল পানীয় ‘ফান্টা’।
অনেক জেব্রার গলায় মালা ঝুলছে, অনেক জেব্রার সামনে আবার রাখা আছে কোমল পানীয় ‘ফান্টা’। ছবি: সংগৃহীত

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে বিভিন্ন সড়ক ধরে হেঁটে গেলে ফুটপাতে জেব্রার প্রতীমা চোখে পড়ে। অনেক জেব্রার গলায় মালা ঝুলছে, অনেক জেব্রার সামনে আবার রাখা আছে কোমল পানীয় 'ফান্টা'।

ব্যাংককের ব্যস্ত সড়ক লাডপ্রাওয়ে এটি একটি সাধারণ চিত্র। কথিত আছে, কেউ একজন একটি জেব্রার প্রতীমা এনে সড়কের পাশে রেখেছিলেন। তার দেখাদেখি পরে অন্যরাও জেব্রার প্রতীমা রাখতে শুরু করেন।

অনেক সময় জেব্রার প্রতীমা জড়ো হতে হতে এমনকি কোনো কোনো সড়ক বন্ধ হওয়ারও উপক্রম হয়। যেমন: প্রায় ৬ বছর আগে ব্যাংককের রাচাদা সড়কে জেব্রার প্রতীমার কারণে চলাচলের অসুবিধা তৈরি হয়েছিল। তখন সড়কটি চলাচলের উপযোগী করতে ট্রাক লরি এনে জেব্রার প্রতীমা সরাতে হয়েছিল।

অনেক জেব্রার গলায় মালা ঝুলছে, অনেক জেব্রার সামনে আবার রাখা আছে কোমল পানীয় ‘ফান্টা’। ছবি: সংগৃহীত

কিন্তু সড়কের পাশে জেব্রার প্রতীমা রাখা হয় কেন? থাইল্যান্ডের প্রতীক হাতি, সেক্ষেত্রে হাতির প্রতীমা কেন নয়? অন্যদিকে থাইল্যান্ড বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের দেশ। বৌদ্ধ ধর্মেও জেব্রার বিশেষ কোনো মর্যাদা নেই। আবার থাই রাশিফলে বাঘ, সিংহ, শূকর, মুরগীর প্রতীক থাকলে জেব্রার কোনো প্রতীক নেই। তাহলে কেন জেব্রা?

এমন প্রশ্নের জবাবে থাই সাংবাদিক জ্যাং বলেন, 'এই রীতির কোনো নির্দিষ্ট ব্যাখ্যা নেই। থাইল্যান্ডের মানুষের কিছু অদ্ভূত বিশ্বাস রয়েছে। যেখানে এমন জেব্রার ভাস্কর্য দেখবেন, ধরে নিতে হবে সেখানে কখনো কোনো দুর্ঘটনা ঘটেছিল বা কয়েকটি দুর্ঘটনার ফলে সেটিকে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা মনে করা হচ্ছে। জেব্রা ক্রসিং থেকেই হয়তো জেব্রার ওপর বিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এজন্যই হয়তো জেব্রাকে 'সড়ক নিরাপত্তা'র প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হয়।'

থাইল্যান্ডে বৌদ্ধ দেবতা, হিন্দু দেবতা এবং ভূত দেবতার আরাধনা করা হয়। ধারণা করা হয়, যেসব এলাকার ওপর ভূত দেবতা বা কোনো অশরীরী শক্তি ক্ষেপে রয়েছে সেগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই এই অশুভ শক্তিকে শান্ত রাখতে জেব্রার প্রতীমা রাখা হয় বলে জানান তিনি।

থাইল্যান্ডের বিভিন্ন সড়কে বিভিন্ন আকারের জেব্রার প্রতীমা দেখা যায়। দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় কখনো কখনো কোনো প্রয়াত ধর্মীয় গুরুর ছবি এনে তার সামনেও জেব্রা রাখা হয়। ধর্মীয় গুরু যেন সড়ক নিরাপদ রাখার জন্য প্রার্থনা করেন এবং প্রার্থনার বহনকারী হিসেবে বিবেচনা করে জেব্রা রাখা হয়।

বিশ্বাসীরা এভাবেই যাত্রাপথে জেব্রা রেখে নিজের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য প্রার্থনা করেন। আবার যারা হয়তো জেব্রার প্রতীমা আনতে পারেন না, তারা জেব্রার গলায় দেওয়ার জন্য মালা নিয়ে আসেন, প্রার্থনা করে সামনে লাল বা কমলা রঙের 'ফান্টা' রাখেন।

অনেক জেব্রার গলায় মালা ঝুলছে, অনেক জেব্রার সামনে আবার রাখা আছে কোমল পানীয় ‘ফান্টা’। ছবি: সংগৃহীত

প্রার্থনা স্থানে লাল বা কমলা রঙের কোমল পানীয় 'ফান্টা' দেওয়ার কারণ সম্পর্কেও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায় না।

অন্তত ১০ জন থাই নাগরিকের সঙ্গে কথা বলেও এর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। তারা প্রত্যেকেই বলেছেন, 'সবাই রাখে। তাই আমিও রাখি।'

থাইল্যান্ডে অন্যকে অনুসরণ করে ধর্মীয় চর্চা খুবই প্রচলিত। অনেক স্থানেই দেখা যায় প্রচুর মুরগির ভাস্কর্য কিংবা কচ্ছপের ভাস্কর্য রাখা। হয়তো কেউ একজন রাস্তার পাশের ফুটপাথে বা খোলা মাঠের কোনায় একটা কুমিরের ভাস্কর্য রেখেছে, স্বল্প সময়ের মধ্যেই তার দেখাদেখি আরও অনেক মানুষ কুমিরের ভাস্কর্য এনে রাখা শুরু করে। তাই এই ধরনের আচারের ব্যখ্যা অনেক সময়ই খুঁজে পাওয়া যায় না।

এমনও ঘটনা আছে যে, কেউ একজন কোনো এক বিশ্বাস থেকে সড়কের পাশে ফান্টা আর বার্গার রেখে দেয়। তার দেখাদেখি আরও কয়েকজন এসব রাখতে শুরু করে। তারপর একদিন একদল বিদেশি পর্যটক এসে সড়কের পাশ থেকে সেই খাবার নিয়ে খেয়ে ফেলে। কারণ তারা ভেবেছে এগুলো দান বা অতিথিদের জন্যই রাখা!

লেখক: ব্যাংককপ্রবাসী সাংবাদিক

Comments

The Daily Star  | English

Singapore’s Financial Intelligence Unit seeks info on S Alam Group

The overseas assets of S Alam Group, including those in Singapore, came under scrutiny following recent media reports.

2h ago