‘পুলিশের ছররা গুলিতে’ দৃষ্টি হারাতে বসেছেন ফতুল্লার বিএনপি সভাপতি

ছবি: সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের সংঘর্ষে পুলিশের ছররা গুলিতে দৃষ্টিশক্তি হারাতে বসেছেন ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু। পুলিশের ছোড়া গুলিতে তার ২টি চোখই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অস্ত্রোপচারের পরও বাম চোখে কিছুই দেখছেন না তিনি। এই চোখে দৃষ্টি ফিরে পাবেন কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত নন চিকিৎসক। ডান চোখে এখনও একটি গুলি রয়েছে।

শহীদুলের বাম চোখের অস্ত্রোপচার করেছেন ডা. নিয়াজ আব্দুর রহমান।

তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তার সারামুখেই গুলি লেগেছে। বুলেট তার বাম চোখের এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে গিয়েছিল। ওই চোখের অপারেশন করে বুলেট বের করা হয়েছে। তার ওই চোখে দৃষ্টিশক্তি ফিরবে কি না সেটা বুঝতে অন্তত ৬ মাস অপেক্ষা করতে হবে। তবে দৃষ্টি ফেরার সম্ভাবনা খুবই কম।'

'আর ডান চোখে লেজার করা হয়েছে। চোখ তো খুবই সেন্সেটিভ অঙ্গ। তাই ওই চোখে ঠিক কোথায় গুলিটি আছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখার পর এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে', যোগ করেন এই চিকিৎসক।

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে আগামী সংসদ নির্বাচন আয়োজনের দাবিতে গত ২৯ জুলাই রাজধানীর প্রবেশমুখগুলোতে অবস্থান কর্মসূচির ঘোষণা দেয় বিএনপি। কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অবস্থান নেওয়ার পরিকল্পনা করে নারায়ণগঞ্জের বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর ১২টার দিকে শিমরাইল এলাকায় ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোড় দিয়ে মহাসড়কে উঠতে গেলে জেলা গোয়েন্দা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানা পুলিশের বাধার মুখে পড়ে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তর্ক-বিতর্কের এক পর্যায়ে পুলিশ লাঠিচার্জ করলে বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে। বিএনপি নেতা-কর্মীদের ঢিলের বিপরীতে শটগানের ছররা গুলি ছোড়ে পুলিশ।

এই ঘটনায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় দায়ের করা এক মামলায় পুলিশ উল্লেখ করেছে, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করতে মোট ৭১ রাউন্ড শটগানের গুলি ছুড়েছে পুলিশ।

পুলিশের লাঠিচার্জ ও গুলিতে বিএনপির অন্তত ১৫ জন নেতা আহত হন। বিএনপি নেতা শহীদুল ইসলাম জানান, ২ চোখসহ তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে পুলিশের ছোড়া শটগানের ১০টি ছররা গুলির আঘাত লেগেছে।

বিএনপির এই নেতা নাশকতার অভিযোগে পুলিশের করা এক মামলায় গত ১৬ মে জেলে যান। এক সপ্তাহ পর জামিনে বেরিয়ে আসেন তিনি।

দ্য ডেইলি স্টারকে শহীদুল বলেন, 'আমরা মহাসড়কে শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিতে গেলে ডিবি ও থানা পুলিশ আমাদের বাধা দিয়ে লাঠিচার্জ ও গুলি করে। পুলিশের শটগানের ছররা গুলি আমার ২ চোখে লাগে। ২ চোখেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। গুলি লাগার পর থেকেই বাম চোখে আমি কিছু দেখতে পাচ্ছি না। শরীরের আরও অন্তত ৮টি স্থানে গুলি লাগে। আমি ছাড়াও আমার অন্য রাজনৈতিক সহযোদ্ধারা ওই সময় গুলিবিদ্ধ হন।'

ঘটনার পরে শহীদুলকে রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বিশেষায়িত বেসরকারি চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় বলে জানান তার স্ত্রী আফরোজা ইসলাম।

তিনি বলেন, ছররা গুলিবিদ্ধ হওয়ার কারণে পুলিশি জটিলতা এড়াতে হাসপাতালে ভর্তি করাতেও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হন তারা। যদিও পরে নানা তদবিরে বেসরকারি ওই হাসপাতালে ভর্তি হন শহীদুল।

ডেইলি স্টারকে আফরোজা বলেন, 'পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত মঙ্গলবার ওই হাসপাতালে শহীদুলের বাম চোখে অস্ত্রোপচার হয়। বুধবার চোখের ব্যান্ডেজ খোলা হলেও ওই চোখে কিছু দেখতে পাচ্ছেন না শহীদুল। ডান চোখে আংশিক দৃষ্টিশক্তি থাকলেও ভেতরে এখনও একটি গুলি রয়েছে। ২ চোখেরই দৃষ্টিশক্তি হারানোর শঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।'

তিনি আরও বলেন, '২ ঘণ্টা অপারেশনের পর বাম চোখের ভেতর থেকে ২টি  গুলি বের করা গেলেও চোখে দেখছেন না। এই চোখে দৃষ্টি ফিরে পাবেন কি না সে নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না চিকিৎসকরা। আর ডান চোখে এখনও গুলি রয়ে গেছে, যেটি বেশি ভেতরে থাকায় বের করা যায়নি। এই চোখে আংশিক দৃষ্টিশক্তি থাকলেও গুলিটি বের করা না গেলে পুরোপুরি দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন বলে চিকিৎসকরা শঙ্কা করছেন। চোখের ভেতরে রেটিনাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এখনও ডান চোখে রক্ত জমাট বেঁধে আছে।'

নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ওইদিন আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। গুলি করার মতো পরিস্থিতিই সেখানে তৈরি হয়নি, পুলিশ অতি উৎসাহী হয়ে ছররা গুলি করেছে। সেই গুলিতে শহীদুল ইসলাম টিটু এখন দৃষ্টি হারানোর পথে।'

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) চাইলাউ মারমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পুলিশ এ বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নয়। আমরা খোঁজ নেবো।'

Comments

The Daily Star  | English

CEC Nasir Uddin calls on chief adviser

The meeting was held at the state guest house Jamuna

43m ago