শীতের সঙ্গে বেড়েছে শীতবস্ত্রের দাম, ফুটপাত-বিপণি বিতানে ভিড়

চট্টগ্রামের জহুর হকারস মার্কেটে শীতবস্ত্রের দোকানে ক্রেতাদের ভিড়। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

পৌষের মাঝামাঝি শীতের প্রকোপ শুরু হওয়ায় শীতের পোশাক কিনতে বিভিন্ন শপিংমল ও ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে ভিড় করছেন চট্টগ্রামের মানুষ।

তবে ক্রেতাদের অভিযোগ, শীত বেড়ে যাওয়ার সুযোগে বিক্রেতারা বেশি দাম চাইছেন। তবে বিক্রেতারা বলছেন, মানসম্পন্ন পণ্য কিনতে চাইলে একটু বেশি দাম তো দিতেই হবে।

শীতবস্ত্র কিনতে স্বল্প আয়ের মানুষেরা ভিড় করছেন চকবাজার, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, নিউমার্কেট, আন্দরকিল্লা, লালদীঘিসহ বিভিন্ন এলাকার ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানগুলোতে। সুলভ মূল্যে শীতের পোশাক কেনার আশায় এসব জায়গায় ক্রেতাদের ভিড় দেখা যাচ্ছে।

শীতের পোশাকের জন্য মধ্যবিত্তদের কাঙ্ক্ষিত গন্তব্য জহুর হকার্স মার্কেট। বন্দরনগরীর মুরাদপুর এলাকার বাসিন্দা শাহনাজ আক্তার তার ছেলে তাহমিদকে নিয়ে বুধবার গরম কাপড় কিনতে এই মার্কেটে এসেছিলেন। মার্কেটে ক্রেতাদের ভিড় ঠেলে পোশাক বাছাই করে কিনতে বেগ পেতে হয়েছে তাদের।

একটি দোকানে সোয়েটার নিয়ে বিক্রয়কর্মীদের সঙ্গে দর কষাকষি করতে দেখা যায় শাহনাজকে। তিনি বলেন, আমার ছেলের স্কুলের ইউনিফর্মের সঙ্গে মানানসই একটি সোয়েটার দরকার ছিল। সেই অনুযায়ী সোয়েটার পছন্দ করেকিনেছি।

তিনি বলেন, 'আমাদের মতো মধ্যম আয়ের লোকেরা এখানে আসে। এখানে তুলনামূলক কম দামে মানসম্পন্ন পণ্য পাওয়া যায়।'

শীত বেড়ে যাওয়ায় দোকানে কম্বল কিনতে এসেছেন একজন ক্রেতা। বুধবার চট্টগ্রামের জহুর হকারস মার্কেটে। ছবি: রাজীব রায়হান/স্টার

হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ীরা জানান, তাদের কাছে সব রকম দাম ও মানের পণ্য আছে। নেওয়াজ স্টোরের স্বত্বাধিকারী আহমেদ নেওয়াজ বলেন, 'গ্রাহকরা ভালো মানের পণ্য কিনতে চাইলে একটু বেশি মূল্য দিতে হবে। কিন্তু কিছু গ্রাহক ভালো মানের পণ্য চাইলেও উপযুক্ত মূল্য দিতে নারাজ।'

নেওয়াজ বলেন, শুধু মধ্যম আয়ের মানুষই নয়, সচ্ছল পরিবারের লোকেরাও এখন এই বাজারে আসেন, কারণ তারা এখানে তুলনায় কম দামে মানসম্পন্ন পণ্য পান।

তার দোকানে বিভিন্ন ধরনের জ্যাকেট ১,২০০ টাকা থেকে ৪,৫০০ টাকায় এবং সোয়েটার ৬০০ টাকা থেকে ১,৮০০ টাকায় বিক্রি হয়। তিনি বলেন, মূলত তরুণরাই তার দোকানের ক্রেতা।

