বন্যায় ওয়াসার উৎপাদন কমায় সুপেয় পানির সংকটে চট্টগ্রামবাসী

পানি পরিশোধন প্ল্যান্ট। ছবি: সংগৃহীত

সপ্তাহব্যাপী টানা বর্ষণ ও বন্যার পর কর্ণফুলী নদীতে অতিরিক্ত কাদা জমায় চট্টগ্রাম ওয়াসার উৎপাদন কমে গেছে। এতে সুপেয় পানির সংকটে পড়েছেন বন্দরনগরীর বাসিন্দারা।

নগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহর, চকবাজার, কাতালগঞ্জ, দেওয়ান বাজার ও মুরাদপুর এলাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় ওয়াসা থেকে নিয়মিত পানি পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।

এ অবস্থায় এসব এলাকার বাসিন্দাদের ব্যবহার ও পানের জন্য বাজার থেকে জারের পানি বা বোতলজাত পানি কিনতে হচ্ছে।

আগ্রাবাদ মুহুরী পাড়া এলাকার বাসিন্দা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) সহযোগী অধ্যাপক আমির উদ্দিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওয়াসা থেকে নিয়মিত পানি পাওয়া যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে পানি আসে কিন্তু চাপ খুবই কম থাকে।'

তিনি বলেন, 'ওয়াসার সরবরাহ করা পানিতে কাদা ও শ্যাওলা পাওয়া যাচ্ছে। তাই আমরা বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে জারের পানি কিনতে বাধ্য হচ্ছি।'

কাতালগঞ্জ এলাকার বাসিন্দা তাপস বড়ুয়া বলেন, 'এর আগে অনাবৃষ্টির কারণে ওয়াসার পানি লবণাক্ত ছিল। এখন টানা বৃষ্টির পর আবারও দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের দূর থেকে নলকূপের পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে।'

চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্মকর্তারা জানান, গত সপ্তাহের প্রবল বর্ষণে পাহাড় ও উজান থেকে বিপুল পরিমাণ মাটি নদীতে চলে আসে। এ কারণে কর্ণফুলী নদীতে থেকে পানি সংগ্রহ করে ওয়াসার প্ল্যান্টে পানি পুরোপুরি পরিশোধন করা যাচ্ছে না।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার প্রধান প্রকৌশলী মাকসুদ-উল-আলম ডেইলি স্টারকে জানান, গত সপ্তাহে কর্ণফুলী নদীতে অতিরিক্ত কাদা থাকায় দুটি প্ল্যান্টে পানির উৎপাদন প্রায় ১০ কোটি লিটার কমে গেছে।

প্ল্যান্টের মাধ্যমে নদী থেকে পানি সংগ্রহ করে পরিশোধনের পর সরবরাহ করা হয়।

দুই প্ল্যান্টের দৈনিক মোট উৎপাদন ক্ষমতা ২৪ ঘণ্টায় ২৮ দশমিক ৬ কোটি লিটার। কিন্তু গত সপ্তাহে মোট দৈনিক উৎপাদন প্রায় ১৮ কোটি লিটার হয়েছে বলে জানান ওয়াসা কর্মকর্তা মাকসুদ।

তিনি বলেন, 'এ সমস্যা সমাধান করা হচ্ছে এবং এখন উৎপাদন ২২ কোটি লিটার হয়েছে।'

আগামী সপ্তাহের মধ্যে এ সংকট সম্পূর্ণ সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম ফজলুল্লাহ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চট্টগ্রাম ওয়াসার প্ল্যান্টগুলো সাধারণত ৫০০ এনটিইউ (নেফেলোমেট্রিক টার্বিডিটি ইউনিট) পর্যন্ত পানি বিশুদ্ধ করতে পারে। গত সপ্তাহের ভারী বৃষ্টি ও বন্যার সময় দেখা গেছে যে কর্ণফুলী নদীর পানিতে এত বেশি কাদা  ছিল যে তা ১৩০০ এনটিইউ পর্যন্ত পরিমাপ করা হয়েছিল।'

তিনি বলেন, 'এ অবস্থায় আমরা প্ল্যান্টের পূর্ণ সক্ষমতা নিয়ে পানি ফিল্টার করতে গেলে প্ল্যান্ট হঠাৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি ছিল।'

'আশা করছি আগামী সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে,' বলেন তিনি।

যোগাযোগ করা হলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের বিভাগের অধ্যাপক ড. অলক পল বলেন, 'পাহাড়ে নির্বিচারে গাছ কাটায় ভারী বর্ষণে পাহাড় ও উজান থেকে মাটি বৃষ্টির পানিতে মিশে নদীতে চলে আসছে। এতে নদীর পানিতে কাদার ঘনত্ব বেড়েছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Commercial banks’ lending to govt jumps 60%

With the central bank halting direct financing by printing new notes, the government also has no option but to turn to commercial banks to meet its fiscal needs.

10h ago