জানা-অজানা

প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটা কি নিরাপদ

ছবি: সংগৃহীত

অতীতের প্রায় যেকোনো সময়ের তুলনায় মানুষ এখন আরও বেশি হাঁটার জন্য প্রতিনিয়ত তাগাদা পাচ্ছে। স্মার্টফোনে এখন স্টেপ কাউন্টার আছে, যেখানে প্রতিদিন কত কদম হাঁটলেন সেটা দেখা যায়।

বেশিক্ষণ বসে থাকলে হাঁটার তাগিদ দিয়ে নোটিফিকেশনও দেয় স্মার্টফোনগুলো। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই শোনা যায় সুস্থ থাকতে প্রতিদিন অন্তত ১০ হাজার কদম হাঁটতে হবে। এটা এখন বিশ্বে নতুন ফিটনেস লক্ষ্যমাত্রা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

১০ হাজার কদম হাঁটার ধারণা এলো কীভাবে

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ও'কনর হাসপাতালের বেরিয়াট্রিক এবং মেটাবলিক হেলথ সেন্টারের মেডিকেল ডিরেক্টর থমাস হিরাইয়ের মতে, প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটার এই ধারণা এসেছে ১৯৬৫ সালে জাপানে আবিষ্কৃত একটি পেডোমিটার থেকে। ওই যন্ত্রটির নাম দেওয়া হয়েছিল 'মানপো-কেই', যার অর্থ '১০ হাজার কদম মিটার'।

হিরাই বলেন, 'এই ধারণা প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল, কারণ ১০ হাজার সংখ্যাটি আকর্ষণীয়, সহজে মনে রাখার মতো এবং অনেকের জন্য এই মাইলফলক ছোঁয়াটা অসম্ভবও ছিল না।'

১০ হাজার সংখ্যাটি লিখতে যে জাপানি বর্ণটি ব্যবহৃত হয় সেটা দেখতে অনেকটা এমন যে, মনে হবে কেউ একজন হাঁটছেন। অনেকে মনে করেন, সেখান থেকেও এই ১০ হাজার কদম হাঁটার ধারণা আসতে পারে।

১০ হাজার কদম হাঁটলে কত ক্যালরি খরচ হয়

অধিকাংশ মানুষের ক্ষেত্রেই প্রতি ১ হাজার কদমে ৩০-৪০ ক্যালরি খরচ হয়। সে হিসাবে, ১০ হাজার কদম হাঁটলে ৩০০-৪০০ ক্যালরি খরচ হবে। যদিও এটি একটি সম্ভাব্য পরিমাপ মাত্র। প্রতি কদমে কত ক্যালরি খরচ হবে, সেটা ব্যক্তিভেদে ভিন্ন হবে।

ওজন, প্রতি কদমে অতিক্রান্ত দূরত্ব, কোন পরিবেশে হাঁটছেন এবং  ফিটনেস লেভেলের মতো কয়েকটি বিষয়ের ওপর নির্ভর করবে প্রতি কদমে কত ক্যালরি খরচ হবে।

ক্যালরি খরচের নিখুঁত হিসাব বের করার জন্য মেটাবলিক ইকুইভ্যালেন্ট বা এমইটি পদ্ধতির কথা উল্লেখ করেন হিরাই। কোনো ধরণের নড়াচড়া ছাড়া এক জায়গায় বসে থাকলে যে শক্তি খরচ হবে, সেটা হচ্ছে ১ এমইটি।

১ ঘণ্টায় সমতল পথে ৩ মাইল হাঁটলে সাড়ে ৩ এমইটি শক্তি খরচ হয়। কিন্তু একই দূরত্ব কোনো ঊর্ধ্বগামী পথে হাঁটলে খরচ হবে ৬ এমইটি।

১৫০ পাউন্ড বা ৬৮ কেজি ওজনের কেউ যদি সমতলে ঘণ্টায় ৩ মাইল গতিতে হাঁটেন, তাহলে প্রতি মিনিটে তার সর্বোচ্চ ৪ ক্যালরি খরচ হতে পারে। ঘণ্টায় ৩ মাইল গতিতে হাঁটলে ১০ হাজার কদম (আনুমানিক ৫ মাইল) পাড়ি দিতে সময় লাগতে পারে ১০০ মিনিট। তাহলে তার ৪০০ ক্যালরি খরচ হতে পারে।

