রূপগঞ্জে ছাত্রদল-স্বেচ্ছাসেবক দলের সংঘর্ষ, গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০

গোলাকান্দাইল বাসস্ট্যান্ডে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে এ সংঘর্ষ চলে। ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলায় ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে ২ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার উপজেলার গোলাকান্দাইল বাসস্ট্যান্ডে সকাল সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় ৩ ঘণ্টা ধরে এ সংঘর্ষ চলে। 

এসময় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে। সংঘর্ষের সময় অনলাইন ক্যাসিনোকাণ্ডে আলোচিত সেলিম প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে।

পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়।

নারায়ণগঞ্জের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে সংঘর্ষের তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সংঘর্ষের সময় বেশ কয়েকটি মোটরসাইকেল ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। ছবি: সংগৃহীত

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ও সেলিম প্রধানের ঘনিষ্ঠ নেতাকর্মীরা এ সংঘর্ষে জড়ান। 

স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীদের নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির উপজেলা কমিটির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম এবং ছাত্রদলের নেতৃত্বে ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি মাসুদুর রহমান। উভয়পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি হয় বলেও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান।

মাসুদুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে জানান, সংঘর্ষে আহতদের মধ্যে ছাত্রদলকর্মী রাফি আহমেদ ও রাজু ভূঁইয়া ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে সকালে একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি মহাসড়কের পাশে সেলিম প্রধানের বাড়ির দিকে গেলে সেখানে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয়।

পরে থেমে থেমে উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া চলে। সেলিম প্রধানের বাড়িতে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়ার ঘটনাও ঘটে। এতে বাড়ির ভেতর ও বাইরে থাকা কয়েকটি যানবাহন পুড়ে যায়। গুলি ও হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্থানীয় লোকজন ও পথচারীরা।

স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রফিকুল দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের মিছিলকে করে সেলিম প্রধানের বাড়ির ছাদ থেকে গুলি করা হয়। পরে স্থানীয় উত্তেজিত জনতা সেলিম প্রধানের বাড়ির সামনে থাকা কিছু যানবাহনে আগুন দেয়।'

ছাত্রদল নেতা মাসুদুর রহমান বলেন, 'স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সেলিম প্রধানের বাড়ি দখল করতে আসে। এ সময় ছাত্রদল নেতাকর্মীরা ওই বাড়ির ভেতরে ছিলেন। বাড়ি দখলে বাধা দিলে তাদের ওপর হামলা করা হয়।'

এ ঘটনায় তাদের অন্তত ১০ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে বলে দাবি ছাত্রদল নেতার।

স্থানীয়রা জানান, গোলাকান্দাইল এলাকায় একটি আড়তের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব রয়েছে। সেলিম প্রধান নিজে এই আড়তের জমির মালিকানা দাবি করলেও এটি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এটি দখলে নেন বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান দিপু ভূঁইয়ার অনুসারীরা। 

গত সোমবার মালিকানা ফেরত পেতে এলাকায় একটি মানববন্ধনের আয়োজন করেন সেলিম। সেখানে স্থানীয় কয়েকজন ছাত্রদল নেতাও সেলিমের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন।

সেলিম প্রধানের অভিযোগ, তিনি গ্রেপ্তার হলে আড়তের ১৬ বিঘা জমি দখলে নেন রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান ও তার অনুসারীরা। এখনো আড়তটি হাবিবুরের ভাতিজা আইয়ুব খান ও আওয়ামী লীগ নেতা মজিবুর রহমানের দখলে রয়েছে। তাদের সহযোগিতা করছেন বিএনপি নেতা মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়ার অনুসারীরা।

সেলিম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জেল থেকে বেরিয়ে আমি জমি ফেরত চাইলে আমার বাড়িতে তারা হামলাও করে। এবারও জমি ফেরত চেয়ে মানববন্ধন করায় আমার বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়েছে। গুলি ও বোমা ছুঁড়েছে।'

এ ঘটনায় তিনি মামলা করবেন বলে জানান।

যদিও আড়তের তত্ত্বাবধানে থাকা আইয়ুব খানের দাবি, সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে আড়তের কোনো সম্পর্ক নেই।

দ্য ডেইলি স্টারকে তিনি বলেন, 'সেলিম প্রধানের বাড়ি থেকে একদল সন্ত্রাসী স্বেচ্ছাসেবক দলের মিছিলে গুলি চালায়। এ নিয়ে সেখানে সংঘর্ষ বাঁধে।'

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার মেহেদী ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একটি আড়ত নিয়ে সেলিম প্রধান ও মজিবুর ভূঁইয়ার মধ্যে বিরোধ। এ নিয়েই সংঘর্ষের সূত্রপাত বলে আমরা জানতে পেরেছি। সংঘর্ষে গুলি ও হাতবোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেছে।'

'সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ প্রচেষ্টায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এসেছে,' বলেন তিনি।

ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ১০ রাউন্ড গুলির খোসা ও একটি অবিস্ফোরিত ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, 'ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে পুলিশ কাজ করছে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারেও কাজ শুরু করেছি।'

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি।

Comments