নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন করা কঠিন: জোনায়েদ সাকি

সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জোনায়েদ সাকি। ছবি: সংগৃহীত

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, সংস্কারের দুটো দিক আছে। সংস্কারের বিষয়ে সেই দুটো দিকের কথা আমরা বারবার বলছি।

তিনি বলেন, 'সংস্কারের অনেকগুলো জায়গা আছে যেগুলো নির্বাচনের আগেই নির্বাহী আদেশে সংস্কার করা সম্ভব। আবার অনেকগুলো সংস্কারের প্রশ্ন যেগুলো কাঠামোগত, এগুলো আসলে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের করতে হবে। সেই নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি ছাড়া সংবিধান পরিবর্তন করা আসলে কঠিন।'

আজ ২৬ মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

জোনায়েদ সাকি বলেন, 'আমরা বলছি, সংস্কারের ক্ষেত্রে যেভাবে ইতোমধ্যে ঐক্যমত্য কমিশন উদ্যোগ নিয়েছে, এই কাজটি ছিল তাদের করা সব রাজনৈতিক দলগুলো একমত হবে, সর্বসম্মত জায়গায় দাঁড়াবে। সেটি আমাদের জাতীয় সনদ আকারে সামনে আসবে, সেই পরিবর্তনগুলো আসবে।'

'আর যেসব জায়গায় অনৈক্য আছে, দ্বিমত আছে সেই সংস্কারগুলো রাজনৈতিক দলগুলো অধিকতর জনমত গঠন করবে। জনগণের সমর্থনের ওপর বিষয়টি নির্ভর করবে,' মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'এদিকে আমরা যতটুকু সংস্কার করতে পারি, তার অনেকগুলো হয়তো নির্বাচনের আগেই নির্বাহী আদেশে সম্ভব। আর যেগুলো পরিবর্তনের অঙ্গীকার থাকবে, আগামী নির্বাচন যেন জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে এই সংবিধান বদলাতে পারে, সংস্কার করতে পারে—সেটার জন্য আমরা বলেছি, সংবিধান সংস্কার পরিষদের নির্বাচন দরকার।'

গণসংহতি আন্দোলনের এই নেতা বলেন, 'সংস্কার যেহেতু আমাদের লক্ষ্য হিসেবে নির্ধারিত হয়েছে, তাই আগামী সংসদটা হবে সংবিধান সংস্কার পরিষদ—যেখানে সংস্কারটা হবে জনগণের সম্পূর্ণ ম্যান্ডেট নিয়ে। ফলে আদালত এটাকে সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা সেটির দিকে তাকাবে না, আদালত এই সংস্কারকৃত সংবিধানকে সুরক্ষা দেবে। সেটা খুব গুরুত্বপূর্ণ, ফলে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে।'

'যে সময় আছে এই সময়ের মধ্যে ঐক্যমত্য সম্ভব। এই ঐক্যমত্যের যে অংশগুলো নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন করা দরকার, সেগুলো নির্বাহী আদেশে বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। আমরা মনে করি, যথেষ্ট সময় আছে সংস্কারের জন্য।'

মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, 'আজকে স্বাধীনতা দিবসে প্রথমেই আমরা ১৯৭১ সালের আগে ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে যারা আত্মোৎসর্গ করেছেন, তাদের সবার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। স্বাধীনতা দিবস এবার আরও অনেক গভীর তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। বিশেষভাবে চব্বিশের জুলাই-আগস্টের যে গণঅভ্যুত্থান, সেটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের জনগণের স্বপ্ন তৈরি হয়েছিল, যে আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল, সেটিকে আবার নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে।'

তিনি আরও বলেন, 'প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচারের যে অঙ্গীকারের ছিল রাষ্ট্রের, ৫৪ বছরে তা হয়নি। জুলাই-আগস্ট আবার বৈষম্যহীন বাংলাদেশের স্বপ্নকে সামনে এনে ৭১ সালকে নতুন করে আবার আমাদের সামনে হাজির করেছে। জুলাই-আগস্টে মানুষ যেভাবে আত্মত্যাগ করেছেন, শহীদ হয়েছেন, আহত হয়েছেন—এর মাধ্যমে আরেকটি সুযোগ বাংলাদেশের কাছে এসেছে যে, আমরা কিভাবে রাষ্ট্র ও সব কাঠামোকে জনগণের পক্ষে ও জনগণের রাষ্ট্র তৈরি করতে পারি। সেই লড়াইটা চলছে, সেই কাজটাও চলমান।'

'আমরা আশা করি, দেশের জনগণের জন্য একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণ জরুরি, সেই জায়গায় দেশের রাজনৈতিক শক্তিগুলো সচেতন ও ঐক্যবদ্ধ থাকবে।'

Comments

The Daily Star  | English

Made with US cotton? Pay less at US customs

US customs will apply a tariff rate only to the non-American portion of a product's value

10h ago