রাজনৈতিক দল গঠনে রাষ্ট্রীয় সহায়তা নেওয়া জনগণকে হতাশ করবে: তারেক রহমান
রাজনৈতিক দল গঠন করতে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় বা প্রশাসনিক সহায়তা নেন, তা জনগণকে হতাশ করবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
তিনি আরও বলেন, অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি আচরণ বা বক্তব্য যদি ঝগড়াসুলভ, প্রতিহিংসামূলক হয়, সেটিও জনগণের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত।
শনিবার বিকেলে এক শিক্ষক সমাবেশে ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, 'আগেও আমি বলেছি, আজও আমি আপনাদের সামনে বলছি, নির্বাচনই হচ্ছে জনগণের রাজনৈতিক ক্ষমতা নিশ্চিত করার অন্যতম প্রধান কার্যকরী হাতিয়ার। নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে বির্তক সৃষ্টি করার অর্থ নিজেদের অজান্তে পরাজিত পলাতক ফ্যাসিস্টদের অবস্থানকে শক্তিশালী করা।'
তারেক রহমান বলেন, 'দেশের ছাত্র-তরুণরা রাষ্ট্র, রাজনীতি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়েছে। এটি অবশ্যই একটি ইতিবাচক দিক। এই তরুণরাই গত দেড় দশকে একটি নির্বাচনেও ভোট দিতে পারেনি। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক অধিকারবঞ্চিত এসব তরুণদের কেউ যদি জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে অবশ্যই বিএনপি সেই উদ্যোগকে স্বাগত জানায়।'
'আমি একইসঙ্গে উল্লেখ করতে চাই যে, রাজনৈতিক দল গঠন করতে গিয়ে কেউ যদি রাষ্ট্রীয় কিংবা প্রশাসনিক সহায়তা নেন সেটি জনগণকে হতাশ করবে, কিংবা অন্য রাজনৈতিক দলের প্রতি তাদের আচরণ কিংবা বক্তব্য যদি ঝগড়াসুলভ অথবা প্রতিহিংসামূলক হয়, সেটিও জনগণের কাছে হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।'
'অবশ্যই আজকের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশ। অতীত থেকে বেরিয়ে এসে তরুণরা নতুন পথ রচনা করবে। তবে কোনো প্রশ্নবিদ্ধ পথে নয়, পথটি হওয়া উচিত স্বচ্ছ এবং স্বাভাবিক,' বলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।
তারেক রহমান বলেন, 'এই সরকারের সঙ্গে কোনো ভুল বোঝাবুঝি অযথা কুটতর্ক আমি সময়ের অপচয় বলে মনে করি। তবে, একইসঙ্গে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই, জনগণ যদি বৃহত্তর স্বার্থে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারের ব্যর্থতা ধৈর্য্য ধরে মানতে পারে তাহলে যারা সরকারে রয়েছেন তাদের ধৈর্য্য ও সহনশীলতা আরও অনেক বেশি থাকা জরুরি বলে আমরা মনে করি।'
তিনি বলেন, 'বিএনপি মনে করে, জনগণকে নিয়ে রাজনীতি নয় বরং জনগণের জন্যই রাজনীতি। এ কারণে বিএনপি যেকোনো মূল্যে দেশের জনগণের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে চায়।'
সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর অন্তর্বর্তী সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বক্তব্য দেন। পরে ওই বক্তব্যের 'নিরপেক্ষ সরকারের দাবিকে আরেকটা এক এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত' বলে মন্তব্য করেন অন্তর্বর্তী সরকারের তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'আমার আহ্বান থাকবে, আপনাদের কোনো কার্যক্রম নিয়ে কেউ যেন বিভ্রান্তি ছাড়ানো বা বির্তক সৃষ্টির সুযোগ না পায়। সে বিষয়ে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে। জনগণই বিএনপির সব রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। জনগণ সঙ্গে থাকলে কোনো ষড়যন্ত্রই আমাদের পরাজিত করতে পারবে না।'
তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র বিকশিত ও শক্তিশালী হয় প্রতিদিনের কার্যক্রম, আচরণে ও চর্চায়। আমাদের মধ্যে অবশ্যই ভিন্নমত, ভিন্নপথ থাকবে। এটাই গণতন্ত্রের সৌন্দর্য। তবে আমাদের উদ্দেশ্য এক ও অভিন্ন, একটি উদার, গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা।'
তারেক রহমান বলেন, 'সংস্কার ও নির্বাচন বিএনপি দুইটারই পক্ষে, দুইটিই অত্যন্ত জরুরি। সংস্কার নাকি নির্বাচন, কেউ কেউ এমন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন নিয়ে কূটতর্ক করার অপচেষ্টা করেছে। আমরা যদি দেশের বিরাজমান পরিস্থিতি দেখি তাহলে কিন্তু সেটি ভিন্ন।'
''দেশের কোটি কোটি পরিবারের কাছে এই মুহূর্তে নির্বাচন ও সংস্কারের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে সংসার পরিচালনা করা। একদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অপরদিকে জনগণের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ভ্যাটের বোঝা। ফলে দেশের কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, স্বল্প আয়ের মানুষ, এমনকি নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের কাছেও সংসার টেকানো অনেকক্ষেত্রে দায় হয়ে পড়েছে। অনেক পরিবারে চলছে নীরব হাহাকার।'
তিনি বলেন, 'কীভাবে জনগণের নিত্যদিনের দুদর্শা লাঘব করা যায়, কীভাবে বাজার সিন্ডিকেট ভেঙে দ্রব্যমূল্য জনগণের হাতের নাগালে রাখা যায়, কীভাবে জনগণকে ফ্যাসিস্ট আমলের মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই দেওয়া যায়, কীভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা সম্ভব—অন্তবর্তী সরকারের সামনে অগ্রাধিকারের তালিকায় এই বিষয়গুলো থাকা অত্যন্ত জরুরি।'
'জনগণ বিশ্বাস করে অন্তবর্তী সরকারের মতো সর্বজনসমর্থিত একটি নির্দলীয় অরাজনৈতিক সরকারের পক্ষেই বাজার সিন্ডিকেটের কবল থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়া সহজ। তাহলে অন্তবর্তী সরকার এতদিনেও কেন বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ?' প্রশ্ন রাখেন তিনি।
তারেক রহমান আরও বলেন, ''অন্তবর্তী সরকারের নানা সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও আমরা মনে করি, এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। হাজারো শহীদের রক্ত মাড়িয়ে একটি গণতান্ত্রিক, বৈষম্যহীন, মানবিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার নিয়ে এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব নিয়েছে। '
Comments