জানা-অজানা

নীল এলইডি যেভাবে বদলে দিয়েছে পৃথিবী

নীল এলইডি। ছবি: আই স্টক

স্মার্টফোন, টিভি, কম্পিউটার, আইপ্যাড এবং আধুনিক যুগের অনেক যুগান্তকারী আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে কম শক্তি ক্ষয়কারী এলইডি স্ক্রিনের জন্য।

এই এলইডির প্রভাব শুধু আমাদের উজ্জ্বল স্ক্রিনেই সীমাবদ্ধ নেই, ছড়িয়ে গেছে জীবনের সর্বত্র। বিশ্বজুড়ে আলো জ্বালাতে যে বিদ্যুৎ খরচ হয়, তা মোট বিদ্যুৎ খরচের ৩০ শতাংশেরও বেশি। বৈশ্বিক গ্রিনহাউস নিঃসরণের অন্তত ৬ শতাংশ আসে এই বাতি থেকে।

আগের ইনক্যান্ডিসেন্ট বাতির চেয়ে বর্তমানের এলইডি বাতিতে ৮০ শতাংশ শক্তি কম খরচ হয় এবং এর আয়ুষ্কালও ২৫ গুণ বেশি।

এলইডি বাতির খরচ অনেক কম হওয়ায় এই বাতির সাহায্যে বিদ্যুতের আলোর সুবিধার বাইরে থাকা পৃথিবীর ১৫০ কোটি মানুষকে 'আলোকিত' করার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

এর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে ব্লু এলইডি (লাইট এমিটিং ডায়োড) বা নীল এলইডি আবিষ্কারের কারণে। আলোর প্রযুক্তিতে মৌলিক পরিবর্তনকারী আবিষ্কারটি করেছেন বিজ্ঞানী ইসামু আকাসাকি, হিরোশি আমানো এবং সুজি নাকামুরা।

পৃথিবী বদলে দেওয়া আবিষ্কারের স্বীকৃতিস্বরূপ এই ৩ বিজ্ঞানীকে ২০১৪ সালে পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

নোবেল অ্যাসেম্বলি তাদের ঘোষণায় বলেছিল, 'তাদের আবিষ্কার বৈপ্লবিক। বিংশ শতাব্দীকে আলোকিত করেছিল  ইনক্যান্ডিসেন্ট বাতি। একবিংশ শতাব্দীকে আলোকিত করবে এলইডি বাতি।'

৮০'র দশকের শেষ এবং ৯০'র দশকের শুরুতে এসে এই ৩ বিজ্ঞানী সেমিকন্ডাক্টর থেকে নীল এলইডি আবিষ্কারে সফলতা পান। তাদের আগে ৩০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা নীল এলইডি আবিষ্কারের চেষ্টা করছিলেন। আগে শুধু লাল ও সবুজ এলইডি ছিল। কিন্তু নীল এলইডির অনুপস্থিতির কারণে এই তিনের সমন্বয়ে সাদা আলো তৈরি সম্ভব হচ্ছিল না।

বিজ্ঞানী আকাসাকি ও আমানো জাপানের নাগোয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে এবং সাকামুরা নিচিয়া কেমিক্যালস নামের একটি প্রতিষ্ঠানে আলাদাভাবে নীল এলইডি আবিষ্কারের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। সেমিকন্ডাক্টর ব্যবহার করে সফল হওয়ার আগে তারা হাজারো বার পরীক্ষা করেছেন। ৯০'র দশকে এসে এই ৩ বিজ্ঞানী নীল এলইডিকে আরও কার্যকর করতে সক্ষম হন।

নোবেল অ্যাসেম্বলি তাদের ঘোষণায় বলে, এই ৩ বিজ্ঞানীর আবিষ্কার 'মানবজাতির সর্বাত্মক উপকারে আসবে এবং এই আবিষ্কার ইতোমধ্যে আমাদের ভবনকে আলোকিত করার পদ্ধতি, আমাদের ড্রয়িং রুমের স্ক্রিন, আমাদের টেবিলে ও পকেটে রাখা স্ক্রিনকে বদলে দিয়েছে, এমনকি এর সাহায্যে যেখানে বিদ্যুৎ পৌঁছানো দুষ্কর, সেই জায়গাকেও আলোকিত করার সম্ভাবনা আছে। এর ব্যবহার আলফ্রেড নোবেলকেও খুশি করতো।'

