বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রতি ভারতকে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের
বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের প্রতি ভারতকে শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, যারা অনেক ত্যাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র অর্জন করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন না।
আজ বাংলাদেশ সময় রাত ২টায় লন্ডনে এক সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে যুদ্ধের সময় আমাদের সহযোগিতা করেছিল। আমরা সবসময় প্রত্যাশা করি ভারত বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়াবে। কোনো একটা বিশেষ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের পাশে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, একথা আমরা প্রত্যাশা করি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমরা আশা করি ভারত অতীতে যে ভুল করেছে এবং বাংলাদেশের মানুষের সঙ্গে যে বিচ্ছিন্নতা তৈরি করেছে এটাকে তারা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে এবং তাদের এখন যে কার্যকলাপ যারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে করছে সেই কার্যকলাপ তারা বন্ধ করবে।'
তিনি বলেন, 'আজকে অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনকভাবে একটা ভ্রান্ত ধারণা ছড়িয়ে দিচ্ছে কিছু মানুষ। বলা হচ্ছে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। এই ফেইক একটা তথ্য, এই ডিজইনফরমেশন ছড়িয়ে দিয়ে আবারও একটা সমস্যা তৈরির পাঁয়তারা চলছে। এটি নিয়ে নেতাকর্মীদের সজাগ থাকতে বলেন তিনি।
এসময় আগরতলায় ডেপুটি হাইকমিশনে হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, আগরতলায় ডেপুটি হাইকমিশন অফিস আক্রান্ত হয়েছে, কলকাতায় ডেপুটি হাইকমিশন অফিস আক্রান্ত হয়েছে এবং মিছিল নিয়ে সিলেট দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছে, বেনাপোল দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করেছে। এটা কোন ধরনের বন্ধুত্ব? এটা কোন ধরনের প্রতিবেশীর কাজ?
তিনি বলেন, 'আমরা এই সমাবেশ থেকে ভারতবর্ষকে অনুরোধ জানাতে চাই আপনি অনেক বড় দেশ কিন্তু তাই বলে বাংলাদেশ, যে দেশ যুদ্ধ করে স্বাধীন হয়েছে, যে সংগ্রাম করে লড়াই করে যে গণতন্ত্রকে আদায় করে নিয়েছে যারা বুকের রক্ত দিয়ে তাদের অধিকারকে আদায় করেছে তাদেরকে খাটো করে দেখে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে দাঁড়াবেন না। কারণ বাংলাদেশের মানুষ কখনোই তা মেনে নেবে না।'
মির্জা ফখরুল এসময় রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আহ্বান জানিয়ে বলেন, এই বিষয়ে সবাই আমরা একজোট থাকব, একমত থাকব। এবং আমরা অবশ্যই আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে অক্ষুণ্ন রাখার জন্য আমরা সবাই একজোট হয়ে আবার ঐক্যবদ্ধ হব।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা গত ১৫ বছরে ২০ হাজার তরুণকে হত্যা করেছেন, আমাদের ইলিয়াস আলিসহ ৭০০ মানুষকে গুম করে দিয়েছেন। খালেদা জিয়াকে বছরের পর বছর কারাগারে আটকে রেখেছেন। তারেক জিয়াকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্বাসিত করেছেন।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতির কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'বিগত সরকার বাংলাদেশের যে ক্ষতি করে দিয়েছে, যে শ্বেতপত্র প্রকাশ হয়েছে তাতে বছরে ১৬ বিলিয়ন ডলার করে পাচার করা হয়েছে বলে উঠে এসেছে। চিন্তা করা যায়! একটা দেশের সরকার তারা দেশের সমস্ত সম্পদ লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছে। কিছু নাই ভেতরে। তারা রাজনৈতিক যে কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তিনটি নির্বাচনকে বেআইনিভাবে দখল করে নিয়েছিল।'
ফখরুল বলেন, 'এই সরকারের দায়িত্বটা কী? এই সরকারের দায়িত্ব হচ্ছে, খুব দ্রুত এই জঞ্জালগুলোকে সাফ করে দিয়ে যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দেওয়া।'
'আমরা মনে করি নির্বাচনী ব্যবস্থা, প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ন্যূনতম যে সংস্কারগুলো প্রয়োজন, সেগুলো করে দ্রুত নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। কারণ, আমরা আগেও বলেছি নির্বাচন যত দেরি হবে, সমস্যা তত বাড়তে থাকবে। তত বেশি গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।'
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বলেন, 'কোনো হঠকারিতা নয়, বিশৃঙ্খলা নয় অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে আমাদের সামনের দিকে পা দিতে হবে। আমাদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা উগ্রতা করেন, হঠকারিতা করেন। এগুলো কখনোই আমাদের সঠিক লক্ষ্যের দিকে নিয়ে যাবে না।'
গোটা পৃথিবী এখন ভিন্নরকম, আবার অস্থির হয়ে উঠেছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আজকে ভূরাজনীতি, ভারত উপমহাদেশের যে রাজনীতি সব নিয়েই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে সতর্কতার সঙ্গে।'
Comments