বিএনপির মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আরেকটি এক–এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত: নাহিদ ইসলাম

নাহিদ ইসলাম। ফাইল ছবি

বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটি এক–এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে নাহিদ ইসলাম এসব কথা বলেছেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার বিবিসি বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, 'যদি অন্তর্বর্তী সরকার পূর্ণ নিরপেক্ষতা পালন করে, তাহলেই তারা নির্বাচন কন্ডাক্ট (পরিচালনা) করা পর্যন্ত থাকবে। তা না হলে তো নিরপেক্ষ সরকারের প্রয়োজন হবে।'

বিএনপির মহাসচিবের ওই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে লেখা স্ট্যাটাসে উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ফেসবুকে বলেছেন, 'বিএনপি মহাসচিবের নিরপেক্ষ সরকারের দাবি মূলত আরেকটা এক-এগারো সরকার গঠনের ইঙ্গিত বহন করে। এক-এগারোর বন্দোবস্ত থেকেই আওয়ামী ফ্যাসিজমের উত্থান ঘটেছিল। বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যে সামনে আরেকটা এক-এগারো সরকার, সংসদীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা ও নতজানু পররাষ্ট্রনীতির ধারাবাহিকতা এবং গুম-খুন ও জুলাই হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়ার আলামত রয়েছে।'

'ছাত্র এবং অভ্যুত্থানের নেতৃত্বকে মাইনাস করার পরিকল্পনা ৫ আগস্ট থেকেই শুরু হয়েছে। ৫ আগস্ট যখন ছাত্র-জনতা রাজপথে লড়াই করছে, পুলিশের গুলি অব্যাহত রয়েছে, তখন আমাদের আপসকামী অনেক জাতীয় নেতা ক্যান্টনমেন্টে জনগণকে বাদ দিয়ে নতুন সরকার করার পরিকল্পনায় ব্যস্ত ছিলেন (অনেকে ছাত্রদের কথাও বলেছেন সেখানে)। আমরা ৩ আগস্ট থেকে বলে আসছি, আমরা কোনো প্রকারের সেনাশাসন বা জরুরি অবস্থা মেনে নেব না। আমাদেরকে বারবার ক্যান্টনমেন্টে যেতে বলা হলেও আমরা যেতে অস্বীকার করি। শেষ পর্যন্ত বঙ্গভবনে আলোচনা ও বার্গেনিংয়ের মাধ্যমে অধ্যাপক ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়।'

তিনি লিখেন, 'আমরা চেয়েছিলাম ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো ও নাগরিক সমাজের সমন্বয়ে একটা জাতীয় সরকার। জাতীয় সরকার হলে ছাত্রদের হয়তো সরকারে আসার প্রয়োজন হতো না। জাতীয় সরকার অনেক দিন স্থায়ী হবে—এই বিবেচনায় বিএনপি জাতীয় সরকারে রাজি হয়নি। কিন্তু অভ্যুত্থানের পরেই দেশে জাতীয় সরকারের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে বেশি ছিল। অথচ বিএনপি জাতীয় সরকারের কথা বলছে সামনের নির্বাচনের পরে। ছাত্ররাই এই সরকার এবং বিদ্যমান বাস্তবতার একমাত্র ফ্যাক্টর, যেটা এক-এগারোর সরকার থেকে বর্তমান সরকারকে সম্পূর্ণভাবে আলাদা করে। বিএনপি কয়েক দিন আগে ''মাইনাস টুর'' আলোচনা করলেও এখন ক্ষমতায় যাওয়ার পথ সুগম করার জন্য নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি এক–এগারো সরকারের প্রস্তাবনা করছে। এ ধরনের পরিকল্পনা গণতন্ত্র ও জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে যাবে এবং ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই এটা মেনে নেবে না। আমি মনে করি, এটা বিএনপির বিরুদ্ধেও ষড়যন্ত্র।'

তিনি আরও লিখেছেন, 'অন্তর্বর্তী সরকার জাতীয় সরকার না হলেও সরকারে আন্দোলনের সব পক্ষেরই অংশীদারত্ব রয়েছে এবং সব পক্ষই নানা সুবিধা ভোগ করছে। সরকার গঠনের আগেই ৬ আগস্ট অ্যাটর্নি জেনারেল এবং পুলিশের আগের মহাপরিদর্শক নিয়োগ হয়েছিল, যারা মূলত বিএনপির লোক। এ রকমভাবে সরকারের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত নানা স্তরে বিএনপিপন্থী লোকজন রয়েছে। নির্বাচনের নিরপেক্ষতার কথা বললে এই বাস্তবতাও মাথায় রাখতে হবে। রাষ্ট্রপতির পরিবর্তন, সংস্কার, নতুন সংবিধান, জুলাই ঘোষণা—সব ইস্যুতেই বিএনপি বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। অথচ এগুলোর কোনোটাই ছাত্রদের দলীয় কোনো দাবি ছিল না। কিন্তু দেশের স্থিতিশীলতা, বৃহত্তর স্বার্থ এবং জাতীয় ঐক্য ধরে রাখার জন্য ছাত্ররা বারবার তাদের অবস্থান থেকে সরে এসেছে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে গণতন্ত্রবিরোধী ও অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাবিরোধী কোনো পরিকল্পনা হলে সেখানে আমরা বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেব।'

নাহিদ ইসলাম আরও লেখেন, 'আওয়ামী লীগ বিষয়ে ভারতের প্রধান দলগুলোর মধ্যে ঐক্য সম্ভব হয়েছে, অথচ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ বিষয়ে আমরা ঐক্য করতে পারিনি এত হত্যা এবং অপরাধের পরেও। হায় এই "জাতীয় ঐক্য" লইয়া আমরা কী রাষ্ট্র বানাব! বাংলাদেশকে দুর্বল করা সহজ, কারণ বাংলাদেশকে সহজেই বিভাজিত করা যায়। এ দেশের বড় বড় লোকেরা অল্প মূল্যে বিক্রি হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকে। আমি মনে করি না, সমগ্র বিএনপি এই অবস্থান গ্রহণ করে। বরং বিএনপির কর্মী–সমর্থকদের বড় অংশই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন চায়। বিএনপির দেশপ্রেমিক ও ত্যাগী নেতৃত্বকে আহ্বান করব, ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে না গিয়ে ছাত্র-জনতার সঙ্গে বৃহত্তর ঐক্য ও সংহতির পথ বেছে নিন।'

বিবিসি বাংলাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেছিলেন, '(সরকারের) নিরপেক্ষতার প্রশ্ন আসতে পারে। কেননা, এখানে আমরা লক্ষ করছি যে ছাত্ররা একটা রাজনৈতিক দল তৈরি করার কথা চিন্তা করছেন। সেখানে যদি ছাত্রদের প্রতিনিধি এই সরকারে থাকে, তাহলে তো নিরপেক্ষ থাকতে পারবে না। ওইটা হচ্ছে, সম্ভাব্য কথা। কিন্তু যদি তারা মনে করে যে (সরকারে) থেকেই তারা নির্বাচন করবে, তাহলে তো রাজনৈতিক দলগুলো মেনে নেবে না।'

Comments

The Daily Star  | English

‘Count on us for whatever support you want’

Managing Director of Operations at the World Bank Anna Bjerde yesterday reiterated the global lender's support to the interim government for rebuilding Bangladesh

55m ago