‘অর্থপাচারকারী-ঋণখেলাপিদের কিছু হয় না, সাজানো গোছানো রায়ে সাজা হয় ড. ইউনূসের’

রুহুল কবির রিজভী। ছবি: সংগৃহীত

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, 'অর্থপাচারকারী-ঋণখেলাপিদের কিছু হয় না, সাজানো গোছানো রায়ে সাজা হয় ড. ইউনূসের।'

শ্রম আইনে নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাসের কারাদণ্ডের রায় প্রসঙ্গে আজ সোমবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন রিজভী।

রিজভী বলেন, 'আজ ইংরেজি নতুন বছরের প্রথম দিনটি দেশের স্বাধীনতাপ্রিয় গণতন্ত্রকামী জনগণের কাছে মোটেই সুখকর নয়। তামাশার নৌকা আর ডামিদের নির্বাচন ঘিরে সারাদেশে কায়েম করা হয়েছে চরম নৈরাজ্যকর ও ভয়ংকর পরিস্থিতি। পুলিশ ও আওয়ামী তাণ্ডবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় মুক্তিকামী জনগণ গত তিনমাস ঘরবাড়ি ছেড়ে ফেরারী ও উদ্বাস্তু জীবনযাপন করছে। শেখ হাসিনার নির্দেশে ১৮ কোটি মানুষের মৌলিক ভোটাধিকার আদায়ে আন্দোলনরতদের গ্রেপ্তারে হন্যে হয়ে উঠেছে পুলিশ।'

'স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণ এখন নিজ দেশেই পরাধীন' মন্তব্য করে রিজভী বলেন, 'শেখ হাসিনার অবৈধ ক্ষমতালিপ্সার খায়েশ মেটাতে বাংলাদেশ তাবেদার রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। স্বাধীনতার গৌরব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে এখন বিনাভোটে রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে রেখেছে শেখ হাসিনার "ডামি সরকার"। কখন কাকে ধরতে হবে, কাকে মারতে হবে, কাকে রাখতে হবে, কাকে সীমান্তের ওপারে ফেলে আসতে হবে—সব সিদ্ধান্তই আসে অন্য দেশ থেকে।' 

'কয়েকদিন আগেই আমরা সবাই শুনেছি, দেখেছি, চলমান "ডামি নির্বাচনে" এক "ডামি প্রার্থী" প্রকাশ্যেই নিজেকে ভারতের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এমন নির্লজ্জ স্বীকারোক্তির মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হয়েছে, এই "ডামি সরকারে"র স্বাধীন সিদ্ধান্ত নেয়ারও ক্ষমতা নেই,' যোগ করেন তিনি।

বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃত্ববাদী একদলীয় দেশের মতো একদলীয় শাসনের কায়দায় বাকশাল শাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় ফিরে তার কন্যা দেশে নব মডেলের আধুনিক বাকশালী ব্যবস্থা স্থাপন করেছেন, যেটি ত্রিশ দশকের ফ্যাসিস্ট নাৎসিবাদের মতো এক রক্তপিপাসু পদ্ধতির বহিঃপ্রকাশ। এখন তিনি গণতন্ত্রকামী জনগণের একক প্লাটফর্ম বিএনপিকে ফ্যাসিবাদী ভাষায় নিষিদ্ধ করার হুংকার দিচ্ছেন। পৃথিবীর ভয়ংকর একদলীয় একনায়কদের মতো নির্বাচনী নাটক মঞ্চায়ন করে আজীবন ক্ষমতায় থাকার অভিনব পথে হাঁটছেন। যে পদ্ধতিতে তারা কখনোই কোনো নির্বাচনে পরাজিত হন না বা ক্ষমতা হারান না।'

