ছাত্রলীগ কর্মীর নাশকতা মামলায় ‘মানসিক রোগে’ ভোগা সরকারি কর্মকর্তা কারাগারে, হারালেন চাকরি

মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও, বাসার সামনে থেকে পুলিশ ওমর ফারুককে তুলে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখায়। গ্রেপ্তার ও কারাগারে যাওয়ার পর গতকাল বুধবার তাকে চাকরি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
নাশকতা মামলায় গ্রেপ্তারের পর বুধবার বরখাস্ত হন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ওমর ফারুক। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় বিএনপির ডাকা চলমান অবরোধ ও হরতালকে কেন্দ্র করে এক ছাত্রলীগ কর্মীর করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন 'মানসিক রোগে' ভোগা এক সরকারি কর্মকর্তা। 

গ্রেপ্তার ওমর ফারুক প্রকাশ খোরশেদ ফটিকছড়ি উপজেলার নারায়ণহাটে উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তাকে গত ১ নভেম্বর গ্রেপ্তারের পর আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। 

পরিবার ও সহকর্মীরা বলছেন, ওমর ফারুক গত এক বছরের বেশি সময় ধরে মানসিক রোগে ভুগছেন। হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়েছে তাকে, নিচ্ছেন নিয়মিত চিকিৎসা। 

তাদের অভিযোগ, মামলার এজাহারে নাম না থাকলেও, বাসার সামনে থেকে পুলিশ ওমর ফারুককে তুলে নিয়ে গ্রেপ্তার দেখায়।

গ্রেপ্তার ও কারাগারে যাওয়ার পর গতকাল বুধবার তাকে চাকরি সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

পুলিশের দাবি, হাটহাজারী পৌরসভাধীন মিরেরখীল এলাকার বাসিন্দা ওমর ফারুক চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক। 

তবে দ্য ডেইলি স্টার ওমর ফারুকের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। স্থানীয় সূত্র জানায়, তিনি ছাত্র অবস্থায় ছাত্রদলের সমর্থক ছিলেন।

পুলিশ জানায়, গত ৩০ অক্টোবর হাটহাজারী মডেল থানায় নাশকতা, বিস্ফোরণ, ভাঙচুর ও মারধরের অভিযোগে মামলা করেন স্থানীয় ছাত্রলীগকর্মী জিসান চৌধুরী শ্রাবণ। মামলায় বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের ৩২ নেতাকর্মী এবং অজ্ঞাত আরও ৭০-৮০ জনকে আসামি করা হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, ২৯ অক্টোবর রাত ১১টার দিকে হাটহাজারী পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে চট্টগ্রাম-খাগড়াছড়ি মহাসড়কে ১০০-১২০ জনের একটি জমায়েত দেখতে পান। এ সময় তাকে দেখতে পেয়ে আসামিরা দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে তার ওপর হামলা করে।

মামলার এজাহারে জিসান বলেন, আসামিরা তাকে ভয়ভীতি দেখায় এবং সরকারের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে। একপর্যায়ে তারা সেখানে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়।

এই মামলার ৩২ জন এজাহারনামীয় আসামির মধ্যে ওমর ফারুকের নাম না থাকলেও, হাটহাজারী থানা পুলিশ তাকে আটক করে আদালতে পাঠায়।

ওমর ফারুকের ভাই মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'দয়া করে নিউজ করবেন না। আমরা আর কোনো সমস্যা পড়তে চাই না।' 

এক পর্যায়ে তিনি বলেন, 'যে ঘটনায় আমার ভাইকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তার সঙ্গে সে কোনোভাবেই জড়িত না। সে দীর্ঘ আড়াই বছর ধরে মানসিকভাবে অসুস্থ। বাসার সামনের রাস্তার থেকে তাকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমাদের কোনো কথাই শোনেনি পুলিশ।'

পরিবারের দেখানো চিকিৎসাপত্র অনুযায়ী, ওমর ফারুক চট্টগ্রাম নগরীর ফয়েজ লেকের বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ইউএসটিসির অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ শফিউল হাসানের অধীনে চিকিৎসাধীন আছেন। ২০২১ সাল থেকে তিনি তার কাছ থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। 

তবে, এ চিকিৎসাপত্রের সত্যতা যাচাই করতে পারেনি দ্য ডেইলি স্টার।

জানতে চাইলে ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার মো. হাসানুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওমর ফারুক মানসিকভাবে অসুস্থ আছেন দীর্ঘদিন। ফটিকছড়িতে আসার আগে তিনি ফেনীতে কর্মরত ছিলেন। মাস সাতেক আগে তিনি ফটিকছড়ি বদলি হয়ে আসেন। তিনি অসুস্থ বলে সবচেয়ে কম কাজের জায়গা নারায়ণহাটের দায়িত্ব তাকে দিয়েছিলাম।'

'তিনি মাসখানেক ছুটি নিয়ে হাসপাতালেও ভর্তি ছিলেন। তার কথাবার্তা স্বাভাবিক না। তার অসুস্থতার বিষয়ে আমরা সবাই অবগত আছি। আটক বা গ্রেপ্তার কথা আমরা কিছুদিন পরে জানতে পেরেছি। তখন আমাদের করার কিছু ছিল না। ১৫ নভেম্বর তাকে চাকরি থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে,' বলেন হাসানুজ্জামান।

ওমর ফারুককে গ্রেপ্তারের বিষয়ে জানতে চাইলে হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'কে মানসিক রোগী, কে রোগী না সেটা আদালত সিদ্ধান্ত নেবেন। মানসিক রোগী মুখে বললে হবে না, আদালতে কাগজপত্র উপস্থাপন করতে হবে। আদালত তখন সিদ্ধান্ত নেবেন।'

জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. হারুনুর রশিদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওই মামলায় আমরা ১৭-১৮ জনকে গ্রেপ্তার করেছি। কে কী সেটা দেখার সময় পায়নি। আমাদের কেউ বলেনি।'

ওমরা ফারুকের পরিবারের অভিযোগ মিথ্যা বলেও দাবি করেন তিনি।

 

Comments