২৬ মার্চ আমাদের দেশে ফেরা উচিত, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে পলাতক আ. লীগ নেতা

ফাইল ছবি

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শেখ হসিনার সরকারের পতনের প্রায় পাঁচ মাস পর ভারতে আত্মগোপনে থাকা আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

গতকাল শুক্রবার ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে। পত্রিকাটি আ ক ম মোজাম্মেল হক, নাহিম রাজ্জাক, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, পঙ্কজ দেবনাথ, সাইফুজ্জামান শিখর, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও মাহবুবুল আলম হানিফের সঙ্গে কথা বলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, আওয়ামী লীগের আমলে শাসনপ্রক্রিয়া ও রাজনীতিতে ভুল করার কথা স্বীকার করেছেন তারা। নিজেদের অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে তারা বলেন, তাদের দল এখন 'ছিন্নভিন্ন ও ছড়িয়ে ছিটিয়ে' রয়েছে। তবে বাংলাদেশে ফিরে আসার ইচ্ছার কথাও জানান তারা।

তাদের অনুমান, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের এক তৃতীয়াংশ কারাগারে, এক তৃতীয়াংশ দেশের বাইরে আত্মগোপনে এবং বাকি নেতারা দেশের ভেতরেই লুকিয়ে রয়েছেন।

সাবেক মক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, 'আওয়ামী লীগের হাজারো নেতাকর্মী এখন তাদের ঘরবাড়ি ছেড়ে আত্মগোপনে আছেন। তাদের অনেকের খাবার কিনে খাওয়ার মতো টাকাও নেই... তবুও, তৃণমূল কর্মীদের মনোবল শক্ত আছে। বিদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষে জনমত গঠনে সাহায্য করার জন্য আমরা ভারতের দিকে তাকিয়ে আছি।'

আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, 'সিনিয়র নেতারা মনে করেন আমাদের সবার ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া উচিত।'

আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের প্রায় সবার জামিনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। তার মতে, আওয়ামী লীগের নেতারা 'ভয়াবহ' এক পরিস্থিতিতে 'অসহায়' অবস্থায় আত্মগোপনে রয়েছেন।

নাহিম রাজ্জাক বলেন, 'এখন পর্যন্ত আমাদের কোনো বিচারিক অধিকার নেই। কেউ জামিন পাচ্ছেন না। আমরা জানি, যদি দেশে ফিরে নির্বাচনের দাবি জানাই, তাহলে আমাদের সবাইকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হবে। আওয়ামী লীগ আলোচনায় বসতে এবং নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে প্রস্তুত, কিন্তু এর জন্য কোনো পরিবেশ নেই। এখনই আমাদের পক্ষে মাঠে থাকা বা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।'

দলকে উজ্জীবিত করতে আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে 'জোরালো আলোচনা' চলছে বলে জানান নাহিম রাজ্জাক। তিনি বলেন, ৩০-৪০ জন সাবেক মন্ত্রী ও এমপি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মাধ্যমে যুক্ত আছেন।

এই গ্রুপের একজন বাহাউদ্দিন নাছিম ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, আত্মগোপনে থেকেও তিনি বাংলাদেশের প্রায় সব জেলার নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।

তিনি বলেন, 'আমি প্রতিদিন নেতাকর্মীদের থেকে ২০০-৩০০টি কল পাই। এভাবেই আওয়ামী লীগের নেতারা কর্মীদের সঙ্গে এবং কর্মীরা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। দেশে আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হলে, আমরা বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকব।

বেশ কয়েকজন নেতা দাবি করেন, ভারতে থাকাকালীনও শেখ হাসিনা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দলের নেতাদের সঙ্গে 'নিয়মিত' যোগাযোগ রাখেন। এরকম কিছু গ্রুপে শেখ হাসিনা 'আপা' নামে যুক্ত আছেন।

সাবেক এমপি পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, বাংলাদেশে থাকা নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন শেখ হাসিনা।

তার নিজের সঙ্গেও শেখ হাসিনার যোগাযোগ থাকার কথা জানিয়ে পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, 'তিনি (শেখ হাসিনা) আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী।'

মোজাম্মেল হক ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-কে বলেন, 'গত আগস্টে থানা থেকে লুট হওয়া হাজার হাজার ছোট অস্ত্র উদ্ধারের কোনো চেষ্টা করা হয়নি। আমাদের সন্দেহ সমুদ্রপথে আরও অস্ত্র বাংলাদেশে আসছে। পাকিস্তান যেমন একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে, তেমনিভাবে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার সর্বাত্মক চেষ্টা চলছে।'

আর সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, '২০২৪ সালের আগস্টের আগেও আওয়ামী লীগ বহু বছর ধরে বিরোধী দলে ছিল। কিন্তু দলটি এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি আগে কখনো হয়নি।'

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ টেলিফোনে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, তাদের দলের তিন লাখের বেশি কর্মী এখন বাংলাদেশে আত্মগোপনে আছেন। এছাড়া বহু নেতা বিদেশে আত্মগোপনে আছেন।

তিনি মনে করেন ৫ আগস্টের আগের হত্যাকাণ্ডের জন্য শুধু আওয়ামী লীগকে দায়ী করার 'অন্যায়'। তিনি বলেন, 'শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পরেও বাংলাদেশে হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতা অব্যাহত রয়েছে। তাহলে এর জন্য দায়ী কে? যদি তাকে অভিযুক্ত করা হয়, তাহলে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসকেও অভিযুক্ত করা উচিত। শেখ হাসিনা যদি বিচারের মুখোমুখি হতে প্রস্তুত থাকেন, তাহলে তারও (অধ্যাপক ইউনূস) হওয়া উচিত।'

'সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট' এর প্রতিক্রিয়া

পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্য নিয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের এই প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে 'সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্ট'। তারা বলেছে, সংঘবদ্ধ অপপ্রচারের অংশ হিসেবে, পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের কথার ওপর ভিত্তি করে বেশ কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। পত্রিকাটি যাদের বক্তব্য প্রকাশ করেছে তারা সবাই সন্দেহভাজন অপরাধী ও গণহত্যায় অভিযুক্ত। সাংবাদিকতার মৌলিক নিয়ম অনুসরণ না করে প্রকাশিত এসব প্রতিবেদন মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যে পরিপূর্ণ।

Comments

The Daily Star  | English

Power subsidies may rise 83% this fiscal year

Subsidies for the power sector are likely to balloon 83 percent this fiscal year as the interim government is planning to clear all arrears owed to private power producers.

10h ago