কারাগারে বিএনপি নেতাদের মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড: রিজভী
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, অবৈধ ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার বাসনা চরিতার্থ করতে গত ৭ জানুয়ারি বিরোধী দলহীন ডামি নির্বাচন নির্বিঘ্ন ও কণ্টকমুক্ত করার জন্য গুম—খুন—গায়েবি মামলা, হুলিয়া, গ্রেপ্তার—হয়রানি, নিপীড়ন, নির্যাতনের যে ভয়াবহতা চলছিল তা এখনো অব্যাহত রেখেছে ডামি সরকার।'
আজ শুক্রবার নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় রিজভী বলেন, 'অরাজকতা, নৈরাজ্য আর বিশৃঙ্খলার বৃত্তে মানুষকে বন্দী করা হয়েছে। গত ১৭ ডিসেম্বরে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছিলেন যে, নির্বাচনের বাধা দূর করতে বিএনপির ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে জেলে রাখা হয়েছে।'
'পরে জনগণকে প্রতারিত করে, পেশীশক্তির জোরে ৭ জানুয়ারি ভোটারহীন পাতানো ভুয়া নির্বাচনে ষোলকলা পূর্ণ করলেও, ক্ষমতা হারানোর ভয়ে থেমে নেই বিরোধী দলমতের ওপর বহুমাত্রিক জুলুম, উৎপীড়নের অমানবিক নিষ্ঠুরতা,' যোগ করেন তিনি।
'দেশজুড়ে বেপরোয়া গ্রেপ্তার অব্যাহত আছে' উল্লেখ করে রিজভী বলেন, 'দেশের কারাগারগুলো ধারণক্ষমতার কয়েকগুণ বেশি বিএনপি নেতাকর্মীতে ঠাসা। কারা সেলগুলো একেকটি শ্বাসরুদ্ধকর কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে পরিণত করা হয়েছে। প্রতিটি কারাগারের ভেতরে কারাবিধির সব সুযোগ—সুবিধা কেড়ে নিয়ে বন্দী নেতাকর্মীদের ওপর চালাচ্ছে বীভৎস নিপীড়ন। খাওয়ার কষ্ট দেওয়া হচ্ছে, চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে না।'
বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, 'তারা প্রতি মুহূর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। কারা হেফাজতে নির্মম নির্যাতনের শিকার বিএনপি নেতাকর্মীদের কারো না কারো মৃত্যুর সংবাদ আসছে প্রায়ই। গত তিন মাসে কারাগারে নির্যাতন করে বিএনপির ১৩ জন নেতার মৃত্যু হয়েছে কারা হেফাজতে। প্রত্যেকটি মৃত্যু পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।'
'গতকাল বৃহস্পতিবার বিনা অপরাধে রংপুর কারাগারে বন্দী রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার লক্ষ্মীটারি মহিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ—সাংগঠনিক সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলামকে নির্যাতন করে বিনা চিকিৎসায় হত্যা করা হয়েছে। মনোয়ারুলের পরিবার বলছে, ১৩ জানুয়ারি সুস্থ সবল মনোয়ারুলকে পুলিশ দিনের বেলায় বাসা থেকে তুলে থানায় নিয়ে যায়। এরপর সেদিন আদালতে চালান না দিয়ে পরের রাত পর্যন্ত থানায় আটকে রেখে বর্বরোচিত কায়দায় অমানুষিক নির্যাতন করা হয়,' বলেন তিনি।
মনোয়ারুলসহ কারা হেফাজতে মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনার আন্তর্জাতিক তদন্তের দাবি জানান বিএনপি নেতা রুহুল কবির রিজভী।
তিনি বলেন, 'দেশের আইন—আদালত, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন—কোর্ট কাচারি—বিচার—আচার সবকিছুই আওয়ামী ডামি সরকার করতলে বন্দী করে বিএনপিসহ বিরোধীদলের নেতাদের জামিনের সাংবিধানিক ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। আদালতে জামিনের জন্য বারবার আবেদন করলেও নানা টালবাহানা করা হচ্ছে। নিপীড়নের সকল মাত্রা প্রয়োগ করা হচ্ছে বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর।'
'সরকারের সঙ্গে আঁতাত করায় একই মামলায়—একই ধারায় জামিন মিলেছে শাহজাহান ওমরের। অথচ বিএনপি মহাসচিবসহ বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীর জামিন মিলছে না। এটাতে প্রমাণিত হয় শেখ হাসিনার নির্দেশেই পুলিশ ও আদালত একযোগে কাজ করে যাচ্ছে,' যোগ করেন তিনি।
'এখনো বিএনপিসহ বিরোধীদলীয় লাখো নেতাকর্মী মানবেতর অবস্থায় পলাতক জীবনযাপন করছেন। খেয়ে না খেয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন। গণভবন—বঙ্গভবনে খোলা কমান্ড সেন্টারের নির্দেশে দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দী করে রাখা হয়েছে,' বলেন রিজভী।
Comments