চসিক মেয়র রেজাউলের ২ বছর

৩৭ প্রতিশ্রুতির কয়টি পূরণ হলো

চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী
চসিক মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তার অধিকাংশ অগ্রাধিকারমূলক অঙ্গীকার এখনো পূরণ হয়নি।

তবে মেয়র রেজাউল বলছেন, চসিকের সম্প্রতি নেওয়া আড়াই হাজার কোটি টাকার মেগা প্রকল্প আগামী দেড় বছরে বন্দরনগরীর চেহারা পাল্টে দেবে।

২০২১ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি মেয়রের দায়িত্ব গ্রহণ করেন রেজাউল করিম চৌধুরী।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত রেজাউল তার নির্বাচনী ইশতেহারে ৩৭টি অঙ্গীকার করেছিলেন। মেয়র নির্বাচিত হলে এসব অঙ্গীকার পূরণ করবেন বলেছিলেন। 

তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মধ্যে ছিল জলাবদ্ধতা ও যানজট নিরসন, মশক নিধন, খাল, নালা ও ফুটপাত থেকে অবৈধ দখল উচ্ছেদ, আবর্জনা ব্যবস্থাপনা এবং স্বাস্থ্য সেবার উন্নতি এবং রাস্তার জন্য পর্যাপ্ত এলইডি লাইট নিশ্চিত করা।

তবে তার মেয়াদের দুই বছরেও মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পাননি নগরবাসী। বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের অভিযোগ, চসিক কর্মীরা নিয়মিত খাল-নালা পরিষ্কার না করায়, এগুলো মশার প্রজননের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে।

চকবাজার ফুলতলা এলাকার বাসিন্দা রিপন বড়ুয়া দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চসিক কর্মীরা চকবাজার এলাকার চাক্তাই খালটি নিয়মিত পরিষ্কার  না করায়, এটি মশার আবাসস্থলে পরিণত হয়েছে। তাই আমরা সারা বছরই মশার উপদ্রবে ভুগছি।'

এছাড়া মশা নিধনের ওষুধ কেনায় অনিয়মের অভিযোগে ৯ ফেব্রুয়ারি  চসিক কার্যালয়ে অভিযান চালায় দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি দল।

যোগাযোগ করা হলে অভিযানের নেতৃত্বদানকারী দুদক চট্টগ্রাম অঞ্চলের সহকারী পরিচালক এমরান হোসেন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তদন্তের সময় জানা গেছে যে চসিক কর্তৃপক্ষ বেঙ্গল মার্ক ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি কোম্পানির কাছ থেকে ডিসেম্বর ২০২১ এবং অক্টোবর ২০২২ সময়ের  মধ্যে ১৬ লটে ৭৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকার মশার ওষুধ কেনে।'

উন্মুক্ত টেন্ডার পদ্ধতিতে না গিয়ে মশা নিরোধক সরাসরি একটিমাত্র কোম্পানির কাছ থেকে কেনা হয়েছিল বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'নিয়ম এড়িয়ে একই কোম্পানিকে সরাসরি চুক্তি দেওয়ার জন্য ছোট ছোট করে ১৬টি লট তৈরি করা হয়েছিল।'

এমরান বলেন, প্রাথমিকভাবে এ অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

নির্বাচনী অঙ্গীকারে রেজাউল বলেছিলেন, তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স এমনভাবে ঠিক করবেন যেন বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়া কেউই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। 

তবে নির্বাচিত হওয়ার পর রেজাউল আগের মেয়রকে অনুসরণ করে ভাড়া অনুযায়ী হোল্ডিং ট্যাক্স আদায় শুরু করেন।

জানা গেছে, ২০১৭ সালে সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন গৃহকর পুনঃনির্ধারণের উদ্যোগ নেন। বিষয়টিকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে চট্টগ্রাম করদাতা সুরক্ষা পরিষদ এটি বন্ধে আন্দোলন শুরু করে।

আন্দোলন বেগবান হলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর ওই উদ্যোগ স্থগিত করে।

চসিক সূত্র জানায়, গত জুলাই মাসে বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয় ওই স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে।

তখন আবারও আন্দোলন শুরু করে করদাতা সুরক্ষা পরিষদ। 

যোগাযোগ করা হলে করদাতা সুরক্ষা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আমির উদ্দিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'নতুন পদ্ধতিতে হোল্ডিং ট্যাক্স দিতে হলে বাড়ির মালিকদের দ্বৈত কর দিতে হবে। আমরা আয়কর দেই এবং বাড়ি ভাড়া থেকে উপার্জনকে মোট আয়ের মধ্যে গণনা করি। এখন, যদি আমাদের বাড়ি ভাড়ার ওপর কর দিতে হয় তবে একই আয়ের জন্য আমাদের দ্বৈত কর দিতে হবে।'

তিনি বলেন, 'মেয়র তার নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তিনি হোল্ডিং ট্যাক্স নির্ধারণ করবেন যেন বাড়ির মালিক  বা ভাড়াটিয়া কেউই ক্ষতিগ্রস্ত না হন। কিন্তু এখন তিনি সেই প্রতিশ্রুতি ভুলে গেছেন।'

রেজাউল তার নির্বাচনী ইশতেহারে নগরীর খালগুলো থেকে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদের উদ্যোগ নেওয়ার কথা বললেও নাগরিকদের মতে এখনো তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।

মেয়র পদে রেজাউলের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডা. শাহাদাত হোসেন। যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'চসিকের কাজকর্মে কোনো পরিকল্পনা দেখতে পাইনি। মেয়র তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণে যথাযথ উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়েছেন।'

শাহাদাত বলেন, 'একসময় এই নগর একটি পরিচ্ছন্ন শহর ছিল। কিন্তু এখন এটি জঙ্গল-আবর্জনার নগরীতে পরিণত হয়েছে। বর্তমান মেয়র দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোর টু ডোর বর্জ্য সংগ্রহ কার্যক্রমও গতি হারিয়েছে।'

তিনি বলেন, 'মানুষের দুর্ভোগ বহুগুণে বেড়েছে। শুধু একটি উদাহরণ আমি বলব, মশার উপদ্রব। মশার উপদ্রবে মানুষ ঘরে কিংবা বাইরে কোথাও থাকতে পারছে না।'

'চট্টগ্রামে গত বছর ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা গেছে,' যোগ করেন তিনি।

তবে চসিক মেয়র রেজাউল করিমের দাবি, গত দুই বছরের কর্মকাণ্ডে তিনি সফলতার পরিচয় দিয়েছেন।

ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হয়েছে এবং শহরের সড়কে শৃঙ্খলা ফিরে এসেছে। শহরের বেশিরভাগ রাস্তা এখন ভালো এবং আমরা শহরের রাস্তাগুলোকে সম্পূর্ণভাবে আলোকায়িত করার জন্য কাজ করছি এবং সিস্টেমটি ডিজিটালভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হবে।'

তিনি আরও বলেন, 'চসিক আড়াই হাজার কোটি টাকার একটি মেগা প্রকল্প শুরু করেছে এবং আগামী দেড় বছরে নগরীর চেহারা পাল্টে যাবে।'

 

Comments

The Daily Star  | English

Audits expose hidden bad loans at 6 Islamic banks

The reviews, initiated in January with backing from the ADB, expose deep-seated financial mismanagement at those banks

9h ago