‘সব দিক থেকেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে—পিছিয়ে আছি কোথায় আমরা?’

‘সব দিক থেকেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে—পিছিয়ে আছি কোথায় আমরা?’
আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা | ছবি: টেলিভিশন থেকে নেওয়া

তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা অনবরত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত করছে ও অপপ্রচার চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন রেখেছেন, সব দিক থেকেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে—পিছিয়ে আছি কোথায় আমরা?

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় তিনি এ কথা বলেন।

পদ্মা সেতু নির্মাণের সাফল্য তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'এক বছরও এখনো হয়নি, এরই মধ্যে পদ্মা সেতুতে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা আমাদের টোল উঠেছে। আমাদের সেতু বিভাগ কিন্তু তাদের খরচাপাতি সব রেখে, সব ব্যয় ধরে, সেটা রেখে এর পরে যে লাভটা হয়; এটা কিন্তু সেইটুকু।'

তিনি বলেন, 'এই যে এক হাজার ৫০০ কোটি টাকা যে আমাদের উপার্জন, সেটা সম্পূর্ণ আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে। অর্থাৎ বাংলাদেশ যে পারে, আমরা যে পারি—আমরা সেটা প্রমাণ করেছি। ৭ মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বলেছিলেন, কেউ দাবায়া রাখতে পারবা না। বাঙালিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। এটাই আমরা প্রমাণ করেছি বিশ্ব দরবারে। যাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হয়েছে।

'আমাদের দুর্ভাগ্য, আমাদের দেশে যারা রাজনৈতিকভাবে একেবারে দেউলিয়া, এদের কিছু বক্তব্য, আর আমাদের দেশে কিছু আছে বুদ্ধি বেচে জীবিকা নির্বাহ করে যাহারা, সেই তথাকথিত বুদ্ধিজীবী, অনবরত তারা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে গিবত গাচ্ছে এবং বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে,' বলেন শেখ হাসিনা।

আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, 'সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে, এ দেশে অতি বাম, অতি ডান সবাই এখন তারা এক হয়ে গেছে। এটা কীভাবে হলো আমি জানি না। এই দুই মেরু এক হয়ে; সারাক্ষণ শুনি আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাত করতে হবে। অপরাধটা কী আমাদের?'

তিনি বলেন, 'কোভিড-১৯ এর সময় আমরা বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দিয়েছি, পৃথিবীর ধনী দেশ দেয়নি কিন্তু বাংলাদেশ দিয়েছে। টেস্টিং আমরা বিনা পয়সায় করিয়েছি, পৃথিবীর কোনো ধনী দেশও করে নাই—আমরা করেছি। আমরা যেভাবে দুই হাতে পানির মতো টাকা খরচ করে মানুষকে বাঁচাবার পদক্ষেপ নিয়েছি, খুব কম দেশই সেটা করতে পেরেছে। আমরা সেখানে সাফল্য অর্জন করেছি।'

শেখ হাসিনা বলেন, 'আজকে আমরা মাতৃ মৃত্যুর হার কমিয়েছি, শিশু মৃত্যুর হার কমিয়েছি, স্বাক্ষরতার হার বাড়িয়েছি, মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি করেছি, মানুষের ঘরের কাছে আমরা চিকিৎসা সেবা নিয়ে গেছি, শিক্ষার ক্ষেত্রে আমাদের অগ্রগতি আছে, সব দিক থেকেই তো বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে—পিছিয়ে আছি কোথায় আমরা? আমাদের মাথাপিছু আয় আমরা বৃদ্ধি করেছি এবং আমাদের প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করেছি। শুধু আজকে কোভিডের অতিমারি আর এরপর রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, স্যাংশন-কাউন্টার স্যাংশন, সারা বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি এবং এই সমস্যার কারণেই কিন্তু আমরা অনেকটা; শুধু আমরা না, সারা পৃথিবীতেই এমনকি উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে।

