সান্তা ক্লজ কেন রাতে উপহার নিয়ে আসেন

সান্তা ক্লজ। ছবি: সংগৃহীত

প্রতি বছর ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস উৎসব পালিত হয়। কে কী উপহার পাবেন, উপহার কত সুন্দর হবে, এসব আগ্রহ নিয়েই ঘুমান প্রতিটি বিশ্বাসী মানুষ ৷ ক্রিসমাস ট্রি, কেক, র‍্যাপিংয়ে মোড়ানো গিফট বক্স, মোমবাতি এই উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ । এ ছাড়া সান্তা ক্লজ বড়দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। প্রতি বছর শিশুরা এই দিনে সান্তা ক্লজের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে।

লাল-সাদা পোশাক, ধবধবে সাদা চুল, বড় দাড়িওয়ালা একজন বয়স্ক মানুষ- কাঁধে উপহার ভর্তি ব্যাগ -এমন রূপ নিয়ে সান্তা ক্লজ প্রতি বছর শিশুদের উপহার দিয়ে এই উৎসবের আনন্দ দ্বিগুণ করেন।

প্রচলিত আছে, এই সান্তা ক্লজ বলা হয় সেন্ট নিকোলাসকে। তিনি ফাদার ক্রিসমাস নামেও পরিচিত। সেন্ট নিকোলাস তৃতীয় শতাব্দীতে যিশু খ্রিস্টের মৃত্যুর প্রায় ২৮০ বছর পরে তুর্কিস্তানে জন্মগ্রহণ করেন। শৈশবেই তার বাবা-মা মাকে হারান তিনি। প্রভু যীশুর ভক্তিতে মগ্ন নিকোলাস ছিলেন অত্যন্ত দয়ালু প্রকৃতির। শৈশবে তিনি পাননি কোনো সুখ স্বাচ্ছন্দ্য। তাই শিশুদের খুশি করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা করতেন। আর এই স্বভাবের কারণেই তিনি হয়ে উঠেছিলেন শিশুদের পছন্দের এবং প্রিয় চরিত্র।

বাবা-মা মারা যাওয়ার পর, নিকোলাস তাদের সম্পদ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করেছিলেন এবং সবসময় দরিদ্রদের সেবায় তৎপর ছিলেন। বড় হয়ে তিনি একজন পুরোহিত, তারপর একজন বিশপ হন এবং সাধু উপাধি পান। বলা হয়ে থাকে, বড়দিনে শিশুদের মধ্যে আনন্দ বিতরণ করতে তিনি রাতের অন্ধকারে তার বিশেষ পোশাক পরে উপহার দিতে যেতেন, যাতে কেউ তাকে চিনতে না পারে।

তার সম্পর্কে সবচেয়ে প্রচলিত ঘটনা, মাইকেল দ্য আর্কিম্যান্ড্রাইটসের 'লাইফ অব সেন্ট নিকোলাস'-এ বর্ণিত আছে। নিকোলাস একজন ধর্মপ্রাণ লোকের কথা শুনেছিলেন। যিনি একসময় ধনী ছিলেন কিন্তু, শয়তানের চক্রান্ত ও হিংসার কারণে তার সমস্ত অর্থ হারান। লোকটি তার ৩ কন্যার জন্য প্রয়োজন মতো যৌতুক বহন করতে পারেননি বলে তাদের বিয়ে আটকে ছিল। ফলে, তৎকালীন ধারা অনুযায়ী তাদের থাকার কথা অবিবাহিত এবং সম্ভাব্য কর্মসংস্থানের অভাবে তারা বাধ্য হতো পতিতা হতে। মেয়েদের এই দুর্দশার কথা শুনে নিকোলাস তাদের সাহায্য করার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু জনসমক্ষে তিনি ওই পরিবারকে সাহায্য করতে চাননি এবং দান গ্রহণের 'অপমান' থেকে বাঁচাতে তিনি রাতের আড়ালে ওই মেয়েদের বাড়িতে গিয়ে ঘরের জানলা দিয়ে সোনার মুদ্রায় ভরা একটি ব্যাগ ছুঁড়ে ফেলেন, যা দিয়ে সেই পিতা অবিলম্বে তার প্রথম মেয়ের জন্য বিয়ের ব্যবস্থা করেন। সেই  বিয়ের পর, নিকোলাস গভীর রাতে একই জানালা দিয়ে সোনার দ্বিতীয় ব্যাগটি ছুড়ে ফেলেন দ্বিতীয় কন্যার জন্য।

মাইকেল দ্য আর্কিমান্ড্রাইটের বিবরণ অনুসারে, দ্বিতীয় কন্যার বিয়ের পর তৃতীয় কন্যার ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা মাথায় রেখে তাদের পিতা রাত জেগে থাকেন এবং সফল হন। সেন্ট নিকোলাসকে ধরে ফেলেন আর তার সামনেই সেই বাবা হাঁটু গেড়ে বসে ধন্যবাদ জানান। তবে নিকোলাস চেয়েছিলেন সকলের আড়ালে নিঃস্বার্থভাবে দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে। তাই সাহায্যের কথা কাউকে জানাতে বারণ করেন। তবুও বিষয়টি গোপন থাকে না। ওই ঘটনার পর থেকে কেউ কোনো গোপন উপহার পেলেই মনে করতেন, বোধ হয় নিকোলাস দিয়েছেন।

ধীরে ধীরে নিকোলাসের এইরকম অনেক ঘটনা তুরস্ক পেরিয়ে ছড়িয়ে পরে নানা দিকে। পরে নিকোলাস হয়ে ওঠেন সেন্ট নিকোলাস বা ফাদার নিকোলাস।

কানাডার মুস্কোকা গ্রামকে বলা হয় সকলের প্রিয় সান্তা ক্লজের বাড়ি। সেখানে সান্তার নামে একটি মেইলিং পোস্ট তৈরি করা হয়। যেখানে আজও লাখ লাখ চিঠি পৌঁছায় এবং এই ডাকের কোডটি হলো, 'H0H0H0'। সেই থেকেই ধারণা করা হয়, সান্তা 'হোহোহো' করে হেসে উপহার দেবেন ২৪ ডিসেম্বর রাতে।

Comments

The Daily Star  | English
BNP demands national election by December 2025

2014, 2018, 2024 polls: BNP to sue former ECs, officials today

BNP is set to file a case against officials involved in the last three national elections with Sher-e-Bangla Nagar police today. The party will also lodge a formal complaint with the Election Commission in this regard, BNP leaders said yesterday.  

4h ago