বিপ্লব উদ্যান: এক সময়ের নয়নাভিরাম পার্ক এখন ব্যবসার কেন্দ্র

চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পার্ক বিপ্লব উদ্যান
চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পার্ক বিপ্লব উদ্যান। ছবি: অরুণ বিকাশ দে/ স্টার

চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত পার্ক বিপ্লব উদ্যান এখন শুধু একটি ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এক সময় এলাকাবাসীদের অবসর যাপনের জন্য অপরূপ সুন্দর ও নয়নাভিরাম এই পার্কের কোনো অস্তিত্ব এখন আর সেখানে নেই বললেই চলে। 

সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা গেছে, পার্কের জমিতে বেশ কয়েকটি খাবারের দোকান জমজমাট ব্যবসা করে যাচ্ছে।  

প্রায় ছয় বছর আগে এই পার্কের আধুনিকায়ন প্রকল্প শুরু হয়। তবে এলাকাবাসী ও পরিবেশবাদীরা দাবি করেন,  আধুনিকায়নের নামে কার্যত পার্কটিকে ধ্বংস করা হয়েছে।

সবুজ পার্কটি এখন একটি  খোলা মাঠে পরিণত হয়েছে। সেখানে এখন পুরোদমে ব্যবসায়িক কার্যক্রম চলছে।

বিপ্লব উদ্যান একসময় নগরবাসীর কাছে অন্যতম আকর্ষণীয় জায়গা ছিল। ১৯৭৯ সালে প্রায় দুই একর জায়গার ওপর প্রতিষ্ঠিত পার্কটি নগরীর কেন্দ্রস্থলে ষোলশহরের দুই নম্বর গেট মোড়ে অবস্থিত।

নগরীর মানুষ উদ্যানে ছুটে আসতেন বিশুদ্ধ বাতাসে শ্বাস নেওয়ার জন্য।

তখন পার্কটিতে একটি বাগান, মাছে ভরা একটি ছোট চৌবাচ্চা, দর্শনার্থীদের বসার জন্য বেঞ্চ এবং পার্কটিকে ঘিরে একটি প্রশস্ত হাঁটার পথ ছিল। 

তবে বিগত ছয় বছরের মধ্যে পার্কের এই সবুজ সৌন্দর্য ও সতেজতা পুরোপুরি বিলীন হয়ে গেছে। বরং এটি ফুড কোর্ট বা খাবারের ব্যবসার প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যান। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যান। ছবি: স্টার

সম্প্রতি সরেজমিন পরিদর্শনের সময় দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদক দেখতে পান পার্কটি এখন একটি খোলা মাঠে পরিণত হয়েছে। এর এক পাশে প্রায় ২০টি খাবারের দোকান রয়েছে।

তবে ফুটপাত সংলগ্ন একটি বেঞ্চে হাতে গোনা কয়েকজন দর্শনার্থীকে বসে থাকতে দেখা যায়।

তাদের একজন, কসমোপলিটন এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ ইসমাইল, বলেন, 'চট্টগ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি পার্ক আছে যেখানে জনমানুষের অবাধ প্রবেশাধিকার রয়েছে। বিপ্লব উদ্যান তার মধ্যে একটি।'

'কর্তৃপক্ষ এটাকে নিয়ে কী করতে চাচ্ছে আমি বুঝতে পারছি না। আধুনিকায়নের নামে পার্কটিকে ধ্বংস করা হয়েছে', যোগ করেন ইসমাইল।

সূত্রমতে, পার্কটির আধুনিকীকরণ শুরু হয় ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর। এলাকাবাসীর ভাষায়, 'দুর্ভাগ্যজনকভাবে', পার্ক কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) এটির উন্নয়নের জন্য দুটি বেসরকারি সংস্থার সাথে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের আমলে এই চুক্তি হয়।

চসিক সূত্র জানায়, এই দুই সংস্থা সেখানে দ্রুত দোকানসহ বাণিজ্যিক স্থাপনা তৈরি করে এবং মোটা অঙ্কের অগ্রিম ভাড়া পরিশোধ করে। তবে আজ অবধি পার্কের প্রকৃত উন্নয়ন কাজ শুরু হয়নি বলে জানান তারা।

গত বছরের ২২ আগস্ট চসিক পুরনো চুক্তি সংশোধন করে এবং পার্কের আগের গৌরব ফিরিয়ে আনার জন্য নতুন চুক্তি স্বাক্ষর করে।

চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যান। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যান। ছবি: সংগৃহীত

সে সময় সুশীল সমাজ ও অধিকার কর্মীরা আধুনিকায়নের নামে পার্কটির বাণিজ্যিকিকরণের বিরুদ্ধে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেন। কিন্তু তাদের উদ্বেগ উপেক্ষা করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পার্কে কাঠামো নির্মাণ শুরু করে। 

সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর অধীনে চসিক কর্তৃপক্ষ পরিবেশকর্মী ও অধিকারকর্মীদের এসব দাবিতে কর্ণপাত করেননি।

গত ১ অক্টোবর চট্টগ্রামের নির্বাচন ট্রাইব্যুনাল এক আদেশে বিএনপির সাবেক মহানগর সভাপতি শাহাদাত হোসেনকে চট্টগ্রামের মেয়র ঘোষণা করেন।

৫ নভেম্বর দায়িত্ব নেওয়ার পর শাহাদাত ঘোষণা করেন যে এই পার্কে আর কোনো বাণিজ্যিক স্থাপনা নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হবে না। এরপর চসিক কর্তৃপক্ষ সেখানে নতুন করে নির্মাণাধীন স্থাপনাগুলো উচ্ছেদ করে।

এক সময়ের সবুজে ঘেরা অপরূপ পার্কটি এখন চারিদিকে উন্মুক্ত একটি ধু ধু মাঠ।

চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যান। ছবি: সংগৃহীত
চট্টগ্রামের বিপ্লব উদ্যান। ছবি: স্টার

তবে পার্কের জায়গায় ২০১৯ সালে নির্মিত খাবারের দোকানগুলোর জমজমাট ব্যবসা এখনো চলমান।

যোগাযোগ করা হলে, শাহাদাত হোসেন এখানে বন্দর নগরবাসীদের জন্য একটি সবুজ পার্ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন। চসিক মেয়র বলেন, 'আমরা এটা নিয়ে কাজ করছি।'

Comments

The Daily Star  | English

Depositors leave troubled banks for stronger rivals

Depositors, in times of financial uncertainty, usually move their money away from troubled banks to institutions with stronger balance sheets. That is exactly what unfolded in 2024, when 11 banks collectively lost Tk 23,700 crore in deposits.

9h ago