সুনামগঞ্জ: আওয়ামী লীগ মনোনীতদের সামনে ‘দলীয় স্বতন্ত্র’ চ্যালেঞ্জ

ওপরে বাম থেকে রনজিত চন্দ্র সরকার, চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ, ড. মোহাম্মদ সাদিক ও মুহিবুর রহমান মানিক। নিচে বাম থেকে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, সেলিম আহমদ, জয়া সেনগুপ্ত, এনামুল কবির ইমন ও শামীম আহমদ চৌধুরী।

দলীয়ভাবে মনোনীত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে 'স্বতন্ত্র' হিসেবে দলীয় নেতাদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা উন্মুক্ত করে দেওয়ায় বেকায়দায় পড়েছেন সুনামগঞ্জের চারটি আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা।

এসব প্রার্থীদের মধ্যে কেউ দলীয় বিভক্তি নিয়ে উৎকন্ঠিত, কেউ আশা করছেন শেষ মুহূর্তে হয়তো পাল্টে যেতে পারে দলীয় অবস্থান। আর এ উৎকণ্ঠার কারণে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরুর আগেই বিধি ভেঙে বিরতিহীন জনসংযোগ করছেন তারা।

হাওরবেষ্টিত সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে চারটি আসনেই নৌকা প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন প্রভাবশালী দলীয় নেতারা, যার মধ্যে দুজন মনোনয়নবঞ্চিত বর্তমান সংসদ সদস্যও আছেন।

তবে একইসময়ে নির্ভার আছেন পরিকল্পনামন্ত্রী, সুনামগঞ্জ-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও একই আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এম এ মান্নান।

সুনামগঞ্জের প্রত্যন্ত তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও মধ্যনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-১ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতনকে বাদ দিয়ে এবার আওয়ামী লীগের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের নতুন সদস্য অ্যাডভোকেট রনজিত চন্দ্র সরকারকে।

তবে মনোনয়নবঞ্চিত সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। একইসাথে দলীয় মনোনয়ন চেয়ে বঞ্চিত হওয়া সুনামগঞ্জ জেলা শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি সেলিম আহমদও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বর্তমান সংসদ সদস্য ও প্রভাবশালী এক নেতার স্বতন্ত্র প্রার্থীতায় এ আসনে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করছে আর ভোটারদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে তিন প্রার্থীই আচরণবিধি ভেঙে বিরতিহীনভাবে জনসংযোগ করে যাচ্ছেন।

তবে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের কারণে কোনো চাপ নেই দাবি করে রনজিত চন্দ্র সরকার বলেন, 'আমি কোনো চাপ অনুভব করছি না। এলাকার মানুষ নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ।'

সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা উপজেলা) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ও প্রয়াত রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী জয়া সেনগুপ্ত এবার মনোনয়নবঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

জয়ার পরিবর্তে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন শাল্লা উপজেলার সদ্য পদত্যাগকৃত চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পুলিশ মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুনের ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ (আল আমিন)।

চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মাহমুদ বলেন, 'ঐতিহ্যগতভাবে দিরাই শাল্লার মানুষ নৌকার সমর্থক। এখানে আওয়ামী লীগে যতই অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকুক না কেনো, নির্বাচন এলে সবাই নৌকার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়ে যান। এবারও তাই হবে আশা করছি।'

স্থানীয় আওয়ামী লীগের অন্তর্কোন্দলের জন্য সুনামগঞ্জ জেলা সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৪ আসন গত দুই দফায় জাতীয় পার্টির জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এবারও জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী দুই গ্রুপের দুই নেতা আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চান।

তবে দলীয় কোন্দল এড়াতে আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরষ্কারপ্রাপ্ত কবি ড. মোহাম্মদ সাদিককে। ড. সাদিক ২০১৪ সালে নির্বাচন কমিশন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ে অপরিচিত ড. সাদিক মনোনয়ন পাওয়ার পর থেকেই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘণ করে নিজের পরিচিতিমূলক পথসভা ও জনসংযোগ করে যাচ্ছেন। তবে তার জন্য সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র আওয়ামী লীগ নেতা।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এনামুল কবির ইমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।

ড. সাদিক বলেন, 'তিনি (ইমন) বলেছেন যে এই আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেয়া হলে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন, নয়তো সরে যাবেন। আমি আশা করছি মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে জাতীয় পার্টির সাথে।'

সুনামগঞ্জের ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা নিয়ে গঠিত সুনামগঞ্জ-৫ আসনে চার বারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক এবারও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন। তবে ষষ্ঠবারের মতো তার বিজয়ের রাস্তায় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত নেতা শামীম আহমদ চৌধুরী।

সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ চৌধুরী দীর্ঘদিন ধরে মুহিবুর রহমান মানিকের বিরুদ্ধে জনসমর্থন অর্জন করছেন আর জাতীয় নির্বাচনের আগে শামীমের অবস্থান মানিকের জন্য শক্ত চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

মুহিবুর রহমান মানিকও মনে করেন যে দলের স্বতন্ত্র প্রার্থীর জন্য দলে বিভক্তি দেখা দিচ্ছে যা সরাসরি দলের ক্ষতি করছে।

তিনি বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনে দলীয় নেতাদের এভাবে প্রার্থীতা ছেড়ে দেওয়া দলের জন্য ক্ষতিকর। কেবলমাত্র স্থানীয় পর্যায়ে নয়, বরং জাতীয় পর্যায়ে। এ ব্যাপারে দলের শৃঙ্খলা ধরে রাখতে কেন্দ্রের উচিত একটি নির্দেশনা দেওয়া।

Comments