সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার পরিকল্পনা আ. লীগের

২৭ জুলাইয়ের সমাবেশ

প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কেবল শেখ হাসিনাই পারবেন দেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে—এমন প্রতিপাদ্য সামনে রেখে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রচার শুরু করার পরিকল্পনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

এই ক্যাম্পেইন আগামী নভেম্বর থেকে শুরু করে আগামী বছরের জানুয়ারিতে আসন্ন জাতীয় নির্বাচন পর্যন্ত অন্তত চলবে।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, ক্ষমতাসীন দলটি ২ কোটি ২০ লাখ সক্রিয় ফেসবুক ব্যবহারকারীর কাছে পৌঁছাতে এই পরিকল্পনা করছে এবং তাদের শীর্ষ নেতারা বিশ্বাস করেন যে এই কাজের জন্য তারা প্রস্তুত।

আওয়ামী লীগের গবেষণা শাখা সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশন (সিআরআই) প্রায় আট হাজার মানুষকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা পরিকল্পনা ও প্রযোজনার বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছে, যাদের বেশিরভাগই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের সদস্য।

নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে অনলাইন মাধ্যমে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

আওয়ামী লীগ সূত্র জানিয়েছে, এর পাশাপাশি তরুণদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জেলায় জেলায় জনপ্রিয় গায়ক ও ব্যান্ড দলকে নিয়ে কনসার্ট করবে আওয়ামী লীগ। সেখানে বড় পর্দায় দলের প্রচারণার ভিডিও দেখানো হবে এবং উপস্থিত সবার মাঝে লিফলেট বিতরণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো বুস্ট করা হবে। ব্যবহারকারীরা তার নিজ এলাকার ওপর তৈরি করা ভিডিওই মূলত দেখতে পাবেন। নির্দিষ্ট এলাকার উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড ও অন্যান্য পরিবর্তন তুলে ধরে ওই এলাকার বাসিন্দা বা ভোটারদের কাছে ভিডিও পৌঁছে দেওয়া হবে।

মে ও জুন মাসে সিআরআই ৬১টি জেলায় সমীক্ষা চালিয়ে দেখেছে, সাধারণ মানুষ মূলত বেকারত্ব ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এই সরকারের প্রতি হতাশ।

তারপরও এই সমীক্ষায় অংশ নেওয়া অধিকাংশ মানুষ শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি আস্থাশীল বলেও জানা গেছে ওই সমীক্ষা থেকে।

ওই সমীক্ষা অনুযায়ী, মানুষ বিশ্বাস করে যে সরকার করোনা টিকা দেওয়া, মেগা উন্নয়ন প্রকল্প, গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়া এবং পাকা রাস্তা নির্মাণে সফল হয়েছে।

এসব ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের প্রচারণায় শেখ হাসিনাকে সেরা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলাকারী এবং জনগণ যেসব সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে বা ভবিষ্যতে যেসব সমস্যার মুখোমুখি হতে পারে, সেগুলোর সমাধানে সেরা নেতা হিসেবে তুলে ধরা হবে।

এই প্রচারণায় এই প্রশ্নও তোলা হবে যে বিএনপি ক্ষমতায় এলে দেশের নেতৃত্ব কে দেবে। বিগত ১৫ বছর ক্ষমতাসীন থেকে আওয়ামী লীগ যে 'উন্নয়নের মাইলফলক ছুঁয়েছে', তার সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের 'দুঃশাসন'র তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হবে।

আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে কৃষিখাতে যে ভর্তুকি দেওয়া হয়েছে, তা তুলে ধরার পাশাপাশি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন 'সারের দাবিতে বিক্ষোভ করা কৃষকদের গুলি করা'র প্রতিবেদন দেখানো হবে পুরোনো সংবাদপত্র থেকে।

২০০৯ সালের আগে কাঁচা রাস্তার পাশাপাশি দেখানো হবে ২০০৯ সালের পরে আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে নির্মিত পাকা রাস্তার সাম্প্রতিক ছবি।

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক সেলিম মাহমুদ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'একদিকে আমাদের বিরুদ্ধে যেসব অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, তা নস্যাৎ করতে কাজ করছি এবং অপরদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের অর্জিত উন্নয়নকে তুলে ধরছি।'

আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি সফলভাবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ছড়িয়ে দিয়েছে বলে দলটির নেতারা বিশ্বাস করেন। এ কারণেই আওয়ামী লীগ 'গুজবের বিরুদ্ধে' প্রচারণা চালাবে।

ডিসেম্বরের শেষের দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের এই প্রচারণা চলবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের ওপর কেন্দ্র করে। দলটি তাদের প্রার্থীদের সঙ্গে প্রতিযোগী প্রার্থীদের তুলনা তুলে ধরবে।

সিআরআইয়ের সমীক্ষায় আরও দেখা গেছে, আইন প্রণেতা, শিক্ষক বা অন্য যেকোরো ব্লু টিক (ভ্যারিফায়েড) থাকা প্রোফাইলের পোস্ট গ্রামের মানুষ বেশি বিশ্বাস করে।

দেশের প্রতিটি উপজেলায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালাতে কমিটি গঠন করেছে আওয়ামী লীগ। ঢাকা থেকে তাদের কাছে কনটেন্ট পৌঁছে দেওয়া হবে।

যোগাযোগ করা হলে আওয়ামী লীগের ওয়েব টিমের সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ বলেন, 'আমরা ২০২০ সাল থেকে আমাদের প্রচারণাকারীদের প্রস্তুত করছি।'

Comments

The Daily Star  | English
narcotics cases pending despite deadline

4.8 lakh narcotics cases pending despite deadline

Judge shortage, lack of witnesses, inadequate court infrastructure blamed for delays

7h ago