লেডিস কালেকশন নামের দোকানের মালিক তানভীর হোসেন জানান, তার দোকানে নারীদের শীতের পোশাক তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রীদের পাশাপাশি গৃহিণী ও চাকরিজীবীরা তাদের পোশাক কিনতে তার দোকানে আসেন। 

অন্যদিকে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের লোকজনকে বিভিন্ন সড়কে ফুটপাতের অস্থায়ী দোকানে ভিড় করতে দেখা যায়। তাই এসব দোকানেও প্রতিদিন ক্রেতাদের ভিড় লেগেই থাকে।

গরম কাপড় বিক্রির জন্য হকাররা মূলত নিউমার্কেট এলাকা, চকবাজার গুলজার মোড়, ষোলশহর ২ নম্বর গেট, কাজীর দেউরি, আন্দরকিল্লা, লালদিঘি পাড়, স্টেশন রোড ও আগ্রাবাদ এলাকার ফুটপাথ বেছে নেয়। দেওয়ান বাজার ও জামাল খান এলাকার ফুটপাতেও কিছু বিচ্ছিন্ন অস্থায়ী দোকানপাট জমে উঠেছে।

নিউমার্কেট এলাকার হকার আব্দুল কাদের জানান, এবারের শীত মৌসুমে তিনি দেড় লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছেন। 'আমি প্রতি বান্ডিল ১০ হাজার টাকায় ১৫ বান্ডিল গরম কাপড় কিনেছি। প্রতি বান্ডিল পোশাক বিক্রি করে ৩-৪  হাজার টাকা লাভ হয়'

তিনি বলেন, প্রতিটি বান্ডিলে উলের ক্যাপ, স্কার্ফ, গ্লাভসসহ আট প্রকারের পণ্য রয়েছে। মানভেদে ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে সোয়েটার বিক্রি করছি।

এই এলাকার আরেক ভাসমান ব্যবসায়ী আবদুর রহমান জানান, তিনি ৪০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা দামের উলের তৈরি বিভিন্ন পণ্য বিক্রি করেন। ঠান্ডা বাড়তে থাকায় তার দোকানে বিক্রিও বেড়েছে।

ফুটপাতে ব্যবসা সম্পর্কে জানতে চাইলে এক হকার বলেন, ফুটপাতে ব্যবসা করার জন্য তাদের বিভিন্ন প্রভাবশালীদের কাছে দৈনিক ২০০ টাকা দিতে হয়। তবে 'প্রভাবশালীদের' সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে রাজি হননি তিনি।

বিপণি বিতান, সানমার ওশান সিটি, মিমি সুপার মার্কেট, আফমি প্লাজা, আকতারুজ্জামান সেন্টার, আমিন সেন্টার, চিটাগাং শপিং কমপ্লেক্স, রিয়াজ উদ্দিন বাজার ও তমকুমুন্ডি লেন সহ বিভিন্ন পশ শপিং মলে বিত্তবানদের ভিড় করতে দেখা যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, এসব মলে কয়েকটি ব্র্যান্ডের শোরুমে ক্রেতাদের উপচেপড়া ভিড়।

এসব শোরুমে ব্লেজার, সোয়েটার, কার্ডিগান, চামড়ার জ্যাকেট, গ্যাবার্ডিন জ্যাকেট, মাফলার, গ্লাভস ও উলেন ক্যাপসহ বিভিন্ন ধরনের গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে। ব্লেজার ২,২০০ টাকা থেকে ৫,০০০ টাকা, জ্যাকেট ২,০০০ টাকা থেকে ৪,৫০০ টাকা এবং মাফলার, উলেন ক্যাপ ও গ্লাভসের প্যাকেজ মূল্য ৭০০ টাকা থেকে ১,১০০ টাকার মধ্যে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।

 

Comments

The Daily Star  | English

Yunus calls for working together amid global challenges

Highlights importance of building an economy where fruits of technology, growth are shared evenly by all people

32m ago