অনেকেই স্মার্টফোন বা স্মার্টওয়াচের মাধ্যমে ক্যালরি খরচের হিসাব রাখেন। তবে এসব ডিভাইসের ওপর পুরোপুরি নির্ভর না করার পরামর্শ দিয়েছেন ডাক্তার হিরাই। কারণ এসব ডিভাইসে ক্যালরি খরচের যথার্থ হিসাব সবসময় পাওয়া যায় না।

ওজন কি প্রত্যাশিতভাবে কমে

ওজন কমানোর জন্য আপনি যত ক্যালরি গ্রহণ করছেন, তারচেয়ে বেশি খরচ করতে হবে। সপ্তাহে ১ পাউন্ড ওজন কমানোর জন্য এই ক্যালরি গ্রহণ ও খরচের তারতম্য দৈনিক অন্তত ৫০০ হওয়া প্রয়োজন। যারা ওজন কমাতে চান এবং সেটি ধরে রাখতে চান, তাদের সপ্তাহে অন্তত ১৫০-২০০ মিনিট ব্যায়াম করা এবং প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য পরিমাণ হাঁটা প্রয়োজন। নিয়মিত স্বাস্থ্যকর খাবার খেয়েও ওজন কমানো সম্ভব। ব্যায়ামের সাহায্যে ওজন কমানোটা আরও বেশি কার্যকরী হয়, যদি সহায়ক কোনো ডায়েট পরিকল্পনা থাকে।

প্রতিদিন এত বেশি হাঁটা কি নিরাপদ

হাঁটাকে সবচেয়ে সহজ ও নিরাপদ ব্যায়াম হিসেবে মনে করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করেই দিনে ১০ হাজার কদম হাঁটা অনিরাপদ হতেও পারে। প্রতিদিন একটু একটু করে হাঁটার পরিমাণ বাড়ানো এবং যত বেশি সম্ভব সক্রিয় থাকলে অনেক উপকার পাওয়া সম্ভব। কিন্তু একই সঙ্গে আমাদেরকে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে বেশি হাঁটতে গিয়ে যেন শরীরের কোনো ক্ষতি না করি।

যাদের ওজন অনেক বেশি, কিংবা অনেক বয়স্ক, কিংবা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা আছে, তাদের বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ডাক্তার হিরাইয়ের পরামর্শ হচ্ছে, লক্ষ্যে পৌঁছানোর আগ পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহে হাঁটার পরিমাণ ১ হাজার কদম করে বাড়ানো যেতে পারে।

যিনি প্রতিনিয়তই ১০ হাজার কদমের মাইলফলক অতিক্রম করে ফেলছেন, তিনি জগিং বা সাঁতারের মতো অধিক এমইটির কার্যক্রম করতে পারেন।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন বেশি হাঁটলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে। যদিও, ওই গবেষণা অনুসারে বেশি হাঁটার সুবিধা সর্বোচ্চ সাড়ে ৭ হাজার কদম পর্যন্তই পাওয়া যায়। কেউ যদি ১০ হাজার কদমও হাঁটেন, তিনি বাড়তি কোনো উপকার পাবেন না।

প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটার ধারণা এসেছে বিপণন কৌশল থেকে, কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা থেকে নয়। যদিও বিজ্ঞানীরা বলেন, শারীরিকভাবে যত সক্রিয় থাকা যাবে (হাঁটা দিয়ে যা পরিমাপ করা সম্ভব), স্বাস্থ্যের জন্য সেটি তত ভালো।

প্রতিদিন ১০ হাজার কদম হাঁটা ভালো এবং এটাকে অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে তা আরও ভালো। কিন্তু হিরানির মতে বাস্তবে কত কদম হাঁটলে লক্ষ্য অর্জিত হবে, এমন কোনো 'ম্যাজিক নম্বর' নেই।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার

Comments