দেশে-বিদেশে সবাই সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে ওয়াকিবহাল: রিজভী

রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নানা ধরনের ফন্দি করে আবারও ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে চান।
আওয়ামী লীগের কিংস পার্টি
রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশন বলেছে যে গত ২৮ অক্টোবর হামলাকারী মুখোশপরা হেলমেটধারী ব্যক্তিরা সরকারের লোক। দেশ-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চ-পর্যায়ের সংস্থা সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে এখন ওয়াকিবহাল।

আজ বুধবার সন্ধ্যায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, 'গতকালের প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনের বক্তব্যে প্রমাণিত হলো তিনি নানা ধরনের ফন্দি করে আবারও ভোটারবিহীন একতরফা নির্বাচন করতে চান। তিনি রাজনৈতিক সমঝোতা ও সম্প্রীতি এবং অবাধ, অংশগ্রহণমূলক ও সুষ্ঠু নির্বাচনে বিশ্বাসী নন।'

বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, 'অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একদফা দাবিতে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সাগরসম মানুষের উপস্থিতিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভালো চোখে দেখেননি। এজন্য তিনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দিয়ে গুলি, টিয়ার শেল ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সাংবাদিকসহ বিএনপি নেতাদের হত্যাসহ অসংখ্য নেতাকর্মীকে গুরুতর আহত করান।'

'বিএনপির সমাবেশকে পণ্ড করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আস্থা আরও বেড়েছে। আর এ কারণেই তারা আরও বেশি বেপরোয়া ও নারকীয় তাণ্ডবে লিপ্ত হয়েছে। ২৮, ২৯ ও ৩১ অক্টোবর বিএনপির কর্মসূচিতে ঢাকাসহ সারাদেশে তারা হত্যার প্রতিযোগিতায় মেতে ওঠে,' বলেন তিনি।

রুহুল কবির রিজভী বলেন, 'প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে বিবেকহীন পুলিশ বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর নিষ্ঠুর নির্যাতন চালাতে আরও বেশি উৎসাহী হয়ে ওঠে। পুলিশ রক্তের যে হোলিখেলা খেলছে সেটি নজিরবিহীন পৈশাচিক ঘটনা। গতকাল সাংবাদিক সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী অনর্গল মিথ্যা কথা বলেছেন সারা জাতির সামনে। অথচ দেশবাসী ও আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় যা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে সেটাকে পরিবর্তন করবেন কীভাবে?'

তিনি আরও বলেন, 'জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক কমিশন বলেছে যে মুখোশপরা হেলমেটধারী ব্যক্তিরা সরকারের লোক। এভাবে দেশ-বিদেশে বিভিন্ন উচ্চ-পর্যায়ের সংস্থা সরকারের পরিকল্পিত আক্রমণ সম্পর্কে এখন ওয়াকিবহাল।'

'আওয়ামী লীগ শুধু বিরোধীদলের নেতাকর্মীদের আক্রমণ ও জখম করে হতাহত করছে না খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের ন্যায্য দাবির আন্দোলনকেও রক্তাক্ত পন্থায় দমন করছে,' যোগ করেন তিনি।

'আওয়ামী সরকারের ক্ষমতা ক্ষুধা এতটাই তীব্র যে তারা সারা দেশকে গোরস্থান বানিয়ে ক্ষমতা দখলে রাখতে চায়' মন্তব্য করে রিজভী বলেন, 'আওয়ামী লীগের "টপ টু বটম" নেতাকর্মীদের ভাষা একগুয়েমি গুণ্ডা-সন্ত্রাসীদের মতো। তাদের কাছে গণতান্ত্রিক আদর্শ ও মূল্যবোধ, সুশাসন ও ন্যায়বিচারের কোনো মূল্য নেই। অবৈধ ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে প্রভু হয়ে ক্ষমতায় থাকতে চায় তারা।'

'এ কারণে তারা বিরোধীদলের আওয়াজ নিস্তব্ধ করতে নিজেদের মনের মতো করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সাজিয়েছে। আর তারই প্রতিফলন বিএনপিসহ বিরোধীদলের কর্মসূচিতে শেখ হাসিনার বিশ্বস্ত লাঠিয়ালের মতো তাদের আক্রমণ,' বলেন তিনি।

'আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও যুবলীগ-ছাত্রলীগ একযোগে "ডাণ্ডালীগ" হিসেবে কাজ করছে' মন্তব্য করে রিজভী আরও বলেন, 'তারা সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের কফিনে পেরেক ঠুকছে। বিরোধী দলকে স্তব্ধ করার উদ্দেশ্য হচ্ছে দেড় দশকের আওয়ামী লুণ্ঠন ও অর্থপাচারের কাহিনীগুলো যেন সাধারণ জনগণ জানতে না পারে।'

তিনি বলেন, 'পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলে মানুষের পেট ভরছে না। বিপুল জনগোষ্ঠী অনাহারে-অর্ধাহারে কোনো রকমে বেঁচে আছে। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এতটাই বেড়েছে সেটা আমাদের গ্যালাক্সি ছাড়িয়েও আরও ঊর্ধ্বগামী হয়েছে। আলুর কেজি ৭০-৮০ টাকা। অথচ সরকার নির্ধারিত মূল্য ছিল ৩৫ টাকা। পেঁয়াজের বর্তমান মূল্য কেজিপ্রতি ১৪০ টাকা। সাতদিন আগে ছিল ১০০ টাকা। আর সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছিল ৬৫ টাকা।'

'এভাবে প্রতিটি খাদ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধিতে পুরো জাতি হতভম্ব ও কিংকর্তব্যবিমূঢ়। মধ্যম ও নিম্ন আয়ের মানুষ তার উপার্জিত পয়সা দিয়ে খাবার কিনতে পারছে না। একবেলা খাবার জোগানোই অসম্ভব হয়ে গেছে। অসাধু পণ্য সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সরকার। কারণ এই সিন্ডিকেটবাজরা সবাই আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট,' যোগ করেন তিনি।

'জেলখানায় বিএনপি নেতাকর্মীদের দুর্দশা এখন চরমে উঠেছে' উল্লেখ করে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রিজভী বলেন, 'বিএনপির যে সব নেতা যারা একসময় মন্ত্রী-এমপি ছিলেন তাদেরকে ডিভিশন দেওয়া হচ্ছে না। কারাগারের ভেতরে বিএনপি নেতাদের আটকে রাখা হচ্ছে। এমনকি দিনের বেলাও তাদের সেলের ভেতর আটক রাখা হয়। ভয়ংকর হয়রানির মধ্যে বিএনপি নেতারা দিন কাটাচ্ছে।'

তিনি বলেন, 'মামলায় জামিন পাওয়ার পরও জেলগেট থেকে গ্রেপ্তার এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের ভাগ্যের লিখন হয়ে গেছে। শেখ হাসিনার জুলুমের মাত্রার কোনো শেষ নেই। গতকাল জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেপ্তারের পর আজকে ৫ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এটা সরাসরি মির্জা আব্বাসের ওপর সরকারি নিপীড়ন। কারাগারে অসুস্থ বিএনপি নেতাদের হাসপাতালের চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।'

Comments

The Daily Star  | English

An economic corridor that quietly fuels growth

At the turn of the millennium, travelling by road between Sylhet and Dhaka felt akin to a trek across rugged terrain. One would have to awkwardly traverse bumps along narrow and winding paths for upwards of 10 hours to make the trip either way.

11h ago