দুই মেয়াদে ফুলে ফেঁপে উঠেছে এমপি জিন্নাহর সম্পদ, স্ত্রীও হয়েছেন কোটিপতি

শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ
শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ। ছবি: সংগৃহীত

পাঁচ বছর আগে যার কৃষি জমি ছিল মাত্র দেড় শতকের কম, বর্তমানে তার কৃষি জমি ১২০০ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬৯৩ শতক। পাঁচ বছর আগে যার বার্ষিক আয় ছিল মাত্র ৩ লাখ টাকার কিছু বেশি, আজ তার ও পরিবারের সদস্যদের বার্ষিক প্রায় ৭০ লাখ টাকা।

১০ বছর আগে যার অস্থাবর সম্পদের মূল্য ছিল ৮ লাখ টাকার নিচে, এখন তার অস্থাবর সম্পদের মূল্য প্রায় ৩ কোটি টাকা। ২০১৩ সালে যার স্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র ৫ লাখ টাকার, আজ তার স্থাবর সম্পদ ৪৯ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে আড়াই কোটি টাকা।

শুধু তাই নয়, ১০ বছর আগে স্ত্রীর কাছে নগদ টাকা ছিল মাত্র ৫০ হাজার, আর আজ স্ত্রীর হাতে নগদ টাকা রয়েছে ১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। স্ত্রীর বর্তমান অস্থাবর সম্পদের মূল্য প্রায় আড়াই কোটি টাকা।

১০ বছর আগে স্ত্রী ছাড়া পরিবারের অন্য সদস্যরা কোনো আয় না করলেও বর্তমানে তারা কোটিপতি। আর এ সবই সম্ভব হয়েছে পরপর দুবার এমপি নির্বাচিত হওয়ার সুবাদে।

বগুড়া-২ আসনের (শিবগঞ্জ উপজেলার) জাতীয় পার্টির নেতা শরিফুল ইসলাম জিন্নাহ আওয়ামী লীগের জোট হিসেবে ২০১৪ সালে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। এর পরে ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনেও তিনি জাতীয় পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হন। এরপর তার সম্পদ বেড়েছে কমপক্ষে ৩০ গুণ আর তার পরিবারের সদস্যদের ধন -সম্পদ ফুলে ফেঁপে উঠেছে শতগুণ।

২০১৪, ২০১৮ এবং ২০২৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য নির্বাচন কমিশনে জিন্নাহর জমা দেওয়া হলফনামা বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

২০১৮ সালে জিন্নাহর আয়ের উৎস ছিল কৃষি, বাড়িভাড়া ও ব্যবসা। কৃষি খাত থেকে সেই সময় তার বার্ষিক যায় ছিল মাত্র ২০০০ টাকা, বাড়ি বা দোকান ভাড়া থেকে পেতেন মাত্র ১৮০০ টাকা এবং ব্যবসা (ইট ভাটা) থেকে বার্ষিক আয় করতেন ৩ লাখ ১৫ হাজার ৮০০ টাকা। এই সময় তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের কেউ কোনো আয় করতেন না। এমনকি ২০১৩ সালেও তার আয় ঠিক একই রকম ছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে জিন্নাহ ও তার পরিবার যেন আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়েছেন।

২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনে জিন্নাহর দেওয়া হলফনামায় দেখানো হয়েছে, বছরে তার আয় ৩ লাখ ১৯ হাজার ৬০০ টাকা। এই সময়ে তার স্ত্রী বা পরিবারের অন্য কারো কোনো আয় ছিল না। কিন্তু বর্তমানে জিন্নাহর নিজের বাৎসরিক আয় দেখানো হয়েছে ৪১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬১ টাকা, তার ওপর নির্ভরশীলদের যায় দেখানো হয়েছে ২৮ লাখ ৩৫ হাজার ২০০ টাকা। অর্থাৎ এখন তার পরিবারের মোট বার্ষিক আয় ৬৯ লাখ ৫০ হাজার ৭৬১ টাকা, যা গত ১০ বছরের তুলনায় প্রায় ২১ দশমিক ৭৫ গুণ বেশি।

২০১৩ সালে জিন্নাহর অস্থাবর সম্পদ ছিল নগদ টাকা, একটি মোটরসাইকেল, স্বর্ণালংকার, ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও আসবাবপত্র, যার মোট মূল্য ছিল মাত্র ৭ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। বর্তমানে জিন্নাহর অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ টাকা ৯৭.৯৪ লাখ, ব্যাংকে জমা ৭২.৬৯ লাখ, একটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি যার দাম ধরা হয়েছে ১.১ কোটি, স্বর্ণ রয়েছে ৭৫ হাজার টাকার, আসবাবপত্র ৮০ হাজার টাকার এবং ব্যবসায় স্থায়ী বিনিয়োগ রয়েছে ১৮.৬২ লাখ টাকা। বর্তমানে তার নিজ নাম অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ মোট ২ কোটি ৯১ লাখ ৭৭ হাজার ২৬ টাকা। অর্থাৎ টানা দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৩৮ গুণের বেশি ।

