প্রবল বর্ষণে ৪ দিন পানিবন্দি চট্টগ্রামের নিচু এলাকার মানুষ

হালিশহর এলাকার আজকের চিত্র। ছবি: স্টার

চট্টগ্রামে বৃহস্পতিবার রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টি আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত অব্যাহত থাকায় নগরীর বেশিরভাগ নিচু এলাকা এখনো পানির নিচে।

নগরীর চকবাজার, বাকলিয়া, হালিশহর, বহদ্দারহাট, বাদুরতলা, কাপাসগোলা, ষোলশহর, শুলকবহর, মুরাদপুর, কাতালগঞ্জ, দেওয়ান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাও, বিবিরহাটসহ নিচু এলাকাগুলো ৪ দিন ধরে হাঁটু থেকে কোমর সমান পানির নিচে তলিয়ে যায়।

চট্টগ্রাম আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ চৌধুরী দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় ২৫০ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে।

আজ সরেজমিনে দেখা যায়, বাকলিয়া রাহাত্তার পুল এলাকার ভবনগুলোর নিচতলায় পানি ঢুকেছে। ঘরের লোকজন একই ভবনের উপরের তলায় আশ্রয় নিয়েছেন।

ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

বাহাত্তর পুল উজির আলী শাহ লেনের বাসিন্দা শাহেদুল আজম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ঘরে প্রথম পানি ঢুকে বৃহস্পতিবার রাতে। তখন জিনিসপত্র যা পেরেছি নিয়ে বাসার সবাই ২ তলার আরেক ভাড়াটিয়ার বাসায় আশ্রয় নিই। ভেবেছিলাম, সকালে বৃষ্টি কমলে পানি সেচে আবার ঘরে ঢুকব। পরদিন সকালে একটু কমলেও ঘণ্টাখানেক পরেই আবারও মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। তারপর থেকে ৪ দিন পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে তো হচ্ছেই, থামার কোনো লক্ষণ নেই। ৪ দিন পর্যন্ত পরিবার নিয়ে সিঁড়িতে দিনরাত কাটাচ্ছি। নারীরা ২ তলার আরেক বাসায় আশ্রয় নিয়েছে।'

একই চিত্র দেখা যায় নগরীর বেশিরভাগ নিচু এলাকায়। লোকজন ৪ দিন ধরে পানিবন্দি হয়ে আছেন। অনেকেই ঘরবাড়ি তালাবন্ধ করে আত্মীয়-স্বজনের বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। চকবাজার চক সুপার মার্কেটের নিচতলা ডুবে আছে ৪ দিন ধরে। দোকানদাররা জানান, ভেতরে মূল্যবান সব জিনিস পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।

দোকানদার গিয়াস উদ্দিন বলেন, 'কত আর পানি সেচব? একবার সেচে পানি বের করি তো কিছুক্ষণ পর আবার ভারী বৃষ্টিতে দোকানে পানি ঢুকে পড়ে। আমার প্রায় ২ লাখ টাকার জিনিস নষ্ট হয়ে গেছে।'

ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

আজ সকালে নগরীর বাকলিয়া ডিসি রোড এলাকায় মো. আরিফকে দেখা যায় বাসা থেকে পানি সেচে বের করছেন।

আরিফ বলেন, 'আমাদের এই অবস্থার জন্য কাকে দুষবো বুঝতে পারছি না। সরকারি সেবা সংস্থাগুলো কেউ তো দায় নিতে চায় না। আসলে দোষ আমাদের ভাগ্যের।'

জলাবদ্ধতার কারণে ৩ দিন ধরে চকবাজার কাঁচাবাজারের একটি অংশ বন্ধ রয়েছে, ফলে এলাকার লোকজন বাজার করতেও পারছেন না।

খাল, নালাগুলো নিয়মিত পরিষ্কার না করার জন্য কাপাসগোলা এলাকার বাসিন্দা নুরুন্নবী চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে দায়ী করেন।

তবে চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী ডেইলি স্টারের কাছে দাবি করেন, চসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নিয়মিতই নর্দমা পরিষ্কার করেন। কিন্তু কিছু দায়িত্বজ্ঞানহীন লোকজন খাল, নালায় পলিথিন ও প্লাস্টিকের আবর্জনা ফেলে পানি নিষ্কাশনে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে।

তিনি বলেন, 'চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে জলাবদ্ধতা নিরসনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। ৩৬টি খাল থেকে সাড়ে ৯ লাখ কিউবিক মিটার মাটি তোলার কথা ছিল তাদের। কিন্তু বাস্তবে গত ৫ বছরে তারা এর ৪ ভাগের এক ভাগ মাটিও তোলেনি। খালগুলো সব ভরাট থাকায় ভারী বর্ষণের কারণে জমে যাওয়া অতিরিক্ত পানি ধারণ করতে পারছে না৷'

ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

মেয়র আরও বলেন, 'বেশ কয়েকটি খালের মুখে ২০ থেকে ২৫ ফুট রেগুলেটর বসানো হয়েছে, যা অনেক ছোট। ১০০ ফুট খালের মুখে ২০ ফুট রেগুলেটর বসালে কী লাভ? এতে তো পানির প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে।'

জানতে চাইলে সিডিএ মেগা প্রকল্পের পরিচালক লেফটেনেন্ট কর্নেল শাহ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চসিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা নর্দমাগুলো ঠিকমতো পরিষ্কার করে না বলে পানি দ্রুত নেমে যেতে পারছে না। তাদের প্রকল্পের কিছু সুফল ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকার জনগণ পেতে শুরু করেছে।'

Comments

The Daily Star  | English

Advisory council set to hold emergency meeting this evening

The meeting will be held tonight at 8:00pm at the State Guest House, Jamuna

2h ago