এখন গোটা দেশে একটা নৈরাজ্য চলছে: মির্জা ফখরুল

দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি
করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর দেশের সংকট 'আরও গভীর হয়েছে' উল্লেখ করে তা নিরসন না হলে সরকারের ভবিষ্যত খুব ভালো নয় বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

আজ রোববার দুপুরে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, 'একটা কথা আমি বলতে চাই, ওনাদের (সরকার) একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যে, ওভারকাম দ্য ক্রাইসিস… সংকট থেকে তারা ওপরে উঠে গেছেন।'

'আমি বলব, সংকট আরও গভীর করেছে। বিগত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সংকট আরও গভীর হয়েছে, সরকারের সংকটও আরও গভীর হয়েছে,' বলেন মির্জা ফখরুল।

সরকারকে সর্তক করে দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আপনারা যদি এখনো সেটা উপলব্ধি না করেন, সংকট নিরসনের চেষ্টা না করেন তাহলে ভবিষ্যত তাদের জন্য খুব ভালো না।'

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কেমন আছেন জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই খারাপ। আপনারা দেখছেন যে, প্রায়শ তিনি যাচ্ছেন হাসপাতালে। …. আবার বাসায় ফিরে আসছেন। আসার পরেও কিন্তু তিনি ২৪ ঘণ্টাই বলা যায় যে, তিনি মেডিকেল কেয়ারের মধ্যে আছেন।'

আরেক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'এখানে একটা গোত্র তৈরি করা হচ্ছে যাদেরকে সমস্ত রকম দুর্নীতি-অনিয়মের মধ্য দিয়ে অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়েছে। একটা লুটের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেটা দিয়ে তারা এই সরকারকে টিকিয়ে রাখছে। এর মধ্যে তারা নিজেরাও জড়িত এবং তাদের সুবিধাভোগী লোকজনরা জড়িত।'

তিনি বলেন, আজকে যেগুলো দেখছেন সেগুলো হচ্ছে লুট…. মেগা লুট। একজন ব্যক্তি সে এখন সিঙ্গাপুরে গিয়ে হাইয়েস্ট ইনভেস্টার… চার নম্বরে আছেন… তাই না। আর কয়েকজন ব্যক্তি আছেন পানামা লিস্টের মধ্যে পড়ে যায়…এতো টাকা তারা বানিয়েছেন। এরা দুর্নীতি-অনিয়মের ওপর ভিত্তি করে এই রাষ্ট্রকে কী করে পরনির্ভরশীল করা যায় এবং তাদের বিশেষ গোত্রকে কীভাবে অন্যায়ভাবে আর্থিক দিক থেকে শক্তিশালী করা যায় সেই লক্ষ্যে তারা কাজ করছে।'

তিনি বলেন, 'কারো কোনো জবাবদিহিতা নাই। এখানে দেখেন একজন মন্ত্রীর যার লন্ডনে বাড়ি পাওয়া গেছে তিনশ-আড়াইশ টার মতো। পত্রিকায় দেখা যায় যে, মন্ত্রী-এমপির বাড়ি-সম্পদ দেশের বাইরে রয়েছে। তারা ডোন্ট কেয়ার। তাদের যে বক্তব্য, দাম্ভিকতা এটা অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে… এমন ভাবে কথা বলেন যে, উনারা ছাড়া দেশে আর কেউ নাই।'

মির্জা ফখরুল বলেন, 'এটাতেই প্রমাণিত হয়ে গেছে যে, বাংলাদেশ একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র অলিরেডি হয়েই গেছে। কখন ব্যর্থ রাষ্ট্র হয়? যখন অর্থনৈতিক, মেরুদণ্ড ভেঙে ফেলে, যখন তার রাজনৈতিক স্ট্রাকচারটা ভেঙে ফেলে, সামাজিক কাঠামো ভেঙে যায় যখন কোথাও জবাবদিহিতা থাকে না তখন রাষ্ট্র একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়… নৈরাজ্য সৃষ্টি হয়। এখন গোটা দেশে একটা নৈরাজ্য চলছে।'

সরকারি হাসপাতালে অবস্থা তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনারা কি সরকারি হাসপাতালে কেউ গেছেন? যদি যান বিশেষ করে ঢাকার বাইরে সরকারি হাসপাতালে যান অবিশ্বাস্য… হাসপাতালে ঢোকা যায় না এতো দুর্গন্ধ, এতো নোংরা, দালালদের অত্যাচার চিন্তা করা যায় না।'

'আর হাসপাতালের চারপাশে নতুন নতুন ডায়গোনেস্টিক সেন্টার ও ক্লিনিক গড়ে উঠেছে...এটা বড় ব্যবসা। এখান থেকে দালালরা আসে সরকারি হাসপাতাল থেকে ধরে নিয়ে যায় রোগী… এই হচ্ছে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা।'

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো দলীয়করণে উপাচার্য ও শিক্ষক নিয়োগের শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'যে কারণে ব্রেনডেইন হয়ে যাচ্ছে… যারা মেধাবী যারা নিজের যোগ্যতা আছে তারা দেশে ছেড়ে চলে যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সরকার উদাসীন উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, 'বাংলাদেশে মোট মৃত্যুর প্রায় ৭০ শতাংশই ঘটে হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক কিংবা ডায়াবেটিকসহ বিভিন্ন ধরনের অসংক্রামক রোগে। অথচ এসব রোগ মোকাবালায় সরকারের অর্থ বরাদ্দের পরিমাণ মাত্র মোট স্বাস্থ্য বাজেটের ৪ দশমিক ২ শতাংশ।

'জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তায় এই সরকার কেন এত উদাসীন। জনস্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষে দেশের নাগরিকদেরকে পুষ্টিকর খাদ্য যোগান দেয়া, অনিরাপদ খাদ্য সম্পর্কে সচেতন করা সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কিন্তু সরকার সেটা করছে না।'

নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিধানে আমদানি পণ্যের বিভিন্ন ক্ষতিকারক উপাদান শনাক্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন দেশ ও জোট বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ রাষ্ট্রসংঘ কী ধরনের ভূমিকা গ্রহণ করেছে তা উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'জনগণের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশেরও উচিত দেশে আমদানি করা প্রতিটি পণ্য বাজারে ছাড়ার আগে যথাযথভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পণ্যের মান যাচাই করে নেয়া।'

বিচার ব্যবস্থাকে দলীয়করণ করে সরকার মিথ্যা মামলায় বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের দ্রুত সাজা প্রদানে যে প্রক্রিয়া শুরু করেছে তা অবিলম্বে বন্ধের দাবিও জানান বিএনপি মহাসচিব।

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশীয় বিষয়ক সহকারী সচিব ডোনাল্ড লুর ঢাকা সফর প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'দেখুন এসব আমাদেরকে জিজ্ঞাসা না করে ওনাদের (আওয়ামী লীগ সরকার) জিজ্ঞাসা করুন। এসব নিয়ে আমরা ইন্টারেস্টেড না। আমরা মনে করি, বাংলাদেশের জনগণের ওপরই আমাদের ভরসা, আমাদের পুরো আস্থা, সেই আস্থার ওপরে আমরা দাঁড়িয়ে থাকি। রাজনীতিও আমাদের জনগণকে নিয়ে।'

Comments