শেষ মুহূর্তে টাইটানিকে যাত্রা বাতিল, বেঁচে যাওয়া ধনকুবেরের গল্প

শেষ মুহূর্তে টাইটানিকে যাত্রা বাতিল, বেঁচে যাওয়া ধনকুবেরের গল্প
মিল্টন হার্শি। ছবি: সংগৃহীত

কথায় আছে সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য কখনো বলে-কয়ে আসে না। মাঝেমধ্যে আমরা এমন দুর্ভাগ্যের কবলে পড়ি; যা আমাদের জীবনকেই বদলে দেয়। সৌভাগ্যের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। মাঝেমধ্যে মানুষের জীবন-মৃত্যুর নিরূপক হয়ে দাঁড়ায় এসব সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য।

২০১৪ সালের মার্চে ভারত মহাসাগরে রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যায় মালয়েশিয়ান এয়ারলাইনসের ফ্লাইট এমএইচ ৩৭০। একই বছর একই বিমান প্রতিষ্ঠানের আরেকটি ফ্লাইট এমএইচ১৭ ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে ভূপাতিত হলে সবাই নিহত হন। দুটি বিমানের মধ্যে একটি অদ্ভুত মিল আছে। এই দুটি বিমানেরই যাত্রী ছিলেন নেদারল্যান্ডসের সাইক্লিস্ট মার্টেন ডি জং, কিন্তু উভয় ক্ষেত্রেই শেষ মুহূর্তে তিনি ভ্রমণ পরিকল্পনা বাতিল করেছিলেন। বিমানগুলোর নিখোঁজ ও ধংস হওয়ার পরের মাতমে ডি জংয়ের অভানীয় সৌভাগ্যের কথা অনেকটাই ঢাকা পড়ে গেছে, তবে অনেকই  তাকে 'সবচেয়ে সৌভাগ্যবান জীবিতদের' তালিকায় রাখতে কোনো কার্পণ্য করেন না। 

মিল্টন স্ন্যাভলি হার্শিও ছিলেন ডি জংয়ের মতোই ভাগ্যবান। যে টাইটানিক বিশ্বের ইতিহাসে অন্যতম এক ট্র্যাজেডি হয়ে আছে, যে জাহাজে প্রথমবারের মতো চড়ে প্রাণ হারিয়েছেন পনেরশ'রও বেশি মানুষ, সে জাহাজের যাত্রী ছিলেন হার্শিও। 

ওহ! ভাবছেন কে এই মিল্টন হার্শি? তার অনেকগুলো পরিচয় আছে, তবে একটি পরিচয়ই যথেষ্ঠ। তিনি বিশ্বখ্যাত হার্শি'স চকলেট কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা। 

হার্শি’স চকলেট। ছবি: সংগৃহীত

১৮৯৪ সালে তিনি হার্শি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। চকলেট ব্যবসায় এটিই তার প্রথম উদ্যোগ না হলেও সবচেয়ে সফল উদ্যোগ, সেটা তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ১৯০৫ সালে হার্শি কোম্পানি নতুন ফ্যাক্টরি চালু করে, যার ফলে উৎপাদন বহুগুণ বাড়াতে ও সারা দেশে তাদের তৈরি চকলেটের ব্যবসা বিস্তৃত করতে সমর্থ হয়। হার্শি'স চকলেটের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে উঠতে খুব বেশি সময় লাগেনি। পরের বছরের মধ্যেই প্রতিষ্ঠানটি চাহিদা অনুসারে সরবরাহ অক্ষুন্ন রাখতে এত সংখ্যক কর্মী নিয়োগ দিতে বাধ্য হয় যে, তাদের বসবাসের জন্য একটি পুরো শহরের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। কর্মীদের বিনোদনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়ায় তৈরি হয় হার্শি পার্ক। 

কোম্পানির ব্যবসা তুঙ্গে থাকায় ফুলে ফেঁপে উঠতে থাকে হার্শির ব্যাংক-ব্যালান্স। ১৯১২ সালের মিল্টন হার্শি এবং তার স্ত্রী ফ্রান্সের নিস শহরে অবকাশ কাটাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। ফেরার পথে অভিজাত ভ্রমণের জন্য টাইটানিকের টিকেট কেটেছিলেন তারা। অভিজাত ভ্রমণের পাশপাশি তাদের উদ্দেশ্য ছিল টাইটানিকের মতো এত আধুনিক জাহাজের প্রথম যাত্রার ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকা। টাইটনিকের যে সুইটটি তারা বুকিং দিয়েছিলেন, সেটি ছিল জাহাজটির সবচেয়ে দামি সুইটগুলোর একটি।

কিন্তু ফেরার পথে আর টাইটানিক ভ্রমণ করা হয়নি হার্শি ও তার স্ত্রীর। বেশিরভাগ ইতিহাসবিদ বলেন, ফেরার কয়েক সপ্তাহ আগে হার্শি অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাধ্য হয়ে তাদের ভ্রমণ সূচিতে পরিবর্তন আনতে হয়েছে। কেউ কেউ বলেন হার্শি কোম্পানির একজন কর্মকর্তা প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে হার্শিকে জরুরিভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে ফেরার তাড়া দিয়েছিলেন এবং তাতে সাড়া দিয়ে নির্ধারিত সময়ের আগেই তিনি ফ্রান্স ছেড়ে যান। 

দ্য হার্শি কোম্পানি

কারণ যা-ই হোক, হার্শি এবং তার স্ত্রী টাইটানিকের পরিবর্তে জার্মান একটি জাহাজে চড়ে বাড়ি ফেরেন। উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরে বিশাল বরফখণ্ডের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে টাইটানিকের ডুবে যাওয়ার কয়েকদিন আগেই তারা নিরাপদে বাড়ি পৌঁছান। কাতালীয়ভাবে জার্মান জাহাজটি আটলান্টিক পাড়ি দেওয়ার সময় টাইটানিককে সাগরে থাকা বিশাল বরফখণ্ডের ব্যাপারে সতর্কও করেছিল। কিন্তু কথায় আছে না- 'কপালের লিখন, না যায় খণ্ডন!' 

শেষ মুহূর্তে  টাইটানিকে ভ্রমণ বাতিল করা ভিআিইপিদের মধ্যে আরও ছিলেন মার্কিন ধনকুবের ও ব্যাংকার জে পি মরগান। তার নিজের নামে প্রতিষ্ঠিত জে পি মরগান ব্যাংক এখন বিশ্বের অন্যতম বড় ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক। মার্কিন শিল্পপতি হেনরি ক্লে ফ্রিক এবং জর্জ ভ্যানডারবিল্ট দ্য সেকেন্ডও শেষ মুহূর্তে টাইটানিক ভ্রমণ বাতিল করেছিলেন। 

 

Comments

The Daily Star  | English
Binimoy platform suspended by Bangladesh Bank

BB suspends Binimoy over irregularities

During the previous AL govt, it was developed by the IDEA under the ICT Division at a cost of Tk 65 crore.

10h ago