২০১৩ সালের হলফনামা অনুযায়ী, স্ত্রীর নাম অস্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র ৮ লাখ ৮৫ হাজার টাকার। বর্তমানে স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে নগদ টাকা ১ কোটি ২৬ লাখ, ব্যাংকে রয়েছে ৬২.৮৪ লাখ, পোস্টাল, সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ রয়েছে ২৮ লাখ, একটি ট্রাক রয়েছে যার দাম ধরা হয়েছে ১৫.২৫ লাখ, ৪০ তোলা স্বর্ণ রয়েছে যার দাম ধরা হয়েছে ২ লাখ, এ ছাড়া ১ লাখ টাকার ইলেকট্রনিকস সামগ্রী ও ১ লাখ টাকার আসবাবপত্র ধরা হয়েছে। বর্তমানে স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদের মোট মূল্য ধরা হয়েছে ২ কোটি ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৩৩০ টাকা। অর্থাৎ গত ১০ বছরে স্ত্রীর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ২৬ গুণের বেশি। এ সময় স্ত্রী ছাড়া পরিবারের আর কারো অস্থাবর সম্পদ না থাকলেও বর্তমানে স্ত্রী ছাড়া তার ওপর নির্ভরশীল পরিবারের অন্য সদস্যদের অস্থাবর সম্পদ রয়েছে ৯৯.২৯ লাখ টাকার।

২০১৩ সালের হলফনামা অনুযায়ী জিন্নাহর স্থাবর সম্পদ ছিল ১ দশমিক ৪০ শতক জমি, যার দাম ধরা হয়েছিল ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা। অকৃষিজ জমির পরিমাণ উল্লেখ ছিল না, কিন্তু দাম ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এ ছাড়া একটি পুকুর ছিল যার দাম ধরা হয়েছিল ৮০ হাজার টাকা। অর্থাৎ ২০১৩ সালে জিন্নাহর মাত্র ৫ লাখ ৩০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ ছিল। বর্তমানে জিন্নাহর স্থাবর সম্পদের মোটমূল্য উল্লেখ করা হয়েছে ২ কোটি ৬১ লাখ ৮৯ হাজার ১৪৫ টাকা। গত ১০ বছরের তুলনায় বেড়েছে ৪৯ গুণের বেশি (৪৯.৪২ গুণ)।

অন্যদিকে ২০১৩ সালে জিন্নাহর স্ত্রীর স্থাবর সম্পদ ছিল মাত্র ৯ লাখ ২০ হাজার টাকার। এর মধ্যে কৃষি জমি ছিল দশমিক ৭ শতক যার মূল্য ছিল ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা এবং শহরে একটি পাকা বাড়ি ছিল যার দাম ধরা হয়েছিল ৭ লাখ ৮০ হাজার টাকা মাত্র। বর্তমানে জিন্নার স্ত্রীর নামে কৃষি জমি রয়েছে ১৫৬ শতক যার মূল্য ধরা হয়েছে ২৭ লাখ টাকার বেশি।

২০১৩ সালে পরিবারের অন্য আর কোনো সদস্যের স্থাবর সম্পদ না থাকলেও বর্তমানে জিন্নাহর ওপর নির্ভরশীল অন্য সদস্যদের নেমে অকৃষিজ যে জমি রয়েছে তার দাম ১০ লাখ ২৬ হাজার টাকা।

২০১৮ সালের হলফনামাতে অন্যান্য অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজের নাম একটি ৩২ বোর পিস্তল ছিল যার দাম উল্লেখ করা হয়েছে ১৫০০ টাকা এবং নিজের নাম আরও একটি ২২ বোরের মিনি রাইফেল ছিল যার দাম ধরা হয়েছে ১ লাখ টাকা। বর্তমান হলফনামার অস্ত্র দুটির কথা উল্লেখ নেই।

পাঁচ বছর আগে শরিফুল ইসলাম জিন্নাহর নাম কোন মামলা ছিল না। কিন্তু এবার দুদক জ্ঞাতআয় বহিৰ্ভূত সম্পদ অর্জন এবং সম্পদের তথ্য গোপন করার অভিযোগে দুটি মামলা করেছে। হলফনামায় দেখানো হয়েছে মামলা দুটি তদন্তাধীন আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Leading univs withdrawing from cluster system

Session delays, irregularities, and lack of central planning cited as reasons

10h ago