৬২ কিলোমিটার দূরের উপজেলায় গিয়ে নাশকতার অভিযোগ, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা

স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

সরকার পতনের একদফা দাবিতে চলমান অবরোধ কর্মসূচিতে চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় নাশকতা চালানোর অভিযোগে বিএনপি নেতাকর্মীদের আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন এক ছাত্রলীগ নেতা।

গত শুক্রবার হাটহাজারী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় ৫৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

এর মধ্যে ৬২ কিলোমিটার দূরে কর্ণফুলী নদীর ওপারে চট্টগ্রামের সর্বশেষ উপজেলা বাঁশখালীর গন্ডামারা ইউনিয়নের বরখাস্তকৃত চেয়ারম্যান লেয়াকত আলী এবং ওই এলাকার ১০ জন বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

বাঁশখালী থানায় পুলিশের দায়ের করা অস্ত্র মামলায় জামিন নিয়ে গত ১৪ জুন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হন লেয়াকত আলী। অস্ত্রসহ ধরা পড়ায় ইউপি চেয়ারম্যান পদ থেকে বরখাস্ত হন তিনি। এছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা ভাঙার অভিযোগে ইতোমধ্যে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি।

মামলাটি দায়ের করেছেন হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা এবং চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ছাত্রলীগের মুক্তিযোদ্ধা ও গবেষণা বিষয়ক উপসম্পাদক মো. রকিবুল হাছান।

রকিবুল নগরীর সরকারি চট্টগ্রাম কলেজের ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।

মামলার এজাহারে রকিব উল্লেখ করেন, গত ৯ নভেম্বর অনুমানিক রাত সাড়ে ১০টার দিকে রকিব ও তার কয়েকজন বন্ধু ব্যক্তিগত কাজ শেষে চৌধুরীহাট বাজার থেকে বাড়ি ফিরছিলেন। তারা দেখেন, হাটহাজারী মডেল থানাধীন ইসলামিয়ারহাট বাদামতল সংলা এশিয়ান পেপার মিলের পূর্ব পাশে সয়েল বিভার্সের সামনে হাটহাজারী-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর অন্তত ১১০ থেকে ১২০ জন লোক জড়ো হয়েছেন। তাদের মধ্যে এক নম্বর আসামি মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন প্রকাশ ওরফে গিয়াস চেয়ারম্যানের (৫০) নেতৃত্বে আসামিরা দেশীয় অস্ত্ৰ-শস্ত্র হাতে রকিবের পথরোধ করেন এবং হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালান। তারা ভয়-ভীতি দেখান, হুমকি দেন। হঠাৎ পর পর কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান তারা।

সংবাদ পেয়ে হাটহাজারী মডেল থানা পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বিস্ফোরকের নানান আলামত জব্দ করেছে বলেও এজাহারে উল্লেখ করেছেন রকিব।

তার দাবি, রাস্তায় চলা গাড়ি এবং বৈদ্যুতিক আলোতে তিনি আসামিদের চিনতে পেরেছেন।

'আমি স্থানীয় লোকজনের সহায়তায় হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা গ্রহণ করি। এরপর আমার আত্মীয়-স্বজন ও স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে থানায় এসে মামলা করি। যে কারণে এজাহার দায়ের করতে বিলম্ব হয়,' বলেন তিনি।

নাশকতায় সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন লেয়াকত। তিনি বলেন, 'পরিকল্পিতভাবে গায়েবি মামলা করেছেন ছাত্রলীগ নেতা।'

লেয়াকত বলেন, 'আমি এবং বাঁশখালীতে আমার কোনো রাজনৈতিক কর্মী গত কয়েক মাসে হাটহাজারীতে যাননি। তিনি বাদীকে চেনেন না। এই গায়েবি মামলায় পরিকল্পিতভাবে পুলিশ বাঁশখালীর নেতাকর্মীদের নাম দিয়েছে।'

রকিব দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, '৩০ থেকে ৪০ জন বিএনপি নেতাকর্মী রাস্তায় ছিল। আসামিরা আমাকে মারধর করেছে, গাড়ি ভাংচুর করেছে। তাই মামলা করেছি।'

রাতের বেলায় এত অল্প সময়ে কীভাবে সবাইকে দেখেতে পেলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'রাস্তার পাশে অন্ধকারে ঘন ঝোপের মধ্যে বাকি আসামিরা লুকিয়ে ছিল, আমাকে আমার জুনিয়ররা বলেছেন তাদের নাম। তারা দেখেছে।'

একজন পুলিশ কনস্টেবল ও দুই জন স্থানীয় ব্যক্তি আলামত জব্দের সাক্ষী। খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, স্থানীয় দুজনই আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত। হানিফ যুবলীগ এবং নয়ন ছাত্রলীগের রাজনীতি করেন।

আসামি লেয়াকত ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমার বিরুদ্ধে গায়েবি মামলা থামছেই না। এর আগে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে আমাকে আটক করে পুলিশই অস্ত্র ধরিয়ে দিয়ে মামলা দেয়। ১২৫ দিন জেল খেটে জামিনে বের হওয়ার পরে ভয়ে আমি শহর থেকে বাঁশখালীর গন্ডামারায় আমার বাড়িতে চলে এসেছি। অবরোধ শুরুর পর থেকে বাঁশখালী থানা পুলিশ আমার ও আমার কর্মীদের বিরুদ্ধে তিনটি গায়েবি মামলা দিয়েছে।

'এত দিন আমি আমার এলাকায় গায়েবি মামলায় আসামি হয়েছি, এবার ভিন্ন একটি উপজেলায় গায়েবি মামলার আসামি করা হলো। হাটহাজারীর সেই মামলাটি আমার উপজেলা থেকে অনেক দূরে,' বলেন তিনি।

মামলার ব্যাপারে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার (বিশেষ শাখা) আবু তয়ব আরিফ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমি এই বিষয়ে সঠিক তথ্যটি বলতে পারবো না। থানার ওসি এই বিষয়টি ভালো জানেন।'

হাটহাজারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুজ্জামানকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

নগর বিএনপির সাবেক দপ্তর সম্পাদক ইদ্রিস আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মহানগর এলাকায় ১৬টি মামলা হয়েছে। মোট মামলা হয়েছে ৫০টি। এসব মামলা গ্রেপ্তার হয়েছে ৭০০ নেতাকর্মী।'

গণমাধ্যমে পাঠানো বিবৃতিতে বিএনপি নেতারা দাবি করেছেন, চট্টগ্রামে একটি চক্র যানবাহনে আগুন দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করছে।

Comments

The Daily Star  | English
Bangladesh-India relations

The Indian media and Bangladesh-India relations

The bilateral relationship must be based on a "win-win" policy, rooted in mutual respect, non-hegemony, and the pursuit of shared prosperity and deeper understanding.

18h ago