'তার পরেও আমরা আমাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রেখেছি, আমাদের যে নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ২০০৮ সালে আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম, ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা এক ধাপ উপরে তুলব। রূপকল্প ২০২১ আমরা ঘোষণা দেই। দিন বদলের সনদ আমরা ঘোষণা দেই। আজকে দিন বদল ঘটেছে। সব সময় আমরা লক্ষ্য রেখেছি আমাদের তৃণমূল মানুষ,' বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'প্যালেস্টাইনে ইসরায়েলের গণহত্যার বিরুদ্ধে আমেরিকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা আন্দোলন করছে। আন্দোলন করাকালে একজন মহিলা প্রফেসর, সে বলছে আমি প্রফেসর ইউনিভার্সিটির। পুলিশ তাকে যেভাবে দাবড় দিয়ে ধরে, হাত ধরে পিঠ মোড়া দিয়ে মাটিতে ফেলে হাঁটু দিয়ে তার ওপর চেপে তাকে যেভাবে অ্যারেস্ট করেছে এবং সেখানে ছাত্র-শিক্ষক, তাদের হাতে লাঠিও ছিল না, আগুনও ছিল না, তারা কিন্তু পুলিশের ওপর মারমুখীও ছিল না। তারপরও আমেরিকার পুলিশ যে আচরণ করেছে। ও দেশে মানবাধিকার কতটুকু আছে সেটাই তো প্রশ্ন। কত বলার স্বাধীনতা কতটুকু আছে সেটা প্রশ্ন। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার অধিকার কতটুকু আছে সেটাই আমাদের প্রশ্ন। বাংলাদেশের ওপর মানবাধিকারের রিপোর্ট লেখে, নিজেরা আয়নায় চেহারাটা দেখে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।'

তিনি আরও বলেন, 'তারা যেভাবে আচরণ করে, আমাদের পুলিশ তো তা করেনি! ধৈর্যের পরিচয় দিতে গিয়ে উল্টো তারা মার খেয়েছে বিএনপির হাতে। আজকে যদি আমেরিকার একটা পুলিশের গায়ে যদি কোনো দলের লোক হাত দিতো তারা কী করতো?'

যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের বাঙালি পর পর কতজন মারা গেছে। সেদিনও দুজন বাঙালিকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর প্রতিবাদ জানাই। তারা সেখানে গেছে, জীবন-জীবিকার জন্য গেছে। তাদেরকে এভাবে কেন হত্যা করা হবে? তারা তো কোনো অপরাধ করেনি। ছোট বাচ্চা ছেলেরা পর্যন্ত তাদের হাত থেকে রেহাই পায় না।'

তিনি বলেন, 'হাঁটতে-চলতে পারে না, সে প্রেসিডেন্টকে কী বলেছে এ জন্য তার ঘরে ঢুকে তাকে গুলি করে মেরে এসেছে। একটা বাচ্চা ছেলে, মায়ের কাছে, বাড়ির মধ্যে ঢুকে সেই বাচ্চাকে গুলি করে মেরেছে। কী জবাব দেবে আমাদের যারা  মানবাধিকারের গীত গায় এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার খুঁজে বেড়ায়, তারা এর কী জবাব দেবে? আমি সেই জবাব চাই। জবাব চাই সেই মানবাধিকার সংস্থা, জাস্টিস ডিপার্টমেন্ট এবং যারা আমাদের স্যাংশন দেয়, আমাদের ওপর খবরদারি করে তাদের কাছে। জবাব চাই আমি যে, আমার বাঙালি কেন মারা যাবে?" ও রকম ছোট্ট একটা অপ্রাপ্ত বয়স্ক শিশু, মায়ের কোল থেকে নিয়ে গুলি করে তাকে হত্যা করা। প্রফেসরদের ওপর এ রকম জুলুম করা। মহিলা প্রফেসর, তাকে মাটিতে ফেলে পা দিয়ে...তাকে যেভাবে হ্যান্ডকাফ পরিয়েছে, এর জবাব আমরা চাই। এটা তো সম্পূর্ণ মানবাধিকার লঙ্ঘন করা।'

Comments

The Daily Star  | English

65% of suicide victims among students are teenagers: survey

At least 310 students from schools, colleges, universities and madrasas died by suicide last year

2h ago