তিনি বলেন, 'এবারের নির্বাচনে তিনি শুধু তার দল, উচ্ছিষ্টভোগী জোট, গৃহপালিত বিরোধীদল, গোয়েন্দা সংস্থার গড়া নকল দল তথাকথিত কুইন্স পার্টি, ভুঁইফোড় পার্টি, ড্রিঙ্কস পার্টি, ছিন্নমূল পার্টি এবং খুচরা কিছু পার্টি আর শেখ হাসিনার নির্দেশে আওয়ামী লীগের ডামি প্রার্থীদের দিয়ে ভাগ-বাটোয়ারার তামাশার নির্বাচনে মরিয়া হয়ে উঠেছেন। এই ৩০০ আসনের নির্বাচনে ২ হাজার ২৬০ জন প্রার্থী হলেও, ভোটার কেবল একজনই। তিনি খোদ শেখ হাসিনা, যিনি যাদের পছন্দ করবেন তাকেই সিলমোহর দিয়ে কাজী হাবিবুল আউয়াল তার আওয়ামী নির্বাচন কমিশনারের মাধ্যমে নির্বাচিত ঘোষণ করবেন।'

'এই পাতানো আমি-ডামির নির্বাচন জমাতে পারছে না তারা। বিবিসির প্রতিবেদনেও বলা হয়েছে যে, আগামী ৭ জানুয়ারি বাংলাদেশে জাতীয় এই নির্বাচনের অনিবার্য ফলাফল কী হবে তা এরই মধ্যে স্পষ্ট। ভোট বর্জনে সারাদেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে দেখে আতঙ্কিত শেখ হাসিনাসহ তার পুরো মাফিয়াচক্র। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এখন লাঠিয়ালের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। তিনি বলেছেন যে, বিএনপি নির্বাচনকে প্রতিহত করার চেষ্টা করলে তা প্রতিহত করা হবে। তিনি খোলস খুলে সরাসরি আওয়ামী লীগের মাফিয়া নেতার রূপ ধারণ করেছেন। আওয়ামী লীগ আর সিইসি যেন সহোদর দুই ভাই,' যোগ করেন তিনি।

নির্বাচন কমিশনারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'একদলীয় আমরা আর মামুদের পাতানো তামাশার নির্বাচন নাটক করছেন, এটা কি সমগ্র বিশ্ব তাকিয়ে দেখছে না? তাদের কি অন্ধ মনে করেন? ৭ জানুয়ারির নির্বাচন গোটা বিশ্ববাসী নিবিড়ভাবে অবলোকন-পর্যবেক্ষণ করছে। বাংলাদেশকে আপনারা বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন করে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিয়েছেন। এই ভোট ডাকাত সরকারের পতনের সঙ্গে সঙ্গে আপনাদের রক্ষা করার কেউ থাকবে না।'

শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলায় শান্তিতে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ৬ মাসের কারাদণ্ডের রায়ের উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'গণভবনের এই রায়ে পুরো জাতি লজ্জিত। ফরমায়েশি রায়ের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং ক্ষোভ জানাচ্ছি। প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে এই রায় যে দেয়া হয়েছে তার প্রমাণ শেখ হাসিনা অব্যাহতভাবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে বিষোদগার এবং তাকে হুমকি দেওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে। ২০২২ সালের ১৮ মে এক আলোচনা সভায় শেখ হাসিনা পদ্মা নদীতে টুস করে ফেলে দিয়ে হত্যা করার হুমকি দেন বেগম খালেদা জিয়াকে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে পদ্মা সেতু থেকে পানিতে ফেলে চুবিয়ে মারার হুমকি দিয়েছিলেন। তখন থেকেই স্পষ্ট হয় নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনুসকে নিয়ে তার গভীর দুরভিসন্ধি করা হচ্ছে। দেশে লাখ-কোটি টাকা পাচারের হোতা, লুটেরা, ব্যাংক ডাকাত, ঋণখেলাপিদের কিছুই হয় না। সম্পূর্ণ সাজানো গোছানো রায়ে সাজা দেওয়া হয় ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো জাতির গর্বকে।' 

সংবাদ সম্মেলনে তিনি সরকারের পদত্যাগ ও নির্বাচনকালীন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার একদফা দাবিতে এবং নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তিনদিন গণসংযোগ ও লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

Comments

The Daily Star  | English
eid-ul-azha emergency cases at pongu hospital

An Eid evening at Pongu Hospital: overflowing emergency, lingering waits

The hospital, formally known as NITOR, is a 1,000-bed tertiary medical facility that receives referral patients from all over the country

1h ago