একটি মহল সরকার বনাম শিক্ষার্থী গেম খেলে ফায়দা লুটার অপচেষ্টা করছে: কাদের
শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, শিক্ষার্থীরা কোনো অবস্থাতেই সরকারের প্রতিপক্ষ নয়।
আজ শুক্রবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
কাদের বলেন, 'আদালতের রায়ের পর কোনো ধরনের সময়ক্ষেপণ না করে সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশে কোটা সংস্কার প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তারপরও একটি মহল সরকার বনাম শিক্ষার্থী গেম খেলে ফায়দা লুটার অপচেষ্টা করছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে পরিকল্পিত ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।'
তিনি বলেন, 'সহিংসতায় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের জন্য তদন্ত কমিশন গঠন করা হয়েছে এবং ইতোমধ্যে তদন্ত কমিশন কাজ শুরু করেছে। এমনকি এই ঘটনা তদন্তে জাতিসংঘ এবং অন্যান্য দেশের কাছে সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতাও চাওয়া হয়েছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের সদস্য সংখ্যা ও আওতা বাড়ানো হয়েছে—তিনজন বিচারপতিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।'
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি যেহেতু পূরণ হয়েছে, সেহেতু আমরা বিশ্বাস করি, শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে-পরীক্ষার হলে ফিরে যাবে। তারা কারও অশুভ রাজনীতির ঢাল হিসেবে ব্যবহার হোক এটা জাতি চায় না। পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ক্রমে খুলে দেওয়া হবে।'
তিনি আরও বলেন, 'আমরা দেখছি নাগরিক সমাজের অনেকেই চলমান সংকটে তাদের নিজস্ব মতামত ব্যক্ত করছেন। আমরা ব্যক্তিগত মতের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই কিন্তু একটি রাষ্ট্রে শান্তি-শৃঙ্খলা এবং জনগণের জানমালের নিরাপত্তার বিষয়টি সকালের বিবেচনায় থাকা উচিত। তাদের এই মতামত প্রকাশের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তৃতীয় কোনো স্বার্থান্বেষী মহল যেন উসকানি সৃষ্টির কাজে ব্যবহার না করতে পারে সে বিষয়েও সবার দায়িত্বশীল হওয়া উচিত। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে চলমান সংকট থেকে উত্তরণে সবার ধৈর্য ধারণ করা সমীচীন।'
জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'জামায়াত নিষিদ্ধের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিবৃতি দেখলেই বোঝা যায়, জামায়াতের সঙ্গে তাদের বন্ধন কত নিবিড়। সেই সম্পর্কে দায় থেকে জামায়াত নিষিদ্ধে সিদ্ধান্তকে তিনি অগণতান্ত্রিক-অসাংবিধানিক বলেছেন। কেননা, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জামায়াতের রাজনীতির বৈধতা দেন। খালেদা জিয়া সরকার জামায়াত নেতা, যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের নাগরিকত্ব ফেরত দেয়। ১৯৯১ সালে জামায়াতের সমর্থন নিয়ে বিএনপি সরকার গঠন করে। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট হয়ে সরকার গঠন করে এ দেশের মানুষের ওপর, বিশেষ করে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায়।
'স্বাধীন বাংলাদেশে নারীদের ওপর নজিরবিহীনভাবে ধর্ষণ-নির্যাতন চালানো হয়। বিএনপি-জামায়াত সব সময় গাঁটছড়া বেঁধে পথ চলেছে। সুতরাং বিএনপির পক্ষে জামায়াতকে পরিত্যাগ করা যে অসম্ভব, সেটা সবাই বোঝে। যে কারণে জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ হওয়ায় দেশের মানুষ সাধুবাদ জানালেও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই সিদ্ধান্তকে অগণতান্ত্রিক-অসাংবিধানিক বলবে, এটাই স্বাভাবিক। এতেই বিএনপির তীব্র জামায়াত প্রীতি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে,' বলেন তিনি।
জামায়াতের পৃষ্ঠপোষক এখনো যারা রাজনৈতিক সন্ত্রাস করে যাচ্ছে বা ভবিষ্যতে করবে বলে মনে করেন, সেই দলের বিরুদ্ধে আপনারা কী ব্যবস্থা নেবেন—গণমাধ্যমকর্মীদের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি যে কারণে নিষিদ্ধ হয়েছে, সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে। সেই সন্ত্রাসের সঙ্গে কারও আচরণ-অ্যাকশনে যদি যোগসাজশ বা সন্ত্রাসী চেতনা-ধারাকে যারা বহন করবে, তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের মনোভাব ও আচরণ ঠিক এ রকমই হবে। সন্ত্রাসী সংগঠনকে আমরা সন্ত্রাসী হিসেবেই দেখব, তারা যারাই হোক।'
যারা রাস্তায় নেমে এসেছে, তাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করা হবে কি না জানতে চাইলে কাদের বলেন, 'পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাজের পেশাজীবী, সংস্কৃতিসেবী থেকে শুরু করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ইতোমধ্যে আলোচনা করেছেন। শিক্ষক-আইনজীবী-সাংবাদিকদের সঙ্গেও আলোচনা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সবার সঙ্গে মত বিনিময় হবে।'
গতকাল মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বলেছেন যে, মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি কোটা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তিনি আদালতে যাবেন—এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, 'আমি ঠিক জানি না তিনি কী বলেছেন। যদি বলে থাকেন, এটা তার ব্যক্তিগত মতামত। এটা সরকারের বা আমাদের দলের কোনো সিদ্ধান্ত এখানে নেই।'
শিক্ষার্থীদের প্রধান দাবি সরকার মেনে নিয়েছে, কোটা সংস্কার হয়েছে। এখন তারা নয় দফা দাবি দিয়েছে, যেখানে আপনার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছেন। এই দাবির ব্যাপারে আপনারা কী ভাবছেন—জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, 'সরকার ইতোমধ্যে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করেছে। জাতিসংঘসহ যেসব দেশ তদন্তের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে, আমরা তাদেরও স্বাগত জানিয়েছি। তদন্ত কাজে তারাও অংশ নিতে পারেন। এখন কে অপরাধী, কে অপধারী নয়—প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের তদন্ত করতে আমরা বদ্ধপরিকর। সেটাও ওই তদন্ত কমিশনের কার্যপরিধির আওতার মধ্যে পড়ে। কাজেই বিষয়টি সেখানেই থাকবে, সেখানেই সিদ্ধান্ত হবে।'
Comments