যে ৫ উপায়ে নীল এলইডি জীবন বদলে দিলো

উচ্চ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী সাদা আলোর এলইডি বাতি

নীল এলইডি আবিষ্কারের ফলেই সাদা এলইডি বাতি আবিষ্কার সম্ভব হয়েছে। কারণ সাদা আলো তৈরির জন্য লাল, সবুজ ও নীল এলইডির সমন্বয় দরকার হয়। আগে লাল ও সবুজ এলইডি থাকলেও নীল এলইডির কারণে সাদা আলো তৈরি সম্ভব হচ্ছিল না।

এলইডি বাতি অনেকাংশেই বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী। এলইডির আগে যে ফ্লোরোসেন্ট বাতি ছিল, সেটিতে টাংস্টেন তার থেকে আলো উৎপন্ন হতো। কিন্তু এই আলো উৎপাদন করতে অনেক বিদ্যুৎ তাপ হিসেবে অপচয় হতো।

বিশ্বের মোট বিদ্যুৎ খরচের ৪ ভাগের ১ ভাগই খরচ হয় আলো জ্বালাতে, তাই উচ্চ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী এলইডি বাতি বিশ্বের সম্পদ রক্ষায় বড় ভূমিকা রাখছে।

টিভি, কম্পিউটার ও মোবাইল স্ক্রিন

নীল এলইডির আবিষ্কার ছাড়া আজকের টিভি, কম্পিউটার ও মোবাইলের স্ক্রিনের কথা চিন্তা করা দুরূহ ছিল। মোবাইলে ফ্ল্যাশ লাইটেও এলইডি ব্যবহৃত হয়।

বিদ্যুৎ সুবিধার বাইরে যারা রয়েছেন, তাদের আলোর আওতায় আনা

গতানুগতিক বাতির চেয়ে এলইডি বাতি অনেক বেশি সাশ্রয়ী হওয়ায় এই বাতি জ্বালাতে অনেক কম বিদ্যুতের প্রয়োজন হয়। উন্নয়নশীল বিশ্বে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষ বিদ্যুতের সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এসব এলাকায় সরাসরি লাইনের বিদ্যুতের বদলে সোলার পাওয়ারের সাহায্যে এলইডি বাতি জ্বালানো অনেক সুবিধাজনক।

বিশ্বের অনেক অঞ্চলেই কেরোসিন বাতি ও মোমবাতির বদলে এখন সোলার এলইডি লাইট ব্যবহৃত হচ্ছে।

পানি জীবাণুমুক্ত করা

আলট্রা-ভায়োলেট এলইডি দূষিত পানিকে জীবাণুমুক্ত করার কাজে ব্যবহৃত হতে পারে। কারণ আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মি ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের ডিএনএ ধ্বংস করে। এই কাজটি সম্ভব হয়েছে নীল এলইডি আবিষ্কারের ফলে।

গ্রিনহাউস পদ্ধতিতে কৃষিকাজ

এলইডির রং যেহেতু কম্পিউটারের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব, তাই এর সাহায্যে আরও কার্যকরভাবে কৃষিকাজ করা যাবে। পৃথিবীর অনেক বিজ্ঞানীই এখন এলইডিকে কৃষিকাজে আরও কার্যকরভাবে কাজে লাগানোর উপায় খুঁজছেন।

নীল এলইডির বয়স মাত্র ৩০ বছর। এর মধ্যেই এটি আমাদের জীবনকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে। ভবিষ্যতে এই এলইডি আমাদের জীবনে আরও নানাভাবে প্রভাব রাখবে তাতে সন্দেহ নেই।

Comments

The Daily Star  | English

Govt plans to include private sector in US tariff talks

Bangladesh is currently reviewing the proposals and will send a response within the next couple of days, Commerce Secretary Mahbubur Rahman told The Daily Star yesterday over the phone.

14h ago