দেশে-বিদেশে কোথাও এ দেশের নাগরিকের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নেই: নুর

নুরুল হক নুর। ছবি: সংগৃহীত

গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, 'একটা ভয়ংকর বিপর্যয়ের মধ্যে দেশ। দেশে-বিদেশে কোথাও এ দেশের নাগরিকের মর্যাদা ও নিরাপত্তা নেই। মধ্যপ্রাচ্যে আমাদের নারী শ্রমিকদের ওপর অমানবিক নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন চালানো হলেও কোনো ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই আবার সেখানে কর্মী পাঠানো হচ্ছে। প্রবাসী শ্রমিকরা দেশের বাইরে বিপদে পড়লেও দূতাবাসের পক্ষ থেকে সেভাবে সহযোগিতা করা হচ্ছে না।'

বাংলাদেশ প্রবাসী অধিকার পরিষদের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আজ রোববার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে 'দেশের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, প্রবাসীদের সম্ভাবনা, সংকট ও সুরক্ষা' শীর্ষক আলোচনা সভায় এ কথা বলেন তিনি।

নুর দাবি করেন, 'নেপাল থেকে ৭৮ হাজার টাকায় মধ্যপ্রাচ্যে, মালয়েশিয়া শ্রমিকরা গেলেও আমাদের দেশ থেকে যেতে তাদের ৪ থেকে ৬ লাখ টাকা লাগে। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে শুরু করে এমপি, মন্ত্রী, আমলা—সবাই জড়িত। সবাই কমিশন নেয়।'

প্রবাসী অধিকার পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা নুর বলেন, 'প্রবাসীদের রেমিট্যান্সে দেশ চলছে, অর্থনীতি টিকে আছে। তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। এই যে পত্র-পত্রিকায় লেখা হচ্ছে, টকশোতে আলোচনা হচ্ছে, আমরা কথা বলছি, কিন্তু প্রতিকার হচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের অনুরোধ করবো, দেশ ও জাতির জন্য প্রবাসীদের সহযোগিতা করুন, তাদের পাশে দাঁড়ান। প্রবাসীরা ভালো থাকলে দেশ ভালো থাকবে।'

আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'মধ্যপ্রাচ্যে যারা থাকে, রেমিট্যান্স পাঠায়—তারাই প্রকৃত রেমিট্যান্স যোদ্ধা। তারা অনেক কষ্ট করে দেশে টাকা পাঠান, জমিজমা ও সম্পত্তি কেনেন। দেশে এসে আবার প্রতারিত হন। এই প্রতারণা যে সবসময় সরকার করে তা নয়, অনেক সময় তার আত্মীয়-স্বজনরাও করেন। সরকার মূলত প্রবাসীদের নিয়ে চিন্তা করে না। বরং প্রবাসীদের পাঠানো টাকা কীভাবে পাচার করতে পারবে, সেই টাকা দিয়ে কীভাবে নিজেদের বাড়ি-গাড়ি করতে পারবে, সেই চিন্তা তাদের।'

সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ড. এহসানুল হক মিলন বলেন, 'প্রবাসী ভাইদের পাঠানো রেমিট্যান্সে দেশের অর্থনীতি চলে, রিজার্ভ বৃদ্ধি পায়। জোট সরকারের আমলে বেগম খালেদা জিয়া প্রবাসীদের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় খুলেছিলেন।'

তিনি বলেন, 'প্রবাসীদের দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যারা ব্যাংকের মালিক, তারা তো রেমিট্যান্স যোদ্ধা নয়। তারা সুবিধা নেওয়ার লোক। কোভিডের সময় বিদেশে থাকা সবাই দেশে টাকা পাঠালো, রিজার্ভ বেড়ে ৪৮ বিলিয়ন হলো। সেই রিজার্ভ কীভাবে, কোথায় নেওয়া যায় সেটি নিয়ে নয়-ছয় করে এখন রিজার্ভ সংকট তৈরি করেছে। নানাভাবে দেশের টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। অন্য দিকে রেমিট্যান্স যোদ্ধা প্রবাসীরা যে দুর্ভোগে আছে সেটা দেখা যায় বিমানবন্দরে, দেশের বাইরে।'

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁন বলেন, 'সরকার প্রবাসীদের সঙ্গে দাসের মতো ব্যবহার করছে। এয়ারপোর্ট ও বাংলাদেশি দূতাবাসগুলোতে তাদের ভোগান্তির শেষ নেই।'

১২ দলীয় জোটের মুখপাত্র জাগপার সহসভাপতি রাশেদ প্রধান বলেন, 'সরকার প্রবাসীদের কষ্ট নিয়ে চিন্তিত নয়। বরং বাংলাদেশে কর্মরত ভারতের নাগরিকদের সুযোগ-সুবিধা নিয়ে বেশি চিন্তিত। আমি ছয় বছর উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে ছিলাম। সেখানে দেখেছি প্রবাসীদের কী কষ্ট।'

অনুষ্ঠানে ১০টি সুনির্দিষ্ট দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো—

১. প্রবাসে মারা যাওয়া সব বাংলাদেশি নাগরিকদের মরদেহ রাষ্ট্রীয় খরচে দেশে নিতে হবে। অনিয়মিত, আনডকুমেন্টেড, দুস্থ ও অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ পরিবহন ব্যয় সংক্রান্ত নীতিমালা, ২০২২ দ্রুত বাস্তবায়ন চাই।

২. প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটাধিকার চাই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কূটনৈতিক দূতাবাসগুলোতে বুথ খুলে জাতীয় নির্বাচনে প্রবাসী বাংলাদেশীদের ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সংযুক্ত আরব আমিরাতের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত বাংলাদেশি প্রবাসীদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়া ও ভোটার কার্যক্রম আরও জোরদার করতে হবে।

৩. বিমানবন্দরে প্রবাসী হয়রানি বন্ধ চাই। বিমানবন্দরে প্রবাসী কর্মীদের জন্য ভিআইপি লাউঞ্জের সেবা চাই।

৪. প্রবাসীদের জন্য যুগোপযোগী দ্বৈত নাগরিকত্ব আইন ও পেনশন সুবিধা চাই।

৫. পাসপোর্ট সংশোধনের সুযোগসহ দালালমুক্ত পাসপোর্ট ও দূতাবাস সেবা চাই। পাসপোর্ট সংশোধন সহজ প্রক্রিয়ায় ও দ্রুততার সঙ্গে চাই।

৬. প্রবাসী সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন চাই।

৭. জাতীয় বাজেটে প্রবাসীদের জন্য পাঁচ শতাংশ বিশেষ বরাদ্দ চাই।

৮. বিদেশে কাগজপত্র বিহীন প্রবাসীদের বৈধকরণে সরকারের সহযোগিতা চাই।

৯. বিদেশে প্রবাসীদের জন্য পর্যাপ্ত বাংলাদেশি দূতাবাস ও শ্রম কল্যাণ উইং চাই।

১০. অভিবাসন ব্যয় ১ লাখ টাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ ও প্রবাস ফেরতদের কর্মসংস্থান, সুদমুক্ত পর্যাপ্ত ঋণ সুবিধা চাই।

Comments

The Daily Star  | English

Stay alert against conspiracies: Fakhrul

BNP Secretary General Mirza Fakhrul Islam Alamgir today urged all to stay alert, warning that conspiracies are underway to once again plunge Bangladesh into new dangers

33m ago