‘গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে’

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখছেন মো. রেজাউল করিম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্য সিন্ডিকেট করে মানুষের খাদ্য নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে দিচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র বীরমুক্তিযোদ্ধা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী।

সোমবার কিং অব চিটাগাংয়ের সম্মেলন কক্ষে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম ও ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের উদ্যোগে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।

রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, 'মানুষরূপী এসব সন্ত্রাসীদেরকে সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে বয়কটে সংঘবদ্ধ হওয়া দরকার। মানুষ সচেতন হলে এভাবে জনগণের পকেট কেটে, আবার তারা দানবীর সাজার জন্য সমাজের মূল স্রোতধারায় চলে আসা বন্ধ হবে। রাজনৈতিক দল, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদ্রাসায় অনুদান দিয়ে বাহবা কুড়ায়। বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও মিডিয়াগুলো তাকে আবার সাদা মনের মানুষ বলে প্রচার করেন। অথচ তার আয়ের উৎস কী, কেউ জানার চেষ্টা করেও না। এ কারণে তারা একবার জনগণের পকেট কাটার জন্য খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন ব্যবসায় লগ্নি করেন। আবার দলীয় এমপি, নেতা হওয়ার জন্য আরেকবার লগ্নি করেন। তাদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় না দিলে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা এভাবে বিষফোড়া হয়ে জাতির জন্য হুমকি হতে পারত না। তাই এখন সময় এসেছে জনগণকে সংগঠিত হয়ে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ গড়ে তোলার।'

বিশ্ব খাদ্য দিবসের প্রতিপাদ্য 'পানিই জীবন, পানিই খাদ্য, কাউকে পেছনে ফেলে নয়' বিষয়ে মূল প্রবন্ধ পাঠ করেন ক্যাব যুব গ্রুপের সহ-সভাপতি সাকিলুর রহমান ও প্রচার সম্পাদক এমদাদুল ইসলাম।

মূল প্রবন্ধে বলা হয়, একবিংশ শতকের সবচেয়ে বড় দুটো চ্যালেঞ্জ খাদ্য নিরাপত্তা ও জলবায়ু পরিবর্তন। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মতে, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বের জনসংখ্যা নয় বিলিয়নে পৌঁছাবে এবং খাদ্যের প্রয়োজনীয়তা ৮৫ শতাংশ বাড়বে। খরা, ভারী বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রার তারতম্য, লবণাক্ততা ও কীটপতঙ্গের আক্রমণের কারণে কৃষি খাত হুমকির সম্মুখীন। প্রতি ডিগ্রি বৈশ্বিক গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির জন্য বিশ্বজুড়ে প্রধান খাদ্যশস্য যেমন: গম, চাল, ভুট্টা ও সয়াবিনের উৎপাদন যথাক্রমে ৬ শতাংশ তিন দশমিক দুই শতাংশ, সাত দশমিক চার শতাংশ ও তিন দশমিক এক শতাংশ কমার সম্ভাবনা রয়েছে।

বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লবণাক্ততাজনিত সমস্যা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এই সমস্যা আরও তীব্র আকার ধারণ করছে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও লবণাক্ততা একটি প্রধান প্রাকৃতিক সমস্যা, যা ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ফলে বিগত ২৫ বছরে লবণাক্ততা এক থেকে ৩৩ শতাংশ বেড়েছে।

কৃষি ও খাদ্য সংস্থার ২০২২ সালের গবেষণায় বৈশ্বিক খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টির পরিস্থিতির চিত্রে প্রতীয়মান হয়, প্রায় ৩১০ কোটি মানুষের স্বাস্থ্যকর খাদ্য কেনার সামর্থ্য নেই, আবার যেখানে বিশ্বের জনসংখ্যার ৩০ দশমিক চার শতাংশ, অর্থাৎ ২৪০ কোটি মানুষ মাঝারি বা তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতার সম্মুখীন হয়েছে। ৭৫টি দেশের মানবিক সংস্থা ৭৭তম জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের কাছে দেওয়া চিঠিতে অনুমান করেছে যে, প্রতি চার সেকেন্ডে একজন মানুষ ক্ষুধায় মারা যাচ্ছে। খাদ্য নিরাপত্তার ইস্যুটি শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, সারা বিশ্বের জন্যই উদ্বেগ হিসেবে রয়েছে।

২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী কোভিড-১৯ এর আঘাত, জলবায়ু পরিবর্তনের নেতিবাচক প্রভাব ও চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে খাদ্যসহ সব নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি হয়েছে। এরপর যুক্ত হয়েছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীদের অতি মুনাফা লাভের প্রতিযোগিতা। দেশে খাদ্য সম্পর্কিত মূল্যস্ফীতি পার্শ্ববর্তী দেশগুলো তুলনায় অনেক বেশি। যার ফলে ঝুঁকির মুখে পড়েছে প্রান্তিক ও দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বিশেষত নারী ও শিশু।

এ অবস্থায় সংকটকালীন খাদ্য পরিস্থিতি মোকাবিলায় টেকসই কৃষি খাদ্যব্যবস্থা ও খাদ্যের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য টেকসই পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচিগুলোর জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতা বাড়ানো এবং সেবাগ্রহিতাদের সংকট উত্তরণে একটি সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনাসহ শক্তিশালী মনিটরিং ও মূল্যায়ন পদ্ধতি নিশ্চিত করা, প্রান্তিক, শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষ যাতে খেয়ে-পরে বাঁচতে পারে, সেজন্য চাল, ডাল, আটাসহ সব নিত্যপণ্যের মূল্য কমানোর সুনির্দিষ্ট উদ্যোগ গ্রহণ করা, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের সুরক্ষার জন্য জলবায়ু সহনশীল, পরিবেশবান্ধব কৃষি ব্যবস্থা ও পারিবারিক কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অধিকারকে সমুন্নত রাখা, নিত্যপণ্য মূল্য স্থিতিশীল রাখতে উৎপাদক ও আমদানিকারক, পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে কঠোরভাবে সমন্বিত বাজার তদারকি নিশ্চিত করা, নিত্যপণ্যমূল্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে 'মূল্য কমিশন' গঠনের জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করা, কৃষি পণ্যের বাজারে মধ্যস্বত্বভোগীদের কারসাজি বন্ধ ও কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা, পানির অতি বানিজ্যিকীকরণ রোধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা, খাদ্যপণ্যে করপোরেট গ্রুপের আগ্রাসী তৎপরতা বন্ধে ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষক ও উৎপাদকদের সরকারি প্রণোদনা ও সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করা।

ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এস এম নাজের হোসাইনের সভাপতিত্বে ও ক্যাব বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মোহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোহাম্মদ ফয়েজউল্যাহ, জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক সুমাইয়া নাজনীন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি এম নাসিরুল হক, মুক্তিযোদ্ধা ও সরকারি মহসিন কলেজের সাবেক অধ্যাপক ইদ্রিস আলী, ন্যাপ কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিটুল দাস গুপ্ত, ক্যাব চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি জেসমিন সুলতানা পারু, সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, ক্যাব পাঁচলইশের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম জাহাঙ্গীর, ক্যাব যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সভাপতি চৌধুরী কেএনএম রিয়াদ, যুব গ্রুপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি আবু হানিফ নোমান প্রমুখ।

Comments

The Daily Star  | English

Dhanmondi 32 ripped apart

Protesters last night torched and tore down parts of the Dhanmondi-32 residence of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman, after calls in social media for demolishing what they said was a “pilgrimage site of fascism”